সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রাজরোষে জেলবন্দি রুশ বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনি। এবার ক্রেমলিনের রোষানলে বিখ্যাত রুশ সাংবাদিক তথা টিভি স্টার কেসেনিয়া সবচাক। বুধবার তাঁর মস্কোর বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ বলে খবর। উল্লেখ্য, একসময় কেসেনিয়ার বাবা তথা সেন্ট পিটার্সবার্গের মেয়র আনাতলি সবচাকের ডেপুটি হিসেবে কাজ করেছেন রাশিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। রাজনীতির অনেক মারপ্যাঁচই নাকি সেখানে তিনি শিখেছিলেন।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, সম্প্রতি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দিকে ‘কলিশন কোর্স’ বা সংঘাতের পথে হাঁটছিলেন কেসেনিয়া সবচাক। টেলিভিশনে বহুবার তাঁকে পুতিনের সমালোচনা করতে শোনা গিয়েছে। বিশেষ করে, ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে ক্রেমলিনের বিদেশনীতি ও গণতন্ত্রের ‘কণ্ঠরোধ’ প্রসঙ্গে সরব হয়েছেন তিনি। এহেন পরিস্থিতিতে বুধবার কেসেনিয়ার মস্কোর বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ বলে খবর। তবে তাঁকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। রুশ সরকারি সংবাদ সংস্থা ‘Tass’ ও ‘RIA-Novosti’-র দাবি, দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন কেসেনিয়া। এখন তিনি লিথুয়ানিয়ায়। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ক্ষমতার অপব্যবহার করে শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের ব্ল্যাকমেল করতেন তিনি। এই ভুক্তভোগীদের তালিকায় রয়েছেন খোদ পুতিনের দীর্ঘদিনের সহযোগী তথা সরকারি সংস্থা ‘Rostec corporation’-এর প্রধান সের্গেই চেমেজভ।
[আরও পড়ুন: ‘মোদি মহান দেশপ্রেমিক’, প্রধানমন্ত্রীর প্রশস্তিতে পঞ্চমুখ পুতিন]
এদিকে, রুশ বিরোধী নেতাদের একাংশের মতে, ছদ্মবেশে পুতিনের এজেন্ডা মাফিক কাজ করছেন কেসেনিয়া। তিনিই নাকি পুতিনের ‘মানসকন্যা’। এহেন প্রভাবশালীর বাড়িতে তদন্তকারীদের হানা রুশ রাজনৈতিক মহলে ভূমিকম্প তৈরি করেছে। ‘ক্রেমলিনপন্থী’ রাজনৈতিক বিশ্লেষক সের্গেই মারকভ বলেন, “ওরা যদি পুতিনের রাজনৈতিক গুরুর কন্যাকে গ্রেপ্তার করতে পারে তাহলে কেউই সুরক্ষিত নয়। রুশ এলিট ক্লাসের জন্য এটা অশনি সংকেত এবং স্পষ্ট বার্তা।”
উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গের তৎকালীন মেয়র আনাতলি সবচাকের অধীনে কাজ করেছেন পুতিন (Vladimir Putin)। তাঁকে নিজের গুরু বলেও নাকি মানতেন বর্তমান রুশ প্রেসিডেন্ট। সেই সূত্রে কেসেনিয়াকেও নিজের ‘মানসকন্যা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন পুতিন। কিন্তু রাজনীতির ধাঁধা বড় জটিল। ২০১১-১২ সালে মস্কোয় পুতিন বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন কেসেনিয়া। তবে উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনের জন্য কুখ্যাতিও কম ছিল না তাঁর। ২০১২ সালের পর ভোলবদল করে সাংবাদিক হিসেবে ফের কাজ শুরু করেন তিনি। ২০১৮ সালে রুশ প্রেসিডেন্ট পদের লড়াইয়েও শামিল হয়েছিলেন কেসেনিয়া। কিন্তু এনিয়ে প্রবল আপত্তি জানান রাশিয়ায় বিরোধীদের প্রধান মুখ অ্যালেক্সেই নাভালনি (Alexei Navalny)। তাঁর অভিযোগ, কেসেনিয়াকের কলঙ্কিত জীবন বিরোধীদের ভাবমূর্তীকে নষ্ট করছে।
প্রসঙ্গত, ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে টানাপোড়েন চলছে। রুশ এলিট শ্রেণির একাংশ এই যুদ্ধের বিরুদ্ধে। কারণ, এতে তাঁদের প্রবল বাণিজ্যিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। একইসঙ্গে, ইউক্রেনে লাগাতার ব্যর্থতাকে হাতিয়ার করে পুতিনকে ক্ষমতাচ্যুত করতে উঠেপড়ে লেগেছেন বিরোধীরা। তাই কেসেনিয়া সবচাকের বাড়িতে পুলিশি অভিযান আসলে বিরোধী দমনে পুতিনের মরিয়া চেষ্টার প্রমাণ।