সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তিনদিনের ভারত সফরে এসেছেন জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজ। আজ শুক্রবার তিনি বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে। আগামী দিনে বার্লিন ও নয়াদিল্লির মধ্যে সহযোগিতা ও বন্ধুত্ব আরও মজবুত করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ দুই রাষ্ট্রপ্রধান। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত, লড়াই থামাতে শান্তির বার্তা দিচ্ছে ভারত। এদেশে এসে সেই 'মোদিমন্ত্রে'র ভূয়সী প্রশংসা করলেন শোলৎজ।
গতকালই রাশিয়ার কাজানে অনুষ্ঠিত ব্রিকস সামিট শেষে দেশে ফেরেন মোদি। বিশ্ব মানচিত্রে যে ভারতের গুরুত্ব উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে, মোদির সফরে তারই প্রমাণ মেলে। বিশ্বের চলমান উদ্বেগজনক পরিস্থিতি কাটাতে দিল্লির উপরেই ভরসা রাখতে চেয়েছেন রাষ্ট্রনেতারা। এবার সেই পথেই হাঁটলেন জার্মান চ্যান্সেলর শোলৎজ। পিটিআই সূত্রে খবর, এদিন মোদির সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেন, "আমরা আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক সমাধানের পথ খুঁজছি। কারণ এই পদ্ধতি উন্নয়ন, সমৃদ্ধি, বাণিজ্যিক ও আর্থিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে অপরিহার্য। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের শান্তি ফেরাতে ভারত যে বার্তা দিয়েছে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ভারতের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।"
আলোচনার টেবিলে মোদি জানান, "বিশ্ব এখন উত্তেজনা, সংঘাত ও অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আইনের শাসন এবং নৌ চলাচলের স্বাধীনতা নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ রয়েছে। এই রকম সময়ে, ভারত এবং জার্মানির সম্পর্ক কৌশলগত অংশীদারিত্ব একটি শক্তিশালী জোট হিসাবে কাজ করবে।" এছাড়াও দুজনের আলোচনায় বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, শক্তি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো নানা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বলে রাখা ভালো, এটা শোলৎজের তৃতীয় ভারত সফর। ২০১১ সালে দুদেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির উদ্দেশে গঠিত হয়েছিল ভারত-জার্মানি ফ্রেমওয়ার্ক। তার পর থেকেই বন্ধুত্ব আরও মজবুত হয়েছে। এর মাঝেই ২০২২ সালে শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। ভারত এই সংঘাতের জেরে প্রাণহানির নিন্দা করলেও কখনও সরাসরি মস্কোর বিরুদ্ধে কথা বলেনি। এই যুদ্ধ নিয়ে বিভক্ত বিশ্ব। রাশিয়াকে একঘরে করতে মরিয়া আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো। কিন্তু ভারত ও চিনের মতো বিশ্বশক্তি রাশিয়ার পাশে থাকায় সেই চেষ্টা সফল হচ্ছে না। বিশ্লেষকদের মতে, তাই এবার ভারতকে রুশ প্রভাবমুক্ত করতে সক্রিয় হয়েছে জার্মানি।
গত বছরই জানা গিয়েছিল ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে ছটি কনভেনশনাল সাবমেরিন তৈরি করতে আগ্রহী জার্মানি। ভারতীয় নৌসেনার আধুনিকিকরণের কথা মাথায় রেখেই ৫২০ কোটি মার্কিন ডলারের এই প্রকল্পের অন্তর্গত অত্যাধুনিক ডিজেল-ইলেক্ট্রিক সাবমেরিন তেরি করতে চায় বার্লিন। বরাবরই রাশিয়ার তৈরি হাতিয়ার ভারতীয় সেনার মেরুদণ্ড। তাই ইউক্রেন যুদ্ধের আবহেও শান্তির বার্তা দিলেও মস্কোর পাশেই দাঁড়িয়েছে ভারত। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এবার দিল্লির সেই রুশ হাতিয়ার নির্ভরতা কাটাতে চাইছে জার্মানি। সম্প্রতি, রাশিয়া থেকে ভারতের তেল কেনার প্রসঙ্গেও বার্লিন স্পষ্ট জানিয়ে দেয় যে, এই বিষয়ে তাদের কোনও মাথাব্যথা নেই। ফলে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে দিল্লির সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করতে নারাজ বার্লিন।