সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রজনীকান্ত বলেছেন, তিনি সিন্ধুর ফ্যান৷ সলমন খান বলছেন, সিন্ধুর সঙ্গে তাঁর যে একটা ছবি আছে ভেবেই তিনি গর্বিত৷ অমিতাভ বচ্চন বলছেন, এভাবে গর্বিত করার জন্য ধন্যবাদ সিন্ধু৷ তারকারা তো ছাড়, গোটা দেশ বলছে একই কথা৷ বলছে, আর ‘বেটি বাঁচাও’ বলে প্রচার করা নয়, এবার বেটিরাই দেশকে বাঁচাবে৷
মাত্র কটা দিন৷ খেলাটা যেন উল্টোদিকে ঘুরে গিয়েছে৷ অথচ এ দেশের ক্রীড়া সংস্কৃতি তো এমনটা নয়৷ এখানে ক্রিকেটার বল বাউন্ডারির বাইরে পাঠালে লাস্যময়ী ভঙ্গিতে নেচে ওঠেন চিয়ার লিডাররা৷ বলা বাহুল্য, তাঁরা কখনও পুরুষ হন না৷ খেলার সঙ্গে বিনোদন মিশিয়ে যে ককটেল ক্রীড়া সংস্কৃতি প্রমোট করে কর্পোরেট দুনিয়া, সেখানে নারীর ভূমিকা এই চটুল বিনোদনেই সীমাবদ্ধ৷ নাহ, যতই ক্রিকেট হোক, ঝুলন গোস্বামীদের নিয়ে এই দেশে কোনও আইপিএল হয় না৷ ফলত এদেশের ওলিম্পিকের গুডউইল অ্যাম্বাসাডার দীপার নাম দীপিকা বলবেন তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই৷ শুধু সলমন খান কেন, আমরা ক’জনই বা জানতাম দীপা, সাক্ষীদের কথা! শোভা দে-র টুইট নিয়ে যতই জলঘোলা হোক না কেন, একের পর এক হারের মুখে দাঁড়িয়ে, আমরাও কি মনে মনে তেমন কথাই বলিনি? আসলে এটাই আমাদের অভ্যাস৷ দীপা কোথায় কীভাবে প্র্যাকটিস করতেন আমরা জানি না, সিন্ধুর কাছে তিনমাস তার ফোন ছিল কি না, তা আমরা জানতেও চাই না অথচ রণবীর-ক্যাটরিনা কতবার প্রেম নিয়ে লোফালুফি করেছেন তা আমাদের মুখস্থ৷ আসলে এটাই দস্তুর৷ কর্পোরেট সংস্কৃতিতে যেখানে পুঁজি, সেখানে বিজ্ঞাপন৷ ফলত তার প্রচার অনেক বেশি৷ কিন্তু সেই প্রচারের আলোও আসলে নারীকে পণ্যই করে তুলেছে৷ ‘কালা চশমা’র নাচ আর চিয়ার লিডারের শরীরি ভঙ্গির মধ্যে স্ট্যাটাসের তফাত থাকতে পারে, মূলগত উদ্দেশ্য কিন্তু একই৷
এহেন সংস্কৃতিতে বিগত কয়েকদিনে যেন নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করেছেন দীপা, সাক্ষী, সিন্ধুরা৷ একটি চলতি ব্যবস্থার ভরকেন্দ্র যেন তাঁরা উল্টোদিকে ঘুরিয়ে দিতে পেরেছেন৷ যেখানে ক্রিকেট তারকা থেকে রুপোলি দুনিয়ার অধিবাসীরা এক কথায় কুর্নিশ জানাচ্ছেন ভারতীয় নারীশক্তিকে৷ বলছেন, আর বেটি বাঁচাও নয়, এবার বেটিরাই বাঁচাবেন দেশকে৷ সে তো চিরকালই এ দেশ আওড়ে এসেছে, শক্তিরূপেণ সংস্থিতা৷ আবার এদেশেই মরতে হয়েছে নির্ভয়াকে৷ তবে কি সত্যি সেই দিনে বদল এনে দিতে পারলেন দীপা, সিন্ধুরা? সন্দেহ নেই ক্রিকেটের গ্ল্যামার থেকে তাঁরা দেশবাসীর মুখ ঘুরিয়ে দিতে পেরেছেন৷ যে ক্রীড়া সংস্কৃতি বিনোদনের মোহে ভুলিয়ে দেয় খেলার সৌন্দর্য, সেখানে দাঁড়িয়ে এরা দেখিয়ে দিতে পেরেছেন, দীপার ভোল্টের ওই সৌন্দর্য কিংবা সিন্ধুর স্ম্যাশের কাছে কর্পোরেট প্রোমোটেড বিনোদনও নতজানু৷ এটাই তাঁদের কৃতিত্ব৷ আর আজ তাই সাক্ষীর পদক শুধু হরিয়ানায় কন্যাভ্রূণ হত্যার বিরুদ্ধে থাপ্পড় নয়, থাপ্পড় এই নারীকে পণ্য করে তোলা সংস্কৃতির বিরুদ্ধেও৷
The post বিশ্বে ভারতীয় নারীর জয়, তবু নাচবে চিয়ার লিডার! appeared first on Sangbad Pratidin.