shono
Advertisement
Lok Sabha 2024

বাড়া ভোটে ছাই! অতি হিন্দুত্বে গাজন নষ্ট বিজেপির?

ফলাফল বলছে, ২০১৯ সালের তুলনায় তো বটেই ২০১৪ সালের থেকেও কম আসন পাচ্ছে এনডিএ। আর বিজেপি এককভাবে সংখ্যাগগরিষ্ঠতা থেকে অনেকটাই পিছনে বিজেপি।
Published By: Subhajit MandalPosted: 05:42 PM Jun 04, 2024Updated: 05:43 PM Jun 04, 2024

অনুরাগ রায়: অতি দর্পে হতা লঙ্কা...! লোকসভা নির্বাচনের মাস তিনেক আগে অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন। রামলালার পায়ের সামনে লুটিয়ে পড়লেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সে তিনি পড়তেই পারেন! নিজের ধর্মীয় বিশ্বাসে আস্থা রাখা প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার, প্রধানমন্ত্রীরও। কিন্তু সেই ছবিটা বড্ড বেশি সাংকেতিক। প্রধানমন্ত্রী যেমন নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন রামচন্দ্রের চরণে, তেমনি সঁপে দিয়েছিলেন নিজের ভোটভাগ্যকেও। বস্তুত, গোটা ভোটপর্বে হিন্দুত্বকেই নিজের পয়লা নম্বর এজেন্ডা বানিয়েছিলেন মোদি।

Advertisement

আসলে গত দুই নির্বাচনে বিপুল হাওয়া ছিল বিজেপির পক্ষে। ২০১৪ সালে 'দুর্নীতিগ্রস্ত' কংগ্রেস সরকারের প্রতি মানুষের ক্ষোভ, এবং আচ্ছেদিনের 'স্বপ্ন' পাথেয় করে ভোটবাক্সে ঝড় তুলেছিলেন মোদি। ২০১৯-এ ছিল পুলওয়ামা-বালাকোট ঝড়। এবারে ঝড় তোলার মতো হাতেগরম ইস্যু ছিল না। অতএব, নরেন্দ্র মোদি তড়িঘড়ি রামমন্দির (Ram Mandir) উদ্বোধন করে দিলেন। দেশের চার শীর্ষ শঙ্করাচার্যের আপত্তিকেও তোয়াক্কা করলেন না। এ তো গেল মন্দির উদ্বোধন। ভোট প্রচারে নেমেও মোদি 'আচ্ছে দিন', 'উজ্বলা যোজনা', 'বিনামূল্যে রেশন' প্রকল্পের মতো সরকারের জনকল্যাণমুখী প্রকল্পের প্রচারকে পিছনের সারিতে ফেলে পুরোপুরি হিন্দু হৃদয় সম্রাট রূপে অবতীর্ণ হলেন।

[আরও পড়ুন: রামমন্দির বা পিওকে দখলের ‘গ্যারান্টি’, তবু কেন অস্তমিত মোদি-সূর্য?

প্রথম দফার ভোটের পরই পুরোপুরি হিন্দুত্ব, মেরুকরণের প্রচার শুরু করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। কখনও তিনি বললেন, কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে হিন্দু মা বোনেদের মঙ্গলসূত্র কেড়ে নেওয়া হবে। কখনও তিনি বললেন, 'কংগ্রেস এলে হিন্দুদের সম্পত্তি ভাগ করে দেবে যাঁদের বেশি সন্তান তাঁদের মধ্যে।' কখনও তিনি বললেন, 'কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে ভেঙে দেওয়া হবে রামমন্দির!' শেষবেলায় এসে যখন বুঝলেন এত কিছুতেও বিশেষ লাভ হচ্ছে না, তখন সোজা নিজেকে ঈশ্বরের দূত হিসাবে প্রচার করা শুরু করলেন।

প্রশ্ন হল, এত কিছু করে লাভ হল কী! ভোটের ফল অন্তত সে কথা বলছে না। হিসাবে বলছে ২০১৯ সালের তুলনায় তো বটেই ২০১৪ সালের থেকেও কম আসন পাচ্ছে এনডিএ (NDA)। আর বিজেপি এককভাবে সংখ্যাগগরিষ্ঠতা থেকে অনেকটাই পিছনে বিজেপি। যেসব রাজ্যে হিন্দুত্বের হাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ভরসা করছিল সেই উত্তরপ্রদেশ, বাংলা, রাজস্থানে গেরুয়া শিবিরের একপ্রকার বিপর্যয় হয়েছে। ক্ষমতায় ফিরলেও ৪০০ পারের স্লোগান দেওয়া বিজেপির পক্ষে এই ফলাফল কিঞ্চিত বিপর্যয়ই বলতে হবে।

[আরও পড়ুন: ভাঙল না মিথ, গণনার মাঝেই হার স্বীকার বিজেপি প্রার্থীর, রায়বরেলিতে জয় গান্ধীদের তৃতীয় প্রজন্মের]

কিন্তু কেন এই বিপর্যয়?

এক, বিজেপি নেতাদের ব্যাখ্যা, ২০১৪ এবং ২০১৯ সালে উন্নয়নের নামে মুসলিমদের একাংশের ভোট পেয়েছিলেন মোদি। কিন্তু এবারে প্রচারে অতিমাত্রায় মুসলিম বিদ্বেষের ফলে মুসলিমরা একচেটিয়াভাবে ভোট দিয়েছেন ইন্ডিয়া জোটকে। কোনওরকম বিভাজন হয়নি। দুই, প্রধানমন্ত্রীর মুখে লাগাতার সাম্প্রদায়িক কথাবার্তা ভালোভাবে নেয়নি দেশের যুবসমাজ। আসলে ভারতীয় সংস্কৃতির মূলে ধর্মনিরপেক্ষতা গাঁথা রয়েছে। সেটাকে অতিমাত্রায় আঘাত করায় সুশীল সমাজে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। তিন, অতিমাত্রায় হিন্দুত্বের প্রচারে সরকারের বহু ভালো কাজ আড়ালে চলে যায়। জি-২০'র সফল আয়োজন, ৮০ কোটি মানুষকে রেশন দেওয়া, উজ্জ্বলা যোজনা, কোভিডের সময় সরাসরি টাকা দেওয়া, দেশবাসীকে বিনামূল্যে টিকা, এসব সেভাবে প্রচারেই আসেনি। এসবের চেয়েও বড় যে সমস্যা, রামমন্দির এবং অতিমাত্রার প্রচারে বিজেপি কর্মীরা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়েন। ধরেই নিয়েছিলেন নির্বাচন জিতিয়ে দেবেন 'রামলাল্লা'। রামলাল্লা এবং হিন্দুত্বের এই অতিমাত্রায় প্রচারই লোকসভায় বিজেপির মিনি বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াল।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • আসলে গত দুই নির্বাচনে বিপুল হাওয়া ছিল বিজেপির পক্ষে।
  • ২০১৪ সালে 'দুর্নীতিগ্রস্ত' কংগ্রেস সরকারের প্রতি মানুষের ক্ষোভ, এবং আচ্ছেদিনের 'স্বপ্ন' পাথেয় করে ভোটবাক্সে ঝড় তুলেছিলেন মোদি।
  • ২০১৯-এ ছিল পুলওয়ামা-বালাকোট ঝড়।
Advertisement