shono
Advertisement

জীবনের ছন্দে ‘কালবালিয়া’, মেয়েদের স্বনির্ভর করতে নাচ শেখাচ্ছেন ‘পদ্মশ্রী’ গুলাবো

অযোধ্যা পাহাড়ের মঞ্চ মাতালেন 'সাপুড়ে কন্যা', নারীদিবসে তাঁকে কুর্নিশ!
Posted: 09:44 PM Mar 07, 2024Updated: 01:25 PM Mar 08, 2024

সুমিত বিশ্বাস, অযোধ্যা পাহাড় (পুরুলিয়া): কালবেলিয়া সম্প্রদায়ের দম্পতিরা বেশি কন্যাসন্তানের জন্ম দিলেই নবজাতককে মেরে ফেলা হতো। রাজস্থানের যাযাবর গোষ্ঠীর ওই প্রচলিত নিয়ম বন্ধ হলেও আজও ওই সম্প্রদায়ের মেয়েরা সেভাবে সমাজের মূল স্রোতে ফেরেননি। তাই স্কুল গড়ে লেখাপড়া শিখিয়ে ওই যাযাবর গোষ্ঠীর কালবেলিয়া নাচ শিখিয়ে ওই মেয়েদের স্বনির্ভর করতে চান ‘পদ্মশ্রী’ গুলাবো সাপেরা। রাজস্থানের (Rajasthan) পুষ্করে ৫ বিঘা জমিতে স্কুল গড়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন তিনি। রাজস্থানের লোকনৃত্য কালবেলিয়ায় সম্প্রতি অযোধ্যা পাহাড় (Ayodhya Hill) মাতিয়ে তাঁর নতুন লড়াইয়ের কথা জানালেন ভারতীয় ওই নৃত্যশিল্পী।

Advertisement

সম্প্রতি অযোধ্যা পাহাড় মাতিয়ে তাঁর নতুন লড়াইয়ের কথা জানালেন নৃত্যশিল্পী গুলাবো। নিজস্ব চিত্র।

বাবা-মায়ের চতুর্থ কন্যা সন্তান ছিলেন গুলাবো। পৃথিবীর আলো দেখার সঙ্গে সঙ্গে ধাত্রীরা তাকে তুলে নিয়ে যায়। তার পর সমাজের নিয়ম মেনে জঙ্গলে জীবন্ত কবর দেওয়া হয়। ধনতেরাসের সন্ধ্যায় শুভ দিনে ওই নবজাতক এই পৃথিবীকে দেখলেও তার ঠাঁই হয়েছিল মাটির তলায়। ঘাসজমির নিচে। সন্ধে ৭ টা থেকে রাত ১২ টা। প্রায় ৫ ঘন্টা মাটির তলায় থাকলেও জীবনের স্পন্দন থামেনি। সমাজের নিয়মের বাইরে গিয়ে মা ও মাসি মাটি খুঁড়ে মেয়েকে (Duaghter) তুলে এনেছিলেন। প্রচলিত রীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন বাবা। মেনে নিতে পারেননি সদ্যোজাত কন্যাকে হত্যার এই চেষ্টা। সমাজের বিরুদ্ধে যাওয়ায় একঘরে হতে হয়।

[আরও পড়ুন: বিতর্ক পেরিয়েও সফল ‘অ্যানিম্যাল’, তিরুপতিতে কেশ দান করে নেড়া হলেন পরিচালক সন্দীপ ভাঙ্গা]

পোষা সাপের নাচ (snake dance) দেখিয়ে সংসার চালাতেন বাবা। মেয়েকে হত্যা করে দেওয়ার আশঙ্কায় কোলের শিশুকে সবসময় পাশে রাখতেন। সাপের সঙ্গেই বড় হয়ে উঠেছিলেন আজকের গুলাবো। খেলা দেখানোর পর যখন সাপকে দুধ খাওয়ানো হতো একইভাবে সেই দুধ খেয়েই বড় হয়ে উঠেছেন এই ‘সাপুড়ে কন্যা’। বাবার বিনের সুরে দুলতো সাপের মাথা। আর সেই গতি অনুসরণ করেই দুলত ছোট্ট শিশু। যা পরবর্তীকালে কার্যত গুলাবোর হাত ধরে রাজস্থানের লোকনৃত্য কালবেলিয়ার জন্ম। আর বাকিটা ইতিহাস।

বিখ্যাত কালবেলিয়া নাচের ছন্দে গুলাবো। নিজস্ব চিত্র।

১৯৭৩ সালে রাজস্থানের আজমেড়ের কোটড়া গ্রামে জন্ম ৫১ বছরের এই নৃত্যশিল্পীর। মাটির নিচে ৫ ঘণ্টা থাকার পরেও শরীরে প্রাণ থাকায় নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ধন্বন্তরি’, ‘ধনবতী’। মাটি থেকে তুলে আনার পর ওই নবজাতক বেঁচে গেলেও এক বছর বয়সে তাঁর শরীর খারাপ হয়। তবে চিকিৎসকের আপ্রাণ চেষ্টায় সুস্থ হয়ে যান তিনি। এই সন্তান শুধু ফর্সা নয়। তার গাল ছিল গোলাপি। যেখানে চিকিৎসা চলছিল সেখানেই ওই কোলের শিশুর কাছে একটি গোলাপ ফুল দেখেছিলেন তাঁর বাবা। তাই তাঁর নাম দেওয়া হয় ‘গুলাবি’। পরবর্তীকালে লোকমুখে হয়ে যায় ‘গুলাবো’।

[আরও পড়ুন: লোকসভার আগে বড় চমক! সর্দার প্যাটেলের মূর্তির তথ্যচিত্রে বিশেষ ভূমিকায় অক্ষয়]

তাঁর কথায়, “ঘরে-ঘরে গুলাবো থাকুক। কোথাও যাতে এমন না হয় যে বেশি কন্যা সন্তান হলে তাদের হত্যা করা হবে। মা, বোন, স্ত্রী, কন্যার সম্মান করুন।” নারী দিবসের প্রাক্কালে তাঁর একটাই বার্তা, “মা চাইলে কিনা করতে পারে! আমার মা আমাকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন। তাই সমাজের বাইরে গিয়ে মাটি খুঁড়ে আমাকে নিয়ে এসেছিলেন। তাই আমি মা হয়ে মেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়েছি। বড় করেছি। আজ তিন মেয়ে মডেল, অভিনেত্রী। আমাদের সম্প্রদায়ে প্রথম।” এখানেই শেষ নয়। আমাদের গোষ্ঠীর মেয়েরা যাতে লেখাপড়ার সঙ্গে কালবেলিয়া নাচ শিখে স্বনির্ভর হন তাই আমি রাজস্থানের পুষ্করে স্কুল গড়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছি।”

নাচে পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়় মাতিয়ে গেলেন গুলাবো। নিজস্ব চিত্র।

এই শিল্পীকে আমেরিকায় (USA) থাকার জন্য বলা হয়। সেখানে বাড়ি-ঘর-দুয়ার দিয়ে নাচ শেখানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু  মার্কিন মুলুকের সেই প্রস্তাব তিনি ফিরিয়ে দেন। এই ভারতীয় নৃত্যশিল্পী শিক্ষিকা হতে চান না। তিনি তাঁর গুরু-শিষ্য পরম্পরাকে ধরে রাখতে চান। এই কালবেলিয়া নৃত্যকলায় একটা শক্তি আছে তা বোঝাতে চান। একটা ঘরানাকে বাঁচিয়ে রাখতে চান। যা হবে গুলাবো সাপেরোর ঘরানা। সম্প্রতি অযোধ্যা পাহাড়ের তিন প্রজন্মকে নিয়ে মঞ্চ মাতিয়ে দেন। সেখানেই জানান, তাঁর এই ইচ্ছার কথা। ২০১৬ তে তিনি পদ্মশ্রী পাওয়া ছাড়াও ২০২১-এ পান ‘ভারত গৌরব পুরস্কার’। পোষ্য সাপ-ই তাঁর শিক্ষাগুরু। সরীসৃপের দলুনি অনুসরণ করেই ‘সাপুড়ে কন্যা’ আজ প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী। কালবেলিয়া নৃত্যকলায় বিদেশ গিয়েছেন বহুবার। তাঁর নামে ফ্রান্সের একটি রাস্তার নামকরণও হয়। কিন্তু ভিটে মাটিকে আঁকড়ে রেখেই কালবেলিয়াকে এগিয়ে নিতে চান। এগিয়ে নিয়ে যেতে চান এই জনজাতির মেয়েদের।

দেখুন ভিডিও: 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
toolbarHome ই পেপার toolbarup রাজধানী এক্সপ্রেস toolbarvideo ISL10 toolbarshorts রোববার