সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত শিক্ষিকাকে(teacher) সাফাইকর্মী হিসেবে নিয়োগ করায় কেরল সরকারের শিক্ষা দপ্তরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করল সেরাজ্যের মানবাধিকার কমিশন (human rights commission)। আদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য চিহ্নিত বিদ্যালয়গুলি (school) বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেরল সরকার। কারণ একটাই রাজ্যে থাকবে না কোনও ভেদাভেদ। শিক্ষা হবে সবকিছুর ঊর্ধ্বে। সেখানে থাকবে না কোনও বাধা। জাতিভেদকে দূরে সরিয়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে সরকারি স্কুলে পাঠানোই হবে একমাত্র লক্ষ্য। আর সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে বিপাকে পড়েছেন কেরলের (kerala) আদিবাসী স্কুলের প্রায় ৩৪৪ জন শিক্ষক। রাতারাতি তাদের সাফাইকর্মীর পদে নিয়োগ করেছে সরকার। সরকারের এই সিদ্ধান্তে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ শিক্ষক-শিক্ষিকারা। এই সিদ্ধান্তে কি হতাশ নয় পড়ুয়ারাও! হতাশ তো বটেই। সেই সঙ্গে তারা বিস্মিতও বটে। হঠাৎই পড়ুয়াদের জানানো হয়, স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে। সেই ঘোষণা শুনে অনেক ছাত্র-ছাত্রীই বিশ্বাস করতে পারেননি। তারা ভেবেছিল মিথ্যে কথা বলা হচ্ছে। স্থানীয় অনেকেই ভেবেছিলেন দু’ সপ্তাহ বাদে আবার হয়তো স্কুলে ফিরে আসবেন শিক্ষিকারা। কিন্তু ঘটনা ছিল একেবারে অন্য।
কিছুদিন আগেই জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত শিক্ষিকা কেআর ঊষা কুমারীর দুর্দশার কথা নিয়ে ফলাও করে ছাপা হয়েছিল সংবাদপত্রে। গত ২৩ বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন একটি বহুস্তরীয় শিক্ষাকেন্দ্রে (মাল্টি গ্রেড লার্নিং সেন্টার)। কিন্তু গত ৩১ মার্চ সেটি বন্ধ হয়ে যায়। আর স্কুলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঊষা কুমারী হয়ে যান সাফাইকর্মী। তাঁর জায়গা হয় তিরুঅনন্তপুরমের(Thiruvananthapuram) একটি বিদ্যালয়ে। ঊষা কুমারীর ঘটনা গণমাধ্যমে জায়গা পাওয়ার পরই তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। নড়চড়ে বসে মানবাধিকার সংগঠনগুলি। ঘটনার তদন্ত চেয়ে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অ্যান্টনি ডমিনিক (Antony Dominic) নোটিশ পাঠিয়েছেন শিক্ষা দপ্তরে।
[আরও পড়ুন: Madhyamik Exam 2022: মাধ্যমিকের খাতায় কুকথা, উত্তরপত্র বাতিল করে পরীক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে পর্ষদ]
মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে আইনজীবী মুজিব রহমান (Mujeeb Rahman) জানিয়েছেন, ঊষা কুমারীকে সাফাইকর্মী(sweeper) পদে নিয়োগ করা লজ্জার। শুধুমাত্র রাজধানীতেই ঊষার মতো ১৪ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা রাতারাতি সাফাইকর্মী হয়ে গিয়েছেন। তাঁদের বেতন বাড়িয়ে ১৯ হাজার টাকা থেকে ২৩ হাজার টাকা করা হয়েছে। সান্ত্বনা হিসেবে তাঁদের বেতন বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
মানবাধিকার কমিশনের এহেন পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন স্বয়ং ঊষা। তিনি জানিয়েছেন, তাঁদের দাবি ছিল অন্তত শিক্ষাকর্মী হিসেবে তাদের নিয়োগ করা হোক। শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী সেই পদ তাঁদের কাছে সম্মানেরই হতো। ঊষা আরও জানিয়েছেন, তিনি দীর্ঘ ২৩ বছর শিক্ষকতা করেছেন। আর মাত্র ৬ বছর তাঁর চাকরি রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের পেনশন নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। প্রসঙ্গত এই বছরের মার্চ মাসে ২৭২ টি বহুস্তরীয় শিক্ষাকেন্দ্র বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেরল সরকার। আর তার ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ৩৪৪ জন শিক্ষকের ভবিষ্যৎ।