সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কর্নেল সোফিয়া কুরেশিকে (Colonel Sofiya Qureshi) নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্যের মামলায় গতকালই সিট গঠন করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। মঙ্গলবার মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রী বিজয় শাহের কুমন্তব্যের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করল মধ্যপ্রদেশ পুলিশ। তিন সদস্যের সিটে রয়েছেন ইনস্পেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ প্রমোদ বর্মা, ডেপুটি ইনস্পেক্টর জেনারেল কল্যাণ চক্রবর্তী এবং পুলিশ সুপার বাহিনী সিং। আট দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে হবে শীর্ষ আদালতের দরবারে।
সোমবার এই মামলার শুনানিতে বিজয়ের ক্ষমাপ্রার্থনা মঞ্জুর করেনি সুপ্রিম কোর্ট। উলটে ডিভিশন বেঞ্চের মন্তব্য করে, “আপনি কুমিরের কান্না বন্ধ করুন। কর্নেল কুরেশিকে নিয়ে আপনার মন্তব্য লজ্জাজনক।” বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং এন কোটিশ্বর সিংয়ের ডিভিশন বেঞ্চের মন্তব্য, “আপনার ক্ষমা চাওয়ার দরকার নেই। আপনি একজন জনপ্রতিনিধি, অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। আপনার মুখ থেকে এই ধরনের মন্তব্য অত্যন্ত নিন্দনীয়।” এরপরই বিজয়ের বিরুদ্ধে ইন্দোরের থানায় যে এফআইআর দায়ের হয়েছে, তার তদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি সিট গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। জানানো হয়, সিটে ওই তিন সদস্যের মধ্যে একজন মহিলা আইপিএস আধিকারিককে রাখতে হবে। এই নির্দেশ মতোই মঙ্গলবার সিট গঠন করল মধ্যপ্রদেশ পুলিশ।
পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার জবাবে গত ৭ মে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে অবস্থিত সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর গুঁড়িয়ে দিয়েছিল ভারতীয় সেনা। নির্ভুল ও নিখুঁত সেই হামলার পর সাংবাদিক বৈঠক করে গোটা দেশকে অপারেশন সিঁদুরের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছিলেন কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও বায়ুসেনার উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং। অপারেশ সিঁদুরের বিফ্রিংয়ে দুই মহিলা আধিকারিককে সামনে এনে দেশের নারীশক্তিকে তুলে ধরার পাশাপাশি দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দেওয়া হয়েছিল গোটা বিশ্বকে। এই ঘটনায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি কর্নেল কুরেশিকে নিয়ে ‘কুরুচিকর’ মন্তব্য করতে দেখা যায় মধ্যপ্রদেশের বিজেপি মন্ত্রী বিজয় শাহকে।
বিজয় বলেন, “ওরা আমাদের হিন্দু ভাইদের পোশাক খুলে ধর্মীয় পরিচয় যাচাই করে হত্যা করেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদিজি ওদের (জঙ্গিদের) বোনকে ওদের বাড়িতে হামলার জন্য পাঠিয়েছেন। ওরা (জঙ্গিরা) আমাদের বোনকে বিধবা করেছে, তাই মোদিজি ওদের সম্প্রদায়ের বোনকেই ওদের পোশাক খুলে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য পাঠিয়েছেন।” কর্নেল কুরেশির নাম না নিলেও মন্তব্য যে তাঁকে উদ্দেশ্য করেই তা বুঝতে বাকি ছিল না কারও। তবে বিতর্ক তুঙ্গে উঠতেই বিজয় দাবি করেন, তাঁর মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তিনি কর্নেল কুরেশির কাছে ১০ বার ক্ষমা চাইতেও প্রস্তুত।
কিন্তু এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই দেশজুড়ে নিন্দার মুখে পড়েন বিজয়। মধ্যপ্রদেশ রাজ্য বিজেপির তরফেও রীতিমতো তিরস্কার করা হয় বিজয়কে। অবিলম্বে তাঁকে মন্ত্রীপদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি তুলেছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে।
