পিঁয়াজ একটি শীতকালীন সবজি। বাজারে আসে মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে। যদিও এই পিঁয়াজ রাজ্যের চাহিদা পুরোপুরি মেটাতে না পারলেও সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্বল্প খরচে সংরক্ষণ করা যায়। সেপ্টেম্বর পরবর্তী সময়ে রাজ্যে পিঁয়াজের ঘাটতি উল্লেখযোগ্যভাবে পরিলক্ষিত হয়। যা চলে মার্চ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত। ওই সময়ে চাহিদার তুলনায় জোগান কম থাকায় বাজারে পিঁয়াজের দাম আকাশছোঁয়া হয়ে যায়। অথচ কিছু জাত আছে যাকে আমরা বর্ষাকালে চাষ করে শীতের মরশুমের আগে ফসল তুলতে পারি যখন এর বাজার দর বেশ চড়া। স্বাভাবিকভাবে বর্ষার মরশুমে রাজ্যে পিঁয়াজ চাষ করে এই সমস্যা অনেকটা কাটানো যাবে। লিখেছেন বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক তপনকুমার মাইতি।
দৈনন্দিন জীবনে পিঁয়াজ একটি গুরুত্বপূর্ণ সবজি। এলাকা ও উৎপাদনে, আমাদের দেশ চিনের ঠিক পরে। তবে গড় ফলনে আমরা অনেক পিছনে। দেশের মধ্যে মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, গুজরাত, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু প্রভৃতি রাজ্যগুলি পিঁয়াজ উৎপাদনে অনেকটাই এগিয়ে। দেশে ও বিদেশে পিঁয়াজ কাঁচা, অন্যান্য সবজির সঙ্গে রান্না করে ও শুকনো করে গুঁড়ো অবস্থায় এর ব্যবহার আছে। দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার ছাড়াও বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে পিঁয়াজের একটি বিশেষ স্থান আছে।
পিঁয়াজের ভেষজ গুণ:
• নাক বন্ধ, কপাল ভার ও জ্বরজ্বরভাব থাকলে পিঁয়াজের রস নস্যির মত টানলে সর্দি বেরিয়ে যাবে ও জ্বর কমে যায়। সর্দিজনিত মাথা ধরা থাকলেও সেরে যায়।
• পিঁয়াজ রক্তের কোলেস্টেরল কমিয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কাঁচা পিঁয়াজ খেলে মুখ ও দাঁতের অনেক রোগ না হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। রস এক বা দেড় চা চামচ সমপরিমাণ গরম জলে মিশিয়ে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমে।
• ইনসুলিন ব্যবহারকারী ডায়াবেটিস রোগী প্রতিদিন ৫০ গ্রাম করে পিঁয়াজ খেলে ইনসুলিনের মাত্রা ৪০ থেকে কমিয়ে ২০ ইউনিট পর্যন্ত করে। ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
• খুব গরমে যাতায়াতের পথে তেষ্টা মেটাতে জল খাওয়া উচিত নয়। যাতায়াতের শুরুতে পিঁয়াজের রস খেলে তেষ্টা বা পিপাসা কম হয়। পিঁয়াজ উত্তেজক ও যৌনশক্তি বর্ধক হিসাবেও কাজ করে।
• অত্যধিক গরমে অনেকের নাক দিয়ে রক্ত বের হয়। পিঁয়াজের রস নস্যির মতো নিলে রক্ত বন্ধ হবে।
• যারা প্রস্রাবের বেগ থামাতে পারেন না, কিছুদিন পিঁয়াজের রস এক চামচ করে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
• হিক্কা প্রশমনে রস ব্যবহারে উপকার হয়।
[আরও পড়ুন: নতুন সংসদ ভবনে রামায়ণ-মহাভারতকে ‘ইতিহাস’ বলে উল্লেখ, প্রশ্ন তুলল বিরোধীরা]
পিঁয়াজ একটি শীতকালীন সবজি হিসাবে আমরা জানি। আমাদের এই পিঁয়াজ সাধারণভাবে বাজারে আসে মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে। যদিও এই পিঁয়াজ রাজ্যের চাহিদা পুরোপুরি মেটাতে না পারলেও সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্বল্পখরচে সংরক্ষণ করা যায়। এই সময় বাইরের রাজ্যগুলি থেকে কমবেশি জোগানের ফলে পিঁয়াজের বাজার মূল্যে সেরকম কোনও পরিবর্তন লক্ষ করা যায় না। সেপ্টেম্বর পরবর্তী সময়ে রাজ্যে পিঁয়াজের ঘাটতি উল্লেখযোগ্যভাবে পরিলক্ষিত হয়। যা চলে মার্চ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত। তখন পুরোপুরি তাকিয়ে থাকতে হয় অন্যান্য রাজ্যের দিকে যেখানে বর্ষার মরশুমে পিঁয়াজ চাষ হয়।
ওই সময়ে চাহিদার তুলনায় জোগান কম থাকায় বাজারে পেঁয়াজের দাম আকাশছোঁয়া হয়ে যায়। অথচ কিছু জাত আছে যাকে আমরা বর্ষাকালে চাষ করে শীতের মরশুমের আগে ফসল তুলতে পারি যখন এর বাজার দর বেশ চড়া। স্বাভাবিকভাবে বর্ষার মরশুমে রাজ্যে পিঁয়াজ চাষ করে এই সমস্যা অনেকটা কাটানো যাবে। বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে বিগত কয়েক বছর রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে ও নদিয়া, বর্ধমান এবং মুর্শিদাবাদে বর্ষার পিঁয়াজ চাষ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলে দেখা গেছে, এ রাজ্যে এই সময়ে এই চাষ সহজেই করা যাবে। ভাল ফলনে চাষির আয়ও যেমন বেড়ে যাবে, সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যের পিঁয়াজ সমস্যা যা অন্য রাজ্যগুলি থেকে আমদানি করতে হয় তা অনেকটা মেটানো যাবে।