সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শিল্পপতি বন্ধুদের পকেট ভরাতে উত্তর ও পশ্চিম ভারতের ফুসফুস প্রাচীন আরাবল্লী পর্বতমালা ধ্বংসের ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করেছে নরেন্দ্র মোদি সরকার! তুমুল বিতর্কের মাঝে এবার স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করল সুপ্রিম কোর্ট। সোমবার প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্তের বেঞ্চে মামলাটির শুনানি হবে বলে জানা গিয়েছে।
সম্প্রতি শীর্ষ আদালতের একটি রায়ে বলা হয়, আরাবল্লী পাহাড়ের ১০০ মিটার বা তার বেশি উচ্চতার ভূমি ও আশপাশের ঢাল, সম্পূর্ণ সুরক্ষিত থাকবে। এগুলিকেই আরাবল্লী পাহাড়শ্রেণির অংশ হিসাবে গণ্য করা হবে যার অর্থ এটাই যে ১০০ মিটারের কম পাহাড়গুলির সংরক্ষণের আওতায় থাকবে না। অথচ আরাবল্লীর ৯০ শতাংশ পাহাড়ের উচ্চতা ১০০ মিটারের নিচে। তবে এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো, আরাবল্লীর এই ‘সংজ্ঞা নির্ধারণ’ করেছিল কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রক। তাতেই শিলমোহর দেয় সর্বোচ্চ আদালত।
সুপ্রিম কোর্টের সেই রায়ের পরই বিতর্ক তৈরি হয়। ফুঁসে ওঠে হরিয়ানা, রাজস্থান, গুজরাটের সাধারণ বাসিন্দা-সহ পরিবেশপ্রেমীরা। তাঁরা অভিযোগ করেন, কয়লা ও নির্মাণ শিল্পে ব্যবহৃত পাথরের অভূত ভাণ্ডার আরাবল্লীতে খননকার্য চালানোর আইনি পথ সুগম করছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। তাঁদের আরও অভিযোগ, এতদিন যে ভূখণ্ড আরাবল্লী পাহাড়শ্রেণি গণ্য হয়ে এসেছে, তা আর সংরক্ষণের আওতায় থাকবে না। ৯০ শতাংশই সুরক্ষাহীন হয়ে পড়বে। ফলে রাজস্থান, গুজরাট ও দিল্লি পর্যন্ত বিস্তৃত আরাবল্লী পর্বতমালায় অবাধে চলবে খননকাজ। এই পরিস্থিতিতে চাপের মুখে পড়ে গত বুধবার বড় নির্দেশ দেয় কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রক সংশ্লিষ্ট সমস্ত রাজ্যকে আরাবল্লীতে নতুন করে খননের ইজারা প্রদানের উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপের নির্দেশ দেয়।
প্রসঙ্গত, ভারতের ভূ-প্রাকৃতিক দিক থেকে আরাবল্লীর গুরুত্ব অপরিসীম। হরিয়ানা থেকে শুরু করে রাজস্থান, গুজরাট ও দিল্লি পর্যন্ত বিস্তৃত আরাবল্লী পর্বতমালা জীববৈচিত্র তো বটেই এইসব অঞ্চলের জলের প্রধান উৎস। এখান থেকেই উৎপত্তি চম্বল, সবরমতী ও লুনি মতো নদী। তা ক্ষতিগ্রস্ত হলে পাহাড়ের বাস্তুতন্ত্রে গুরুতর প্রভাব পড়বে। রাজস্থানের থর মরুভূমির বিস্তৃতি আটকায় আরাবল্লী। এই পর্বতমালা না থাকলে দিল্লিও মরুভূমির কবলে চলে যেত। ফলে পরিবেশকর্মীদের দাবি, আরাবল্লী যদি খনি, রিয়েল এস্টেটের মতো কর্পোরেটদের হাতে পড়ে তবে আরাবল্লি থেকে পাওয়া নিরাপত্তার ৯০ শতাংশই নষ্ট হয়ে যাবে। ভয়ংকর দূষণ তো বটেই সর্বনাশ হবে জীববৈচিত্রের। ভূগর্ভস্থ জলের রিসাইকেল কমে আসবে। জলসংকট চরম আকার নেবে।
