গৌতম ব্রহ্ম: বৃষ্টির ঘাটতি। তার জেরে রাজ্যের সাত জেলায় ধাক্কা খেল ধান চাষ! সবচেয়ে খারাপ অবস্থা পশ্চিম বর্ধমান, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, মুর্শিদাবাদের। বীরভূম ও নদিয়ার কিছু অংশেও সমস্যা প্রবল। যা পরিস্থিতি তাতে রাজ্যের ২ লক্ষ ৪০ হাজার হেক্টর ধানি জমিতে এবার আর খরিফ মরশুমের ধান চাষ সম্ভব হচ্ছে না।
জানা গিয়েছে, প্রকৃতির এই খামখেয়ালিপনার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বহু চাষি। তাঁদের তালিকা তৈরি হচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়ানো হয়েছে ধানের জন্য বিমা করার সময়সীমাও। ৩১ আগস্ট ছিল শেষ তারিখ। যা বাড়িয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর করা হয়েছে। যা পরিস্থিতি তাতে অক্টোবরেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া শুরু করবে নবান্ন। আগস্টের এই স্পেলে ভাল বৃষ্টি হলেও ধানের বীজতলা তৈরি ও রোপণের সময় পর্যাপ্ত বৃষ্টি পায়নি রাজ্যের বহু জেলা। আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টির ঘাটতি ২৬ শতাংশ। মোট রাজ্যে ১২ শতাংশ।
[আরও পড়ুন: মুম্বইয়ে রহস্যমৃত্যু বিমানসেবিকার! বন্ধ ফ্ল্যাটে উদ্ধার গলার নলি কাটা দেহ]
তবে তাৎপর্যের হল, দুই দিনাজপুর বা দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি বৃষ্টি কম পেলেও ধান চাষে কোনও সমস্যা হয়নি। সমস্যা হয়েছে পুরুলিয়া, পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া, বীরভূম, নদিয়া, মালদহ, পশ্চিম মেদিনীপুরের চাষিদের। বৃষ্টি ঘাটতি ছিল মুর্শিদাবাদে ৪৫ শতাংশ, নদিয়ায় ৩২ শতাংশ, পুরুলিয়ায় ২৯ শতাংশ, বাঁকুড়ায় ২৪ শতাংশ, বীরভূমে ৩৫ শতাংশ, বর্ধমানে ১৮ শতাংশ, মালদহে ৫ শতাংশ। নবান্ন সূত্রের খবর, এই সাত জেলায় ১৭ লক্ষ ৮৩ হাজার ১৬০ হেক্টর জমিতে গত বছর ধান চাষ হয়েছিল। কিন্তু সময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় ২ লক্ষ ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে এবার আর খরিফ মরশুমের ধান চাষ করা সম্ভব হচ্ছে না।
নবান্নের এক কৃষি আধিকারিক জানালেন, সময় পেরিয়ে যাওয়ায় চাষিরা উৎসাহ হারিয়েছেন। তাছাড়া শেষ দিকের চাষে ভাল ফলন মেলে না। চাষের খরচও ওঠে না। সেই জন্যেই নির্দিষ্ট সময়ের পর ধান রোপণে অনীহা তৈরি হয়। সমস্যার মোকাবিলায় সম্প্রতি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয় নবান্নে। তাতে সাত জেলার কৃষি আধিকারিকরা ভারচুয়ালি উপস্থিত ছিলেন। এই ২ লক্ষ ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে বিকল্প চাষের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ঠিক হয়েছে এখানে ডাল, সরষে, তিলের চাষ হবে। এই ধরনের চাষে খুব কম জল লাগে। ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের নিখরচায় বীজ দেওয়া হবে। জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই জিপিএস প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ক্ষতিপূরণের মানচিত্র তৈরি করতে শুরু করেছে কৃষি দপ্তর। ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ম্যাপ তৈরি হয়ে যাবে। তারপরই শুরু হবে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পালা।
রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, পশ্চিমবঙ্গই একমাত্র রাজ্য যেখানে প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে এই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। টানা তিন বছর ধরে নয়া ব্যবস্থায় রবি ও খরিফ মরশুমের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।