কৃষ্ণকুমার দাস, পুরী: জীবনে বহুবার বিমান যাত্রা করেছি, দেশ-বিদেশে নানা যাত্রীদের সঙ্গে আকাশে উড়েছি। এই প্রথম কলকাতা থেকে ভুবনেশ্বর বিমান টেক অফের সময় অজস্র হাততালির সঙ্গে উল্লাসে কানের পর্দা ফাটার উপক্রম হল। শব্দের উৎস ৩১টি অনাথ এইচআইভি পজিটিভ শিশু-কিশোর এবং তাদের সহযাত্রী কলকাতার বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টরা। সৌজন্যে, জাতীয় শিশুদিবসে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘অফার’ এর আয়োজনে ওই সব অনাথ শিশুদের আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্নপূরণ।
ওড়িশা (Odisha) শিশু সুরক্ষা ও অধিকার কমিশনের চেয়ার পার্সন মীনাক্ষী কারাত পুরীর সমুদ্র সৈকতে এই সব শিশুদের সঙ্গে অভিনব কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। অনুষ্ঠানের অভিনবত্ব স্বীকার করে মীনাক্ষী বলেন, “দেশে আজ শিশু দিবসের (Children’s Day) নানা অনুষ্ঠান হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু এএইচআইভি পজেটিভ শিশুদের বিমানে উড়ে এসে নীলাচলে আনন্দে ভেসে যাওয়া সেরার সেরা কর্মসূচি। এমন উদ্যোগ আমাদের কাছে শিক্ষণীয়।”
[আরও পড়ুন: ‘যোনিচ্ছেদ প্রথা বন্ধ করুন’, ভারতকে মানবাধিকার তোপ কোস্টারিকার]
দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোবিন্দপুরের আনন্দঘরের পিতৃমাতৃহীন অনাথ শিশুরা মাঠে খেলার ফাঁকে বিমান উড়ে যেতে দেখে প্রশ্ন করত, আমরা কি কোনও দিন পাখিদের মতো ভাসতে পারব? কথাগুলো একদিন কানে আসতে আনন্দঘরের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক কল্লোল ঘোষের মাথায় জেদ চাপে। ঠিক করেন, অনাথদের আকাশে ওড়ার স্বপ্নপূরণ করবেনই।
সোমবার ওঁদের নিয়ে যাত্রা শুরুর মুহূর্তে দমদম বিমানবন্দরে বিধাননগর পুলিশের তরফে উপহার তুলে দেন ডেপুটি কমিশনার। পতাকা নেড়ে বিমানে উঠার সংকেত দেন পশ্চিমবঙ্গ শিশু সুরক্ষা ও অধিকার কমিশনের প্রধান উপদেষ্টা অনন্যা চক্রবর্তী। ব্যতিক্রমী বিমানযাত্রায় সফরসঙ্গী হতে পেরে আবেগাপ্লুত ছিলেন কলকাতা পুরসভার দুই কাউন্সিলর অয়ন চক্রবর্তী ও মৌসুমী দাস।
বিমানে উঠেই নিজেদের উত্তেজনা চেপে রাখতে না পেরে শিশুদের আসনের কাছে গিয়ে সেলফি তুলছিলেন সংগীতশিল্পী সিধু-পটা থেকে শুরু করে প্রাক্তন ক্রিকেটার সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ফুটবলার আলভিতো, মেহতাব হোসেন। তবে বিমান ওঠার সময় আমাদের সবার যেমন অভিজ্ঞতা হয়েছিল, তেমনই একই উচ্ছাসের গর্জন ভেসে এল। গলা মেলালেন অন্য সহযাত্রীরাও। বিকেলে রাজভবন গেটের উল্টোদিকে ব্লু স্কাই বিচের দখল নেয় কলকাতা থেকে আসা ৩১ শিশু।