হেমন্ত মৈথিল, মহাকুম্ভ নগর: মেলা শুরুর এক সপ্তাহ আগেই সোশাল মিডিয়ায় মহাকুম্ভ ২০২৫-এর জয়জয়কার। ফেসবুক থেকে হোয়াটসঅ্য়াপ, ইনস্টাগ্রাম থেকে এক্স হ্যান্ডেল... সবখানে চর্চায় হিন্দু সন্ত ও ভক্তদের সবচেয়ে বড় মিলন উৎসব। শিশু থেকে বৃদ্ধ, সকলের মাঝেই বর্ষবরণের ট্রেন্ড কুম্ভমেলা।
সাধারণ মানুষ তো বটেই, সেশাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সাররাও সামাজিকমাধ্যমে মহাকুম্ভ সংক্রান্ত রিলস ও ভিডিও শেয়ার করছেন। মেলা যত এগিয়ে আসছে, তত দাবানলের গতিতে ভাইরাল হচ্ছে ওই ভিডিওগুলি।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ২০২৫ সালের মহাকুম্ভকে ঐশ্বরিক ও মহত্তম করার অঙ্গীকার করেছেন। সেই মতোই ঝড়ের গতিতে কাজ চলছে প্রয়াগরাজে ত্রিবেণীতে। ইতিমধ্যে সাজিয়ে তোলা হয়েছে ঘাট এবং রাস্তাগুলি। অসংখ্য অস্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হয়েছে পুণ্যার্থীদের সুবিধার জন্য। রাতও হয়ে উঠছে ঝলমলে 'দিন'। মেলার মাঠ আলোকিত ৬৭ হাজার বিদ্যুৎবাতির সৌজন্যে।
সেজে ওঠা মেলার মাঠের সেই ছবি ও ভিডিও তুলে হোয়াটস্যাপ, ফেসবুক স্ট্যাটাস দিচ্ছে সাধারণ মানুষ থেকে সোশাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সাররাও। এক্স হ্যান্ডেল, ইনস্টাগ্রামে রিলস এবং ভিডিও পোস্ট করছেন তাঁরা। একজনের ভিডিও দেখে অন্যরাও পৌঁছে যাচ্ছেন মেলার মাঠে। এর পর তারাও রিলস, ভিডিও ইত্যাদি তৈরি করছেন। সব মিলিয়ে পূর্ণকুম্ভ যত এগিয়ে আসছে, তত সোশাল মিডিয়ার দখল নিচ্ছে মহাকুম্ভ।
অনলাইন অর্থ বিনিময় সংস্থাগুলিও মহাকুম্ভের প্রচারে নেমেছে। পেটিমের নতুন বারকোড স্ক্যানার দিচ্ছে ভেন্ডারদের। যেখানে লেখা হয়েছে 'ভব্য মহাকুম্ভ'। বারকোড স্ক্যানারের নকশাটি তৈরি করা হয়েছে সাধু, মন্দির, পুণ্যস্নান, তাঁবু, সঙ্গমস্থল, গঙ্গায় ভাসমান প্রদীপ, অস্থায়ী সেতু, নৌকা, দই-জিলিপির মতো ঐতিহ্যবাহী খাবার এবং তীর্থযাত্রীদের সেলফি তোলার মতো ছবি দিয়ে।
এদিকে মহাকুম্ভের নিরাপত্তায় বিন্দুমাত্র ফাঁক রাখছেন না উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সরকার। নাশকতা রুখতে মোতায়েন করা হচ্ছে এনএসজি কমান্ডো বাহিনী এবং স্নাইপার প্লাটুন। কানাডাবাসী খলিস্তানি জঙ্গিনেতা গুরুপতবন্ত সিং পান্নুন মহাকুম্ভে হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছে। বেশ কয়েকটি ইসলামি জঙ্গি সংগঠনেরও নিশানায় রয়েছে প্রয়াগরাজের পূর্ণকুম্ভ।
এই পরিস্থিতিতে শাহি স্নানের স্থান, মন্দির এবং পার্কিং লট’গুলির নজরদারিতে ২৬টি নাশকতা দমন টিম মোতায়েন করা হচ্ছে। মহাকুম্ভ নগর এবং পার্শ্ববর্তী জেলাগুলিতেও তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে। মেলার নিরাপত্তায় কাজ করছে উত্তরাখণ্ড পুলিশের দু’টি বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইউনিট, উত্তরপ্রদেশ পুলিশের কমান্ডো বাহিনী এবং কেন্দ্রীয় আধাসেনার স্পেশাল ফোর্স। এছাড়া আকাশপথে নজরদারি চালাবে ড্রোন। থাকছে ‘বুলেটপ্রুফ আউটপোস্ট’। সাধুর ছদ্মবেশে জঙ্গিরা হামলা চালাতে পারে, এই আশঙ্কায় সমস্ত আখড়া-সন্ন্যাসীদের আধার কার্ড সঙ্গে রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়াও সঙ্গমস্থলের বিস্তীর্ণ জলরাশির পাহারাদারিতে নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জলপুলিশের বিশেষ বাহিনীকে।
প্রয়াগরাজে গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতীর সঙ্গমস্থলে ৪০ কোটি পুণ্যার্থীর জন্য গড়ে তোলা হচ্ছে এক অস্থায়ী নগরী। ১৫ বর্গমাইল এলাকায় গড়ে তোলা সেই অস্থায়ী নগরীর আয়তন নিউইয়র্ক নগরের ম্যানহাটান বরো এলাকার দুই–তৃতীয়াংশ। ১৩ জানুয়ারি থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে ভারতে হিন্দু পুণ্যার্থীদের সবচেয়ে বড় সমাবেশ।