সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বেজিংয়ের ‘দাদাগিরি’ নিয়ে চিন্তিত নৌসেনা প্রধান। সতর্ক করে দিলেন শিলিগুড়ি করিডর নিয়েও। বুধবার চিফ অফ ন্যাভাল স্টাফ অ্যাডমিরাল সুনীল লাম্বা জানান, চিন ব্যাপক উন্নতি করছে। অর্থনৈতিক ও সামরিক- উভয় বিভাগেই বৈপ্লবিক উন্নয়ন করেছে বেজিং। ফলে একধাক্কায় লালফৌজের মনোবলও বেড়ে গিয়েছে অনেকটাই। ‘লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল’ বা LAC-তে চিনা সেনার আগ্রাসন বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। গতবছর ডোকলামে ড্রাগনের দাপাদাপি তারই প্রমাণ। আর চিনা আগ্রাসনই ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ফাঁকফোকরগুলি আরও বেশি প্রকাশ্যে এনে ফেলছে, ইঙ্গিত নৌসেনা প্রধানের।
[লালফৌজের জন্য ডোকলামে চক্রব্যূহ তৈরি করেছিলেন সেনাপ্রধান রাওয়াত!]
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি চিনের বৈপ্লবিক উন্নয়ন আমাদের আরও বেশি করে শিলিগুড়ি করিডরের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে বাধ্য করেছে।’ কী এই শিলিগুড়ি করিডর? কেন এই করিডর নিয়ে চিন্তিত ভারত? কেনই বা একে ‘চিকেনস নেক’ বলে?
মুরগির ঘাড় বেশ দুর্বল। সেটা মটকে দেওয়া গেলেই ধড় থেকে মুণ্ড আলাদা হয়ে যেতে পারে। শিলিগুড়ি করিডর হল এমনই এক ‘চিকেনস নেক’। পূর্বে নেপাল, পশ্চিমে বাংলাদেশ। মাঝখানে খুব সঙ্কীর্ণ একটি অংশ ভারতের নিয়ন্ত্রণে। এতই সঙ্কীর্ণ অংশ সেটি যে একটু কল্পনার চোখে দেখলে ম্যাপে তাকে মুরগির ঘাড়ের মতো দেখায়। উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে দেশের বাকি অংশের যোগসূত্র হিসেবে অবস্থান করছে ওই এলাকা। শিলিগুড়ি, মাটিগাড়া, নকশালবাড়ি, ফাঁসিদেওয়া এবং চোপড়া ও ইসলামপুরের কিছুটা অংশ এই চিকেন’স নেকের মধ্যে পড়ছে। এই অংশকে শিলিগুড়ি করিডরও বলা হয়। কারণ উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে দেশের বাকি অংশের সড়ক ও রেল যোগাযোগের জন্য একমাত্র ভরসা ওই সঙ্কীর্ণ ভূখণ্ড।
[ভারতের কাছে মাথা নত ড্রাগনের, ডোকলাম নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত লালফৌজ]
ভারতকে চাপে ফেলতে এ বার মুরগির ঘাড়কেই নিশানা করেছে চিন। চিকেন’স নেক বা শিলিগুড়ি করিডর তাই আর নিশ্চিন্ত নেই ভারত। নৌসেনা প্রধান আজ মনে করিয়ে দেন, যে ওয়েস্টার্ন থিয়েটার কমান্ডে চিনা বায়ুসেনার শক্তি বাড়িয়েই চলেছে। ওই এলাকা থেকেই LAC-র নিরাপত্তা পরিস্থিতির উপর নজর রাখে চিন। ভারতের পক্ষ থেকে যে কোনও পদক্ষেপকে রুখে দিতে ওই এলাকায় বিপুল লালফৌজ মোতায়েন রেখেছে বেজিং। ভারতীয় গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, ওই এলাকায় হালকা যুদ্ধবিমান জে-১০ ফাইটার জেট, জে-১১ সিঙ্গল সিটেড টুইন ইঞ্জিন মাল্টি-রোল এয়ারক্রাফট উড়িয়েছে চিন। চিনা নতুন বছর ও বসন্তোৎসব উপলক্ষে চালানো হয়েছে ছোটখাটো মহড়াও। পিএলএ-র ওয়েস্টার্ন থিয়েটার কমান্ডে এই প্রথমবার সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত স্টেলথ ফাইটার জে-২০ ওড়ানো হল। ভারতের সঙ্গে সীমান্তবর্তী এই এলাকায় পাহাড়ি পরিবেশে যুদ্ধের জন্য জোরকদমে প্রস্তুতি নিচ্ছে চিন। ভারত, চিনের মধ্যে প্রায় ৩৪৮৮ কিলোমিটার বিস্তৃত এই LAC। একে অত্যাধিক ঠান্ডা, তার উপর যখন তখন তুষার ধসের ভয় রয়েছেই। এই এলাকাতেই গতবছর প্রায় ৭৩ দিন ধরে ভারত ও চিনের সেনা একে অপরের চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে ছিল। সেই বিপদ আপাতত কাটলেও চিন যে ফের বড়সড় কোনও ষড়যন্ত্রের প্রস্তুতি নিচ্ছে, আজ সে বিষয়েও আগাম সতর্ক করে দিয়েছেন নৌসেনা প্রধান।
[পাহাড়ের অশান্তিতে নাগাড়ে অর্থ জোগান চিনের, কেন্দ্রের নজরে চামলিং]
তবে ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিন ৩.৫ জেনারেশনের যুদ্ধবিমান তৈরির কাজ শেষ করে ফেললেও ভারতও পিছিয়ে নেই। ফ্রান্সের কাছ থেকে সম্প্রতি রাফালে কেনার প্রাথমিক প্রক্রিয়া শেষ করেছে। সেগুলি মূলত থার্ড জেনারেশনের যুদ্ধবিমান হলেও আকাশপথে যুদ্ধে বেজিংকে টক্কর দিতে সক্ষম। ভারতীয় সেনাপ্রধান চিফ অফ আর্মি স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াত আজ বলেন, ‘এখনই চিন্তার কিছু নেই। ডোকলামে আপাতত সব ঠিক রয়েছে।’ তবে চুম্বি উপত্যকা থেকে ভারতের চিকেনস নেক-এ আঘাত আসতে পারে, সে কথা ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকও জানে। চুম্বি উপত্যকার অবস্থান এমন একটি জায়গায়, যেখান থেকে চিকেন’স নেক-এ পৌঁছনো বেশ সহজ। সম্প্রতি দার্জিলিংয়ে অশান্তির পিছনেও কিন্তু চিনের হাত দেখতে পায় কেন্দ্র। গুরুংয়ের বিরুদ্ধে তদন্ত চালাতে গিয়ে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের হাতে আসে ভয়াবহ তথ্য। যেনতেন প্রকারে বাংলার ‘চিকেন নেক’ ছিঁড়ে নিতে চায় চিন। এই উদ্দেশ্যেই দার্জিলিং ও সংলগ্ন পাহাড়কে উত্তপ্ত করে তোলা হয়েছিল, যে কাজে অতি সন্তর্পণে কাজে লাগানো হয়েছিল সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী পবন চামলিংকেও। ইন্টেলিজেন্স রিপোর্ট কিন্তু এমনটাই জানায়। এই মুহূর্তে পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত হলেও নেপাল-ভুটান সীমান্তবর্তী ওই শিলিগুড়ি করিডর থেকে চিন এখনও নজর ঘোরায়নি। সুযোগের অপেক্ষায় বসে আছে। গোয়েন্দা রিপোর্ট সংক্রান্ত ফাইলটি এখন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে। উদ্বিগ্ন দিল্লি গোটা অঞ্চলে সতর্ক নজর রাখছে।
[ডোকলামের পর ভারতের চালে শ্রীলঙ্কা হাতছাড়া চিনের!]
The post চিনা আগ্রাসন নিয়ে সতর্ক নৌসেনা প্রধান, উদ্বিগ্ন শিলিগুড়ি করিডর নিয়েও appeared first on Sangbad Pratidin.