সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রতিবেশী বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে চাপ বাড়ল নয়াদিল্লির উপর। একদিকে, ‘বন্ধু’ শেখ হাসিনাকে নিরাপদে ভারতে আনা গেলেও তাঁকে ১৯৭৫ সালে ইন্দিরা গান্ধী যেমন ‘রাজনৈতিক আশ্রয়’ দিয়েছিলেন, এবারও তেমন কোনও পদক্ষেপ করা হবে কি না, তা নিয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে জানা যাচ্ছে, হাসিনার নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত ভারতেই থাকবেন তিনি।
সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ দিল্লির কাছে হিন্ডন সামরিক বিমানঘাঁটিতে শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন রেহানাকে নিয়ে অবতরণ করে একটি সিজে-১৩০ বিমান। শোনা যাচ্ছিল, জ্বালানি নিয়ে সেটি রওনা দেবে ব্রিটেনের উদ্দেশে। কিন্তু তারপর শোনা যায়, হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে রাজি হয়নি ব্রিটেন। ফলে আপাতত ভারত ছাড়তে পারেননি হাসিনারা। কিন্তু তিনি অন্য কোনও দেশে যাবেন নাকি ভারতেই থাকবেন, তা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে বিদেশমন্ত্রক। সোমবার বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটি বৈঠক করে। অন্যদিকে, সংসদ ভবনে বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর সঙ্গে কথা বলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর। কিন্তু ভারতের অবস্থান কী, তা রাত পর্যন্ত স্পষ্ট হয়নি। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে রয়েছেন কয়েক হাজার ভারতীয়। বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর সাম্প্রতিক ভারত বিরোধিতার আবহে তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হচ্ছে। তাই সবদিক ভেবে মেপে পা ফেলতে চাইছে নয়াদিল্লি। সাউথ ব্লকের সূত্র জানিয়েছে, “দেশে বর্তমানে সংসদের অধিবেশন চলছে। ফলে এ ব্যাপারে যা বলার সরকার সংসদেই বলবে, কিংবা বিদেশমন্ত্রক বিবৃতি দেবে। আপনারা অপেক্ষা করুন।”
[আরও পড়ুন: ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যা, ‘আগস্ট-বিপ্লবে’ই দেশ ছাড়লেন মুজিবকন্যা]
বিদেশমন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার সন্ধ্যায় হাসিনার সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল দেখা করেছেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ইনটেলিজেন্স ব্যুরোর প্রধান তপন ডেকাও। হাসিনার সঙ্গে তাঁরা বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন। বাংলাদেশে ভারত বিরোধী মনোভাব কতটা মাথা চাড়া দিয়েছে, সে বিষয়ে খুঁটিয়ে জানতে চান ডোভাল, ডেকারা। বাংলাদেশে আটকে থাকা ভারতীয়দের বিষয়েও কথা হয়েছে সেই বৈঠকে। সাউথ ব্লক সূত্রের খবর, সেই বৈঠকেই হাসিনাকে আপাতত ভারতে না রেখে বাইরে কোথাও পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে বার্তা দিয়ে দেন ডোভাল। যদিও যত দিন না অন্য কোথাও তাঁর নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত ভারতেই থাকবেন তিনি। এদিকে গতকাল জানা গিয়েছিল, ব্রিটেনে আশ্রয় নিতে চেয়েছিলেন হাসিনা। তবে তাতে রাজি হয়নি ব্রিটেন। অবশ্য সে দাবি খারিজ করে হাসিনা পুত্র জানিয়েছেন ব্রিটেনের কাছে আশ্রয় চাননি তাঁর মা।
[আরও পড়ুন: বাংলাদেশ ইস্যুতে মোদি-জয়শংকর জরুরি বৈঠক, বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে কী বললেন রাহুল?]
বিদেশমন্ত্রকের সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্করের বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে দীর্ঘ বৈঠক হয়। ঠিক হয়, ভারত সেই পদক্ষেপই করবে যাতে দেশ এবং দেশের মানুষের কোনও ক্ষতি না হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে ভারত বিরোধিতার সুর সপ্তমে। হাসিনার বিরুদ্ধে যে জনরোষ তৈরি হয়েছে, ভারতের বিরুদ্ধে আক্রোশ তার থেকে কম নয়। এই পরিস্থিতিতে হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দিলে বাংলাদেশে ভারতের বিরুদ্ধে আরও গণক্ষোভ তৈরি হতে পারে। তাতে বাংলাদেশে আটকে থাকা প্রায় ছয় হাজার ভারতীয়দের বিপদ বাড়তে পারে। নিজের দেশের নাগরিকদের নিরাপদে ভারতে ফিরিয়ে নিয়ে আসাই এখন ভারত সরকারের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ। বিদেশমন্ত্রকের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে থাকা ভারতীয়দের উদ্দেশ্যে নির্দেশিকা জারি করে দ্রুত ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। চালু করা হয়েছে হেল্পলাইন নাম্বরও। বাংলাদেশের পরিস্থিতির উপর লাগাতার নজর রাখছে নর্থ ব্লক ও সাউথ ব্লকের কর্মকর্তারা। বিদেশমন্ত্রকের বাংলাদেশ ডেস্কে সারারাত কাজ চলেছে। বাতিল করা হয়েছে সমস্ত ছুটিও।