নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: কেন্দ্রীয় রাজকোষ ভরাতে মোদি সরকার অনেকাংশেই বিলগ্নিকরণের উপর নির্ভরশীল। ২০২১-২০২২ আর্থিক বর্ষের বাজেটে একাধিক সরকারি সংস্থার বিলগ্নিকরণের ঘোষণা করেছিলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। উদ্দেশ্য ছিল, সরকারি সংস্থা বেসরকারি হাতে তুলে দিয়ে প্রায় পৌনে ২ লক্ষ কোটি টাকা আয়। কিন্তু সেই লক্ষ্যমাত্রা অধরাই রয়ে গিয়েছে। এর মাঝে আগামী অর্থবর্ষের বাজেট (Union Budget 2022) পেশ করতে চলেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। লক্ষ্যমাত্রা অধরা থাকার পরও কি বিলগ্নিকরণের পথে হাঁটবে মোদি সরকার নাকি আপাতত এই প্রক্রিয়ায় পূর্ণচ্ছেদ পড়বে, বাজেট পেশের আগে এটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন। কোন পথে হাঁটবে কেন্দ্র, সেদিকে তাকিয়ে দালাল স্ট্রিটও।
একদিকে কোভিড-১৯ সঙ্কটের দরুণ সার্বিক অর্থনীতির বিধ্বস্ত অবস্থা, সবচেয়ে বেশি উদ্বেগে রাখা বেকারের সংখ্যা আর অন্যদিকে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা নির্বাচন। কাজেই নির্মলার সামনে এখন অনেকগুলি চ্যালেঞ্জ। সব শ্রেণির মানুষকে সন্তুষ্ট করার চাইতেও, তার কাছে যেটা এই সময় সবচেয়ে জরুরি তা হল বেলাইন অর্থনীতিকে দ্রুত ট্র্যাকে ফেরানো। এর জন্য যা যা করণীয় তার সবগুলিই সীতারমণ করবেন বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু তার জন্য সরকারের হাতে অর্থের প্রয়োজন। কোথা থেকে আসবে সেই বিপুল অঙ্কের অর্থ? গত কয়েক বছরের ট্রেন্ড বলছে, মোদি সরকার অনেকাংশেই বিলগ্নিকরণের উপর নির্ভরশীল।
[আরও পড়ুন: দেউচা-পাচামিতে জমি দিলেই চাকরি, তৈরি ৫ হাজারের বেশি পদ, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় খুশির হাওয়া]
সেই ট্রেন্ড মেনে ২০২২ সাল পর্যন্ত ভারত পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লিমিটেড (BPCL), এয়ার ইন্ডিয়া, আইডিবিআই, শিপিং কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া, কন্টেনার কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া, বিইএমএল, পবনহংস, নীলাচল ইস্পাত নিগম বিলগ্নিকরণের কথা বলা হয়েছিল গতবারের বাজেটে। এর বাইরেও এলআইসির শেয়ার বাজারে ছাড়া হবে বলেও ঘোষণা করে ছিলেন নির্মলা। লক্ষ্যমাত্রা ছিল বিলগ্নিকরণের মাধ্যমে ১.৭৫ লক্ষ কোটি টাকা রোজগার। কিন্তু সেই লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছেও পৌঁছতে পারল না কেন্দ্রীয় সরকার। উপরোক্ত তালিকার মধ্যে শুধুমাত্র এয়ার ইন্ডিয়া টাটা গোষ্ঠীর হাতে গিয়েছে। বাকিগুলির ক্রেতাই জোগার করতে পারেনি কেন্দ্র।
শোনা যাচ্ছিল, পাঞ্জাব ও সিন্ধ ব্যাংক (Punjab & Sind Bank), ব্যাংক অব মহারাষ্ট্র (Bank of Maharashtra), ইউকো ব্যাংক (UCO Bank) ও আইডিবিআই ব্যাংকে (IDBI Bank) সরকারের হাতে থাকা শেয়ার বেসরকারি সংস্থার কাছে দ্রুত বিক্রি করার পথে হাঁটছে কেন্দ্র। পাশাপাশি আরও ৪ ব্যাংকের বিলগ্নিকরণের পথে হাঁটতে পারে তারা। এই তালিকায় যুক্ত হতে পারে আরও কিছু সরকারি সংস্থা। কিন্তু গতবারে লক্ষ্যমাত্রাই এখনও অধরা। ফলে কেন্দ্র কি বিকল্প পথে আয়ের সন্ধান করবে নাকি সেই বিলগ্নিকরণের পথেই হাঁটবে মোদি সরকার, সেটা জানতে অপেক্ষা করতে হবে আর কিছুক্ষণ।