সুব্রত বিশ্বাস: পার্সেল ব্যবস্থায় ‘স্বচ্ছতা’ আনতে নয়া পদক্ষেপ করতে চলেছে রেল। এতকাল পার্সেল ভ্যান বণ্টন কমার্শিয়াল বিভাগ করলেও এখন তা বণ্টন হবে অপারেশন, কমার্শিয়াল ও অ্যাকাউন্টস তিন বিভাগের যুগ্ম পরিচালনায়। এতকাল শুধু কমার্শিয়াল বিভাগই এই বুকিং করতো। ফলে বুকিংয়ে অস্বচ্ছতা এসে পড়েছিল বলে ভিজিল্যান্স সূত্রের মত।
[আরও পড়ুন: এপ্রিলে দেশে কর্মসংস্থানে রেকর্ড বৃদ্ধি, কাজ পেয়েছেন ৮৮ লক্ষ মানুষ]
রেল সূত্রে খবর, এক শ্রেণির ব্যবসায়ীই এই ভিপির বুকিং পেতেন। নামে ও বেনামে। ফলে অন্য সাধারণ ব্যবসায়ীরা এই ভিপি পেতেন না। এনিয়ে বিস্তর অভিযোগ এসেছিল রেলের ঘরে। তদন্তে নামতে হয়েছিল পূর্ব রেলের ভিজিল্যান্স বিভাগকে বলে জানা গিয়েছে। রিপোর্টে ‘কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসে’। তড়িঘড়ি একক বিভাগীয় ক্ষমতা সম্প্রসারিত করা হয় তিন বিভাগের হাতে। নির্দেশ দেওয়া হয়, তিন বিভাগের তত্বাবধানে ভিপির বুকিং দেওয়া হবে। পাশাপাশি হাওড়া ও শিয়ালদহের একাধিক কমার্শিয়াল আধিকারিক ও কর্মীদের বদলিও করা হয় এক প্রকার রাতারাতি।
কোভিডে পণ্য পরিবহণে দারুণ সফলতা পেয়েছিল রেল। সড়ক পথের চেয়ে যখন রেল পরিবহণের চাহিদা তুঙ্গে। ঠিক তখনই পার্সেল ভ্যান বণ্টনে ‘ভুতুড়ে চাহিদা’র উৎপাৎ এতটাই বেড়ে যায় যে সেই বিষয়কে কেন্দ্র করে বড়সড় আর্থিক কেলেঙ্কারি সূত্রপাত। বিভিন্ন মেল, এক্সপ্রেসের পার্সেল ভ্যান (ডিমান্ড ভিপি) নির্ধারিত এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরাই এক চেটিয়া ভাবে পেয়ে থাকেন। ফলে অন্য ব্যাবসায়ী এই পার্সেল ভ্যান রেলের কাছে চেয়েও পান না। অভিযোগ ছিল নানা ‘ভুতুড়ে কোম্পানি’র নামে এই ডিমান্ড ভিপি নিয়ে নেয় সংস্থাগুলি।
পূর্ব রেলের এক কমার্শিয়াল ম্যানেজারের কথায়, বিভিন্ন গন্তব্যের ট্রেনের ভিপি বুকিং আগে এক সঙ্গে মিলিতভাবে হলেও নতুন নির্দেশে এক এক দিকের ট্রেনের জন্য আলাদা-আলাদা বুকিং তালিকা তৈরি করতে হবে। এই তালিকা বণ্টনের সময় খতিয়ে দেখবে সংশ্লিষ্ট তিন বিভাগের কর্মীরা। ফলে বণ্টনে অস্বচ্ছতা থাকবে না বলে মনে করা হচ্ছে। এতকাল ‘জাল ডিমান্ড’ দিয়ে এক সংস্থাই একাধিক ভিপি নিয়ে নিত। কমার্শিয়াল বিভাগের কর্মীদের সঙ্গে গোপন সমঝোতার জোরে।
নতুন নির্দেশে এবার থেকে ভিপিতে প্রয়োজন হল .৫ টন বাড়তি লোডিং করা যাবে। আগে এক ওজন দেখিয়ে বুকিং করে তাতে অনেক বাড়তি পণ্য তোলার রেওয়াজ ছিল। ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা ছিল। ওজন করাটা নয়া নিয়মে বুকিংয়ের সময়ই বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বুকিংয়ের সময় ওজন করা সম্ভব না হলেও গন্তব্যে পৌঁছানোর পর অবশ্যই ওজন করতে হবে সেই পণ্য। ভিপি বুকিংয়ের জন্য ন্যূনতম ২৩ টন পণ্য বাধ্যতামূলক। ১৮ টনের জন্য ভিপি নিতে হলে অবশ্যই আধিকারিকের অনুমতি নিতে হবে। এতকাল এককভাবে কমার্শিয়াল বিভাগ এই ভিপি বুকিং করতো ফলে নানা অসঙ্গতি ধরা পড়েছে ভিজিল্যান্স বিভাগের তদন্তে। সেই রিপোর্ট পেয়েই এবার নড়ে বসল পূর্ব রেল।