অর্পণ দাস: আইপিএল রিটেনশন নিয়ে যাবতীয় জল্পনার অবসান ঘটেছে। কোন দল কাকে রাখল, কাকে ছাড়ল, তা নিয়ে চর্চা তুঙ্গে। আর রিটেনশন তালিকায় একমাত্র বাঙালি হিসেবে আছেন অভিষেক পোড়েল। দিল্লি ক্যাপিটালস তাঁকে 'আনক্যাপড' প্লেয়ার হিসেবে রিটেন করেছে ৪ কোটি টাকায়। গতবার আইপিএলে দিল্লি ক্যাপিটালসের জার্সিতে একের পর এক অনবদ্য ইনিংস। রনজি, দলীপেও প্রতিভার দ্যুতি ছড়িয়েছেন অভিষেক। কড়া নাড়ছেন ভারতীয় দলের দরজাতেও। আপাতত তিনি ভারত এ দলের সঙ্গে রয়েছেন অস্ট্রেলিয়া সফরে। সেখান থেকেই সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালের সঙ্গে ফোনে আলাপচারিতা সারলেন। জানালেন অতীতের সংগ্রামের কথা, সেই সঙ্গে উঠে এল ভবিষ্যতের আরও বড় লক্ষ্যের কথাও।
প্রশ্ন: শুভ দীপাবলি। একইসঙ্গে অভিনন্দন জানাই, আইপিএলে দিল্লি ক্যাপিটালস দলে রিটেন হওয়ার জন্য। গত কয়েক বছরের নিয়মিত সংগ্রাম যেন একটা মূল্য পেল। রনজি ট্রফি থেকে আইপিএল, এই সফরটা আমরা দেখেছি। কিন্তু তার পিছনেও তো অনেক গল্প থাকে। সেই বিষয়ে যদি কিছু আলোকপাত করেন।
অভিষেক: সেই গল্পের জন্য বেশ খানিকটা পিছনে ফিরে যেতে হয়। একসময় ভোররাতে উঠে লোকাল ট্রেন ধরে কলকাতা যাওয়া। পিঠে ভারী ব্যাগ নিয়ে লাগাতার পরিশ্রম। তবে এটাও ঠিক আমার বাবা-মা, ঠাকুরদা সবাইকে পাশে পেয়েছি। একটা কথাই বলেছেন তাঁরা, ক্রিকেটটা মন দিয়ে খেল। কোথাও গিয়ে পড়াশোনার উপরেও প্রাধান্য পেয়েছে ক্রিকেট। তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। বিশেষ করে বলতে হয় প্রয়াত ঠাকুরদা তুলসী পোড়েলের কথা। তাঁর ইচ্ছে ছিল, আমাকে ভালো খেলতে দেখা, আমার সাফল্য দেখা। তাঁর সেই প্রত্যাশা আমি পূরণ করে যেতে চাই।
প্রশ্ন: বাংলা থেকে এবার আইপিএলে রিটেন হওয়া একমাত্র ক্রিকেটার আপনি। সেটা বাঙালি হিসেবে আমাদের কাছে খুব গর্বের বিষয়। সেই জায়গা থেকে আপনার অনুভূতি কীরকম?
অভিষেক: খুবই খুশি। চাইছিলাম দিল্লি ক্যাপিটালসেই থাকতে। গতবছর সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় স্যরের থেকে প্রচুর সাহায্য পেয়েছি। উনি সবসময় আমার পাশে ছিলেন। ম্যানেজমেন্টের সমর্থন পেয়েছি। তাদের সেই বিশ্বাসের জায়গাটা আমি মাঠে প্রমাণ করেছি। ফলে এবছরও সুযোগটা ছাড়তে চাইনি। আশা করি, এবছরও প্রমাণ করতে পারব, কেন আমাকে রিটেন করা হল।
প্রশ্ন: দিল্লি ক্যাপিটালস এবার ঋষভ পন্থকেও রাখেনি। নিলামে কী হবে, সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে পন্থকে ছেড়ে দেওয়া মানে তো এটাও ঠিক যে, উইকেটকিপার-ব্যাটার হিসেবে আপনার উপর দায়িত্ব বাড়ল।
অভিষেক: দায়িত্ব গতবারও ছিল। আমি শুধু নিজের কাজটা করে যেতে চেয়েছি। টিম থেকে যেটা করতে বলা হয়েছিল, সেটা করেছি। নিজে কীরকম খেলব, সেটাই আমার একমাত্র ভাবনার জায়গা।
প্রশ্ন: গতবার এই দলে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন। তবে এবার ম্যানেজমেন্ট বদলে যাওয়ায়, তাঁর কাঁধে দায়িত্ব থাকবে না। দিল্লিতে তাঁর না থাকা কী কোনওভাবে প্রভাব ফেলবে?
অভিষেক: সৌরভ স্যরের সাহায্য সবসময়ই পেয়েছি। দিল্লি ক্যাপিটালসে এবার তিনি সরাসরি না থাকলেও তাঁর পরামর্শ নিয়ে এগোব। স্যরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করি। সুবিধা-অসুবিধায় সবসময় তাঁর সাহায্য পাই।
প্রশ্ন: আইপিএলে রিটেন হয়েছেন ৪ কোটি টাকায়। গতবারের পারফরম্যান্স বিচার করলে কি আরও বেশি মূল্য প্রাপ্য ছিল আপনার? কী মনে হয়, রিটেন না হয়ে নিলাম টেবিলে উঠলে আরও বেশি মূল্য পেতেন?
অভিষেক: সত্যি কথা বলতে, আমার কাছে ম্যাচ খেলতে পারাটাই আসল কথা। সব ম্যাচে ভালো খেলতে পারাটাই আসল লক্ষ্য। এই মুহূর্তে টাকাটাই সব নয়। দুবছর নিয়মিত ভালো খেললে টাকাটা বাড়বে বলেই বিশ্বাস। আপাতত, আমার একটাই কাজ। নিজের থেকে সেরাটা বের করে নিয়ে আসা। বড় মঞ্চে দেখানো যে, আমি কতটা ভালো খেলতে পারি। ফলে আমি খুশি।
প্রশ্ন: দীপাবলির পর জগদ্ধাত্রী পুজো। আপনি চন্দননগরের মানুষ। সেখানে জগদ্ধাত্রী পুজো মানে উৎসবের আনন্দ আরও কয়েক গুণ বেড়ে যায়। যাবতীয় বাধা পার করে বাড়িতেও নিশ্চয়ই উৎসবের আবহ?
অভিষেক: হ্যাঁ, একদমই। বাধা তো ছিলই। লকডাউনের সময় খুবই আর্থিক সমস্যায় ছিলাম। চারদিকে ধার-দেনা পর্যন্ত হয়ে গিয়েছিল। তবু লড়াই করে গিয়েছি। এই সফরটাই আমাকে শক্তি দিয়েছে। ওই সময়ের সংগ্রামটা না থাকলে আজ এই জায়গায় আসতে পারতাম না। বাড়ির সবাই খুব খুশি। কিন্তু এটা সবে সফরের শুরু।
প্রশ্ন: জাতীয় দলের দরজায় কড়া নাড়ছেন। রিটেনশনের পর প্রত্যাশার চাপও বাড়বে। আপাতত লক্ষ্য কী?
অভিষেক: পারফর্ম করে যেতে চাই। বাকিটা আমার হাতে নেই। আমি এখন ভাবছিও না ভবিষ্যতে কী হবে? যেটা আমার কাজ, সেটা আমি করে যেতে চাই। অস্ট্রেলিয়া সফরের পর টানা ম্যাচ আছে। রনজির পর সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফি, বিজয় হাজারে। আইপিএল অনেক দূরে। তার জন্য এখনই কিছু ভাবছি না।