সুকুমার সরকার,ঢাকা: আইএস যোদ্ধা হিসেবে জীবনভর ইরাকের কারাগারে বন্দি রইল বাংলাদেশের নাগরিক সইফুল্লা ওজাকি৷ আপাতত ইরাকের কুর্দিস্তান অঞ্চলের সুলেমানিয়ার একটি কারাগারে রয়েছে৷ মাস দুই আগে কুর্দিস্তান টেররিজম গ্রুপের কাছে সে আত্মসমর্পণ করেছিল৷পরবর্তী সময়ে তার সম্পর্কে খোঁজখবর চালিয়ে জানা গিয়েছে, আইএসের হয়ে যুদ্ধ করার ফাঁকে বাংলাদেশ থেকে সদস্য সংগ্রহ করে সিরিয়ায় নিয়ে যাওয়ার কাজ করত সে৷ তার সম্পর্কে আরও অনেক চমকপ্রদ তথ্য তদন্তকারীদের হাতে এসেছে৷
[আরও পড়ুন: সৌদি যাওয়ার পথে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে আটক ৫ রোহিঙ্গা]
সিরিয়ার বাঘুজে আইএসের শেষ ঘাঁটির পতন হয় মাস দুয়েক আগে৷ আত্মসমর্পণকারী জঙ্গিদের মধ্যে অন্তত ৯ জন বাংলাদেশি৷ ওজাকি ছাড়া বাকি দু’জন – জুনায়েদ হাসান খান এবং তাহমিদ শফি৷জানা গিয়েছে, ওজাকি বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবেড়িয়ার নবীনগরের কড়ই গ্রামের বাসিন্দা, আদতে হিন্দু পরিবারের ছেলে৷ আর আসল নাম সুজিত দেবনাথ৷ ২০০১ সালে সিলেট ক্যাডেট কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে৷ পরের বছর জাপান সরকারের বৃত্তি নিয়ে সেখানকার এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটিতে পড়তে যায়৷ পরিবার সূত্রে খবর, জাপানে গিয়েই সে ধর্ম পরিবর্তন করে সইফুল্লা ওজাকি নাম গ্রহণ করে৷ সেখানে জাপানি মেয়েকে বিয়ে করে এবং তিন সন্তানের জনক হয় ওজাকি৷ ২০১১ সালে পিএইচডি শেষ করার পর রিতসুমেইকান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেয়৷ ২০১৫ সালে সপরিবারে জাপান থেকে সিরিয়া চলে যায়৷ এদিকে, দীর্ঘ ১ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপস্থিতির জেরে তাকে বরখাস্ত করা হয়৷
পরে সিরিয়াতেই এক বিমান হামলায় তাঁর জাপানি স্ত্রী এবং দুই সন্তান মুহাম্মদ ও উম্মে সিরিয়ায় নিহত হয়। তাঁর আরও তিন সন্তান – ৭ বছরের ঈসা, ৩ বছরের ইউসুফ ও মাত্র ১ বছরের সারাহ এখনও সিরিয়ায়। জঙ্গি বিষয়ক তদন্তের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশ থেকে যারা সিরিয়া গেছে, তাদের বড় অংশই গেছে সইফুল্লা ওজাকির মাধ্যমে৷
[আরও পড়ুন: ধর্ষণের পর যুবতীর নগ্ন ছবি স্বামীর কাছে পাঠাল অভিযুক্ত]
কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মণিরুল ইসলাম এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন, ২০১৫ সালে উত্তরা থেকে আমিনুল ইসলাম বেগকে গ্রেপ্তারের পর ওজাকির নাম তাঁরা জানতে পারেন। সে কয়েকজন লোককে এ দেশ থেকে সিরিয়া যেতে সহযোগিতা করেছিল। ২০১৫ সালের ২৪ মে উত্তরা পশ্চিম থানায় সইফুল্লা ওজাকি, বরিশাল ক্যাডেট কলেজের প্রাক্তন ছাত্র আমিনুল ইসলাম বেগ-সহ আটজনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়। গত ২৫ মার্চ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ওই মামলার অভিযোগপত্র দেয় কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। বাংলাদেশের বিভিন্ন ভাল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত অবস্থায় পরই ওজাকির দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে আইএসে যোগ দেয়৷ ফরেন টেররিস্ট ফাইটার্স বা এফটিএফ-এর কাছে যে তালিকা রয়েছে, তাতে সিরিয়ায় যাওয়া বাংলাদেশি নাগরিকের সংখ্যা ৪০ জনের বেশি। তারা মূলত ২০১৪-১৫ সালে দেশ ত্যাগ করে।
The post আইএস যোদ্ধার শাস্তি, ইরাকের কারাগারে আজীবন বন্দি বাংলাদেশি মেধাবী শিক্ষক appeared first on Sangbad Pratidin.