সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ফের ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় রক্তাক্ত রাশিয়া। একাধিক ধর্মীয় স্থানে বন্দুকবাজের হামলায় মৃত্যু এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের। রবিবার রাশিয়ার দাগেস্তান প্রদেশে হামলা চালায় বন্দুকবাজের দল। মনে করা হচ্ছে, এই নাশকতার নেপথ্যে রয়েছে ইসলামিক স্টেট। বিশ্বজুড়ে ইসলামি শাসন কায়েম করা বা গ্লোবাল জেহাদের বিষ ছড়াতেই এই ষড়যন্ত্র।
গতকাল গুলির শব্দে কেঁপে ওঠে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দাগেস্তান প্রদেশের দুটি শহর--ডেরবেন্ট ও মাকাচাকালা। এই দুই শহরেই বড় সংখ্যক খ্রিস্টান ও ইহুদিদের বাস। সেখানেই একটি গির্জা ও সিনাগগে হামলা চালায় জেহাদিরা। বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মীর সঙ্গে প্রাণ হারিয়েছেন ডেরবেন্টের অর্থডক্স চার্চের যাজক নিকোলাই কোতেলনিকোভ। খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের উৎসব পেন্টারকস্টের দিনই এহেন হামলায় ইসলামিক স্টেট অপারেশনের ছাপ রয়েছে বলেই মনে করছেন অনেকে।
দাগেস্তানের প্রশাসক সের্গেই মেলিকোভ জানিয়েছেন, নিহতদের আত্মার শান্তি কামনায় সোমবার থেকে তিনদিনের জাতীয় শোক পালন করা হবে। তবে জল্পনা উসকে হামলার নেপথ্যে 'বিদেশি শক্তির' হাত রয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। অর্থাৎ ঘুরিয়ে ইউক্রেনের দিকেই আঙুল তুলেছেন তিনি। তবে এনিয়ে রাশিয়ার অন্দরের দ্বন্দ্ব রয়েছে। অধিকৃত ইউক্রেনের রুশ জাতীয়তাবাদী নেতা দিমিত্রি রগোঝিনের কথায়, "সবকিছুর দায় ইউক্রেন ও ন্যাটো জোটের উপর চাপালে হিতে বিপরীত হবে। এটা আমাদের বুঝতে হবে।"
ইউক্রেন যুদ্ধের মাঝেই এহেন সন্ত্রাসী হামলা ইতিমধ্যে কাঁটাছেঁড়া শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। বহুদিন ধরেই দাগেস্তানে মাথাচারা দিয়েছে ইসলামিক স্টেট। সক্রিয়ভাবে কাজ করছে জেহাদিদের স্লিপিং সেলগুলো। পার্শববর্তী চেচেনিয়া থেকেও মদত আসছে। এমনই খবর ছিল রুশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে। ফলে বিশ্লেষকদের ধারণা, এই হামলার পিছনেও হাত রয়েছে আইএস জঙ্গি সংগঠনের। যদিও এখনও পর্যন্ত কেউ হামলার দায় স্বীকার করেনি।
[আরও পড়ুন: দেশে ‘পলাতক’, বিদেশে ছেলের বিয়েতে খোশমেজাজে ‘ঋণখেলাপি’ বিজয় মালিয়া!]
উল্লেখ্য, চলতি বছরের মার্চ মাসেই মস্কোর কনসার্ট হলে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। সেই হামলার দায় স্বীকার করেছিল আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেট (খোরাসান)। ফলে এই ঘটনাতেও যে তাদের হাত রয়েছে তা উড়িয়ে দিচ্ছে না গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এই ঘটনা ঘিরে স্বভাবতই আতঙ্কের পরিবেশ উত্তর ককেশাসের ক্যাস্পিয়ান সাগর লাগোয়া দাগেস্তানে। মুসলিম প্রধান এই এলাকা রাশিয়ার অন্যতম দরিদ্র অঞ্চল। গত কয়েক বছরে বার বার জঙ্গি হামলার শিকার হয়েছে।
এদিকে, গৃহযুদ্ধে রক্তাক্ত সিরিয়া। বেশ কয়েক বছর ধরেই সিরিয়া প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বাহিনীর সঙ্গে লড়াই চলছে বিদ্রোহীদের। আর বাশার আল আসাদের সমর্থনে রয়েছে রাশিয়া ও ইরান। পালটা বিদ্রোহী বাহিনী ‘সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট’কে মদত দিচ্ছে আমেরিকা। ইসলামিক স্টেটের পতনের পর সিরিয়ায় শরণার্থীদের রক্ষা ও কুর্দ জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানের নামে সিরিয়ার একটি অংশ দখল করেছে তুরস্ক। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পরিস্থিতির অনেকটাই বদল ঘটেছে। ফের সিরিয়ায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে ইসলামিক স্টেট। যাঁদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে রুশ ফৌজ। কড়া হাতে দমন করা হচ্ছে জঙ্গিদের। ফলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সিরিয়া ইস্যুতে রাশিয়ার সমর্থনের কারণেও বারবার সন্ত্রাসী হামলায় রক্ত ঝরছে রাশিয়ায়।