সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জীবন কখনও একভাবে চলে না। পরিবর্তনটাই যেন নিয়ম। কিন্তু কারও কারও জীবনে বদলটা এত দ্রুত ও অদ্ভুত ভাবে হয়, বিশ্বাস করতেই সময় চলে যায়। গুজরাটের (Gujarat) ইসমাইল সামা তেমনই একজন। ২০০৮ সালের এক সকালে যখন তিনি গরু চরাতে গিয়েছিলেন অন্য দিনের মতোই, ভাবতেও পারেননি বাড়ি ফিরতে ফিরতে লেগে যাবে তেরোটা বছর! পাকিস্তানের (Pakistan) জেলে প্রবল অত্যাচার সামলে অবশেষে দেশে ফিরে এসেছেন তিনি। তাঁর নিজের তো বটেই, বাকিদেরও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না এই প্রত্যাবর্তন।
কচ্ছ (Kutch) জেলার নানা দিনারা গ্রামের ৫০ কিলোমিটারের মধ্যেই ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত। ইসমাইলকে ফিরে পেয়ে সেখানে এখন উৎসবের আবহ। কিন্তু কী করে পাকিস্তানে চলে গেলেন আট সন্তানের বাবা ইসমাইল? ২০০৮-এর আগস্টে রোজকার মতোই গরু চরাতে গিয়েছিলেন তিনি। সেকথা মনে করতে গিয়ে এখনও যেন কেঁপে উঠছেন ইসমাইল, ”একটা স্করপিয়ন আমাকে ধাক্কা মারে। চোট পেয়ে সবদিক গুলিয়ে যায় আমার। দিক গুলিয়ে ফেলে হাঁটতে থাকি উদভ্রান্তের মতো। শেষ পর্যন্ত পরের দিন সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ পাক সেনা আমাকে ঘিরে ধরে। জানায় আমি তাদের দেশে ঢুকে পড়েছি। ওরা আমাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল। সুস্থ হওয়ার পরে আমাকে আইএসআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়।”
[আরও পড়ুন: কৃষক আন্দোলনে যোগ না দিলে মোটা টাকা জরিমানা! পাঞ্জাবের গ্রামে জারি ফতোয়া]
পরের অভিজ্ঞতা আরও ভয়াবহ। তাঁর কথায়, ”আমাকে ভারতের চর মনে করে প্রচণ্ড অত্যাচার করেছিল আইএসআই। সেই সময় মনে হয়েছিল আর বুঝি কোনওদিন বাড়িতে ফেরা হবে না। আতঙ্কে পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম। পাকিস্তানে আটকে থাকা বহু ভারতীয়রই এমন অবস্থা। কেবল আল্লার কাছে প্রার্থনা করতাম। অবশেষে উনি আমার প্রার্থনার উত্তর দিয়েছেন। বাড়িতে ফিরতে পেরে আমার যেন পুনর্জন্ম হল।” অকথ্য অত্যাচার করে আইএসআই ইসমাইলকে দিয়ে স্বীকার করিয়ে নিতে চেয়েছিল তিনি ভারতের চর। কিন্তু সব মুখ বুজে সহ্য করেও ইসমাইল হার মানেননি। কিন্তু তবু তাঁকে গুপ্তচর হিসেবেই চিহ্নিত করে পাকিস্তানের আদালত। ২০১৭’র আগে পর্যন্ত অবশ্য ইসমাইলের বাড়ির লোক জানতেই পারেননি তিনি পাকিস্তানে বন্দি হয়ে রয়েছেন। তার আগের বছরই, ২০১৬ সালে পাক জেলে তাঁর সাজার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও ফেরা হয়নি। আটকে রাখা হয়েছিল জেলেই।
[আরও পড়ুন: ৫০ বছর কাটিয়েছেন গুহায়, রাম মন্দির নির্মাণে সেই সন্ন্যাসীই দিলেন এক কোটি টাকা]
অবশেষে অপেক্ষার অবসান। সীমান্তরেখা থেকে ইসমাইলকে গাড়িতে করে নিয়ে আসেন তাঁর সৎ ভাই। পুরনো পাড়ায় ফেরার পরে তাঁকে দেখতে মানুষের ঢল নামে। স্থানীয় মসজিদে তাঁকে বসিয়ে ঘিরে ধরে গ্রামের মানুষেরা। কিন্তু ইসমাইল সবচেয়ে বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছেন নিজের ছেলেমেয়েদের দেখে। চল্লিশ পেরনোর আগে বন্দি হয়েছিলেন। এখন পঞ্চাশ পেরিয়ে ফিরে আসা। মাঝের ক’বছরে বড় হয়ে গিয়েছে সন্তানেরা। বাবাকে ভোলেনি তারাও। সেই পুনর্মিলনের দৃশ্য দেখে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি গ্রামের বাকিরাও।