সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সত্যি হল আশঙ্কা! শুরু ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ। শেষ পাওয়া খবর মোতাবেক, শনিবার ইজরায়েলে মিসাইল ও ড্রোন হামলা শুরু করেছে ইরানের সেনাবাহিনী। হামলার কথা স্বীকার করেছে ইজরায়েলি সেনা। ঘনঘন সাইরেনে কাঁপছে ইহুদি দেশটির একাধিক শহর। জেরুজালেমে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গিয়েছে। ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র মাঝ আকাশেই ধ্বংস করতে পালটা মার দিচ্ছে ইজরায়েলের বিখ্যাত 'আয়রন ডোম' মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম। রাতের অন্ধকার ফালা ফালা করছে বারুদের ঝলকানি।
এদিন ইরানের ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ড কোর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, 'ইজরায়েলে বেশকিছু পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্যে ড্রোন ও মিসাইল হামলা চালানো হয়েছে।' বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, সিরিয়ায় ইরানের দূতাবাসে ইজরায়েলি বোমাবর্ষণের বদলা নিতেই এই হামলা। শুধু তাই নয়, তেহরানের হুঁশিয়ারি, ইজরায়েলকে কোনও দেশ মদত করলে মাশুল গুনতে হবে। 'জায়নবাদে'র বিরুদ্ধে এই লড়াই থেকে আমেরিকাকে দূরে থাকার হুঁশিয়ারি দিয়েছে তেহরান।
এদিকে, হামলার কথা স্বীকার করেছে ইজরায়েলি সেনা। এদিন টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন ইজরায়েলি ফৌজের মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি। তিনি বলেন, "ইরান ড্রোন ও মিসাইল হামলা শুরু করেছে। আমরা সমস্ত ধরনের পরিস্থিতির জন্য তৈরি।" সূত্রের খবর, তেহরানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ইজরায়েলকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে ইয়েমেনের সশস্ত্র হাউতি গোষ্ঠীও। তৎপর হয়েছে লেবাননের হেজবোল্লাও। এই হামলার তীব্র নিন্দা করেছে ব্রিটেন ও ফ্রান্স। ইরাক ও সিরিয়ায় ইরানি ড্রোন বা মিসাইল দেখলেই তা ধ্বংস করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ব্রিটিশ রয়্যাল এয়ারফোর্সের টাইফুন যুদ্ধবিমানগুলোকে। ইয়েমেনের কাছে বেশ কয়েকটি ইরানি ড্রোন নিকেশ করেছে মার্কিন ফৌজও। ইতিমধ্যে হোয়াইট হাউসে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক সেরেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এক্স হ্যান্ডেলে ইজরায়েলের পাশে দাঁড়িয়ে যে কোনও হামলা রুখে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
জানা গিয়েছে, তেল আভিভে যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনায় গোটা মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের আগুন ছড়িয়ে পড়তে পারে। এটাই চেয়েছিল হামাস। মধ্যেপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলি যাতে একসঙ্গে ইজরায়েলের উপর হামলা চালায় সেই চেষ্টাই করছিল প্যালেস্তিনীয় জঙ্গিগোষ্ঠীটি। এর মধ্যে আগুনে ঘি পড়ে গত ১ এপ্রিল। সিরিয়ায় ইরানের দূতাবাসে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইজরায়েল। অন্তত ১৩ জন প্রাণ হারান। মৃতদের মধ্যে ছিলেন দুজন ইরানি সেনাকর্তাও। এই হামলার পিছনে ইজরায়েলের ‘হাত’ দেখছে তেহরান। তার পর থেকেই ইজরায়েলকে লাগাতার হুমকি দিয়ে যাচ্ছিল ইরান।
[আরও পড়ুন: ‘খবরদার!’, ইজরায়েলের বুকে হামলার আশঙ্কা নিয়ে ইরানকে কড়া হুঁশিয়ারি বাইডেনের]
বিশ্লেষকদের মতে, ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধের ঘোলা জলে মাছ ধরতে তৎপর হয়েছে ইরান (Iran)। হামাসকে মদত জোগাচ্ছে তেহরান। দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি সাফ বলেছেন, হামাসকে নিয়ে তিনি গর্বিত। লেবাননের সশস্ত্র হেজবোল্লা গোষ্ঠীও রাইসি সরকারের অঙ্গুলিহেলনে চলে। ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে মধ্যপ্রাচ্যে সেকেন্ড ফ্রন্ট খুলতে হামাসকে ব্যবহার করছে রাশিয়াও। ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন ফৌজের সঙ্গে লড়াইয়ে বিভিন্ন মিলিশিয়াগুলোকে হাতিয়ার ও টাকা জোগাচ্ছে ইরান। ইজরায়েল-হামাস সংঘাতকে বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে দিতেই এই ষড়যন্ত্র।
[আরও পড়ুন: এলোপাথাড়ি ছুরির কোপ, গুলিবৃষ্টি, উন্মত্ত যুবকের হামলায় সিডনিতে মৃত অন্তত ৬!]