নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: বাংলাকে না জানিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা জলচুক্তি বা ফরাক্কা চুক্তির নবীকরণ নয়। দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার মমতার সেই দাবি সংসদে তুলে ধরলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যসভায় ঋতব্রত দাবি করলেন, ফরাক্কা চুক্তির ফলে বাংলার বহু মানুষকে সর্বস্ব খোয়াতে হয়েছে। আবার তিস্তার জলের উপর উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলার জীবনযাত্রা নির্ভর করে। তাই এই দুই নদী নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বাংলার সঙ্গে আলোচনা করা উচিত কেন্দ্রের।
মঙ্গলবার রাজ্যসভায় ঋতব্রত বলেন, "ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে কোনও জলচুক্তি হলে সেটার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হবে বাংলার মানুষ। গত কয়েক বছরে পূর্ব ভারতে নদীর গতিপ্রকৃতি বদলে গিয়েছে। আর সেটার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে বাংলার উপর।" তৃণমূল সাংসদের দাবি, ফরাক্কা চুক্তির জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষ সর্বস্ব খুইয়ে গৃহহীন। এই চুক্তির প্রভাব পড়ছে সুন্দরবনের জনজীবনে। এমনকী কলকাতা বন্দরের স্বাস্থ্যও প্রভাবিত হচ্ছে ফরাক্কার জন্য। তিস্তা নদী নিয়ে ঋতব্রতর বক্তব্য, এই নদীটির জলেই উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলার মানুষের পানীয় জলের চাহিদা পূরণ করা হয়। তাছাড়া উত্তরবঙ্গে সেচের জলও আসে তিস্তা থেকে। তাই তিস্তার জল বাংলাদেশের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া উচিত হবে না। ঋতব্রতর সাফ কথা, বাংলাদেশের সঙ্গে কোনওরকম জলচুক্তিই বাংলার সম্মতি ছাড়া করা উচিত নয়। তাছাড়া ইন্দো ভুটান জলবন্টন কমিটি গড়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও সরব হন তিনি।
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে গঙ্গা জলচুক্তি হয় ভারতের। পরবর্তী কালে দেখা গিয়েছে, গঙ্গার ওই চুক্তিতে আসলে বাংলার সমুহ ক্ষতি হয়েছে। একাধিক জেলা বছর বছর প্লাবিত হচ্ছে। চুক্তির পর তিন দশকে রাজ্যের বহু জমি গিয়েছে পদ্মা এবং গঙ্গার গ্রাসে। রাজ্যের অভিযোগ, বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি হলেও সেসময় যে ভাবে নিয়মিত গঙ্গায় ড্রেজিং করার কথা ছিল সেটা করা হয় না। চুক্তির টাকাও দেওয়া হয়নি রাজ্যকে।
ফরাক্কা চুক্তির নবীকরণ হওয়ার কথা ২০২৬ সালে। অর্থাৎ হাতে আর দুবছর। বাংলাদেশ চাইছে দ্রুত এই চুক্তির নবীকরণ করতে। কিন্তু রাজ্যে সরকারের তাতে আপত্তি আছে। এর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) একাধিকবার এ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। সরাসরি চুক্তির বিরোধিতা না করলেও কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছেন। এদিকে তিস্তার স্থায়ী জলচুক্তি নিয়েও আপত্তি রয়েছে রাজ্যের। ঋতব্রতর দাবি, যে কোনও সিদ্ধান্তই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়ে নেওয়া উচিত।