চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: মাইথন, পাঞ্চেত ড্যাম থেকে জল ছাড়া নিয়ে ডিভিসি-রাজ্যের সংঘাত শেষের পথে। ডিভিসির (DVC) চারটি জলাধারে বসলো ইন্টিগ্রেটেড রিভার ওয়াটার সিস্টেম। এর ফলে জল ছাড়া সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য সময়মতো পাওয়া যাবে। এর আগে রাজ্যের তরফে যে অভিযোগ উঠত, রাজ্যকে না জানিয়ে জল ছাড়ছে ডিভিসি, সেই অভিযোগেরও সমাধান হবে বলে আশা কর্তৃপক্ষের।
রাজ্যে মাইথন, পাঞ্চেত, তিলাইয়া, কোনার – ডিভিসির এই চারটি জলাধারকে ইন্টিগ্রেটেড রিভার ওয়াটার সিস্টেম স্যাটেলাইট ব্যবস্থায় আনা হল এবার। মাইথনে ডিভিসির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এ কে ভার্মা ও চিফ ইঞ্জিনিয়ার সত্যব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে কন্ট্রোল রুমের উদ্বোধন হল শুক্রবার। দামোদর উপত্যকার মূল নদী দামোদর, বরাকর, শাখা নদী উশ্রী, জামুনি, কোনার এবং বোকারো নদীর কোথায়, কত বৃষ্টি হচ্ছে, কত জল উপর থেকে নীচের দিকে নামছে, কিংবা সে জন্য সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের নির্দেশে কত জল ছাড়তে হবে, এসব তথ্য এবার সহজেই মিলবে। ওই স্যাটেলাইট ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রতি ঘণ্টায় তা জানতে পারবেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আধিকারিকরা। সেই রেকর্ড দিল্লি এবং মাইথনেও ডিজিটাল সিস্টেমের মাধ্যমে পৌঁছে যাবে।
[আরও পড়ুন: ‘নন্দীগ্রামে আমিই মমতাকে হারাব’, শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্যে তুঙ্গে জল্পনা]
ডিভিসির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এ কে ভার্মা বলেন, ”বরাকর, দামোদরের জল থেকে শুরু করে ডিভিসি-র চার জলাধারের জলস্তরের ঘণ্টাভিত্তিক হিসাব বা জল ছাড়ার তথ্য – এ বার সবই জানা যাবে ডিজিটাল মাধ্যমে। কলকাতায় জলসম্পদ ভবনে বসেই রাজ্য সরকারের আধিকারিকরা ঘণ্টায় ঘণ্টায় পাবেন আপডেট। গোটা কাজটাই হবে স্যাটেলাইট পদ্ধতি ব্যবহার করে।” জানা গিয়েছে, এই কাজের জন্য বরাকর, দামোদর এবং ডিভিসি-র মাইথন-পাঞ্চেত-তিলাইয়া-কোনার বাঁধে ৮৩টি সেন্সর বসানো হয়েছে। তাতে মোট খরচ হয়েছে ৪৫ কোটি টাকা।
কীভাবে ডিজিটাল মাধ্যমে কাজ হবে? চিফ ইঞ্জিনিয়ার সত্যব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ”নদী ও বাঁধে যে ৮৩টি সেন্সর বসানো হয়েছে, সেগুলির মারফত সংগৃহীত তথ্য স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পৌঁছে যাবে রাজস্থানের জয়পুর স্যাটেলাইট সেন্টারে। সেখান থেকে মুহূর্তের মধ্যে তথ্যগুলি পাঠানো হবে কলকাতার জলসম্পদ ভবন, মাইথনে ডিভিসি-র দফতর এবং দিল্লির সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনে।” ডিভিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু বর্ষাকাল বা বৃষ্টির সময়ে নয়, সারা বছরই ঘণ্টায় ঘণ্টায় হিসাব পাওয়া যাবে। উচ্চ দামোদর থেকে নিম্ন দামোদর এলাকা ছাড়াও বছরভর দামোদর, বরাকর-সহ বিভিন্ন নদী থেকে কত জল আসছে, তা-ও রেকর্ড হবে। ওই তিন কেন্দ্র থেকে জানা যাবে।
[আরও পড়ুন: বিজেপি নেত্রীর বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি, বোমাবাজি, দিনেদুপুরে আতঙ্কে কাঁটা নিমতাবাসী]
দামোদরে যে গেজ চিহ্ন বসানো আছে, এতদিন সেখান থেকে তথ্য সংগ্রহ করে ম্যানুয়ালি ফোনের মাধ্যমে মেসেজে জানানো হতো। জানা গিয়েছে, দামোদর উপত্যকা নন্দাদী, পালগঞ্জের মত রিমোট এলাকা যেখানে ম্যানুয়ালি কাজ করা সম্ভব নয়, সেখানে এই সিস্টেম কাজ করা হবে। বর্ষায় ডিভিসি-র জল ছাড়া সংক্রান্ত সব তথ্য সময়মতো পাওয়া যায় না বলে রাজ্যের তরফে বারবার যে অভিযোগ ওঠে, এর ফলে সেই সমস্যারও সমাধান হবে বলে আশা করছেন ডিভিসি কর্তারা।