দুলাল দে, মারগাঁও: অষ্টম এডিশনের পরেও আইএসএলের (ISL) ফ্র্যাঞ্চাইজিরা যেমন এখনও লাভের মুখ দেখেনি, একই অবস্থা আইএসএলের এফএসডিএলেরও। তার উপর করোনা আবহে পর পর দু’বছর বায়োবাবল রাখতে গিয়ে স্বাস্থ্য খাতে অতিরিক্ত ৪০ কোটি টাকা খরচ হওয়ার পর, স্বাভাবিক ভাবেই আইএসএল থেকে আর্থিক লাভ পাওয়ার কোনও জায়গাতেই নেই এফএসডিএল (FSDL)।
পুরো ব্যাপারটাকে দু’ভাবে দেখছে এফএসডিএল। প্রাথমিক লক্ষ্য, এই মুহূর্তে বিনিয়োগ করে ধীরে ধীরে আইএসএলটাকে একটা লাভজনক ব্র্যান্ডে পরিণত করা। দ্বিতীয়ত ভারত জুড়ে ফুটবলের প্রসার ঘটানো, পরিকাঠামোর উন্নতি করা, পুরো ব্যাপারটাকেই সামাজিক উন্নয়নের ব্যাপার হিসেবে দেখতে চাইছে রিলায়েন্স। যে কারণে, রিলায়েন্স কর্তৃপক্ষ ঠিক করে ফেলেছে, রিলায়েন্স অ্যাকাডেমি থেকে সমাবর্তন শেষে কোনও শিক্ষার্থীকে আইএসএলের কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজি সই করাতে চাইলে, কোনও অর্থ দাবি করা হবে না।
[আরও পড়ুন: স্নায়ুর চাপের কাছেই হার, অল ইংল্যান্ড ফাইনালে স্বপ্নভঙ্গ লক্ষ্য সেনের]
অন্যান্য পেশাদার অ্যাকাডেমিতে যেরকম শিক্ষান্তে নিজেদের ফুটবলারদের কোনও পেশাদার ক্লাবে বিক্রি করা হয়, এখানে পুরো ব্যাপারটা উল্টো। নভি মুম্বইতে যে কোনও আধুনিক অ্যাকাডেমির মতো বিদেশি কোচের কাছে অনুশীলন, ধীরু ভাই আম্বানীর স্কুলে পড়ানো থেকে শুরু করে যাবতীয় আধুনিক সুযোগ সুবিধা দেওয়ার পরেও রিলায়েন্স কর্তৃপক্ষ ঠিক করেছে, অ্যাকাডেমির ছেলেদের অন্য ক্লাবে দেওয়ার সময় কোনও অর্থ দাবি করা হবে না। পুরোটাই ভারতীয় ফুটবলের উন্নয়নের জন্য কাজ করা হবে। এটা নাহয় অ্যাকাডেমি। ছোটদের ব্যাপার। কিন্তু আইএসএল? যেখানে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে। যেখানে ফ্র্যাঞ্চাইজি গুলোও যদি আর্থিক লাভের মুখ না দেখে কতদিন টানতে পারবে?
অনেকে মনে করেন, স্টার যদি এফএসডিএলের শেয়ার হোল্ডার না হয়ে সম্প্রচার স্বত্ত্ব কিনত, তাহলে ক্লাবগুলির কাছেও সেন্ট্রাল স্পনসরশিপ থেকে অনেক বেশি টাকা আসতো। আবার এফএসডিলের অনেকে বলছেন, স্টার সম্প্রচার স্বত্ত্ব কিনলে, বিজ্ঞাপন বাবদ যে টাকাটা ওঠাত, সেটা আবার এফএসডিএলের সঙ্গে ভাগ করত না। এখন শেয়ার হোল্ডার হওয়ার জন্য, ম্যাচ সম্প্রচার থেকে বিজ্ঞাপন বাবদ যে টাকাটা ওঠে, সেটা এফএসডিলের সঙ্গে শেয়ার করতে হয়। সেখান থেকেই সেন্ট্রাল স্পনসরশিপ বাবদ মরশুম শেষে কিছু টাকা ফেরত পায় ক্লাবগুলি। তবে এখানে এসে যা জানলাম, তাতে স্টারের সঙ্গে আইএসএলের ম্যাচ সম্প্রচার চুক্তি ২০২৫এ শেষ হয়ে যাচ্ছে। তার আগেই নিজেদের স্পোর্টস চ্যানেল খুলছে ‘জিও’।
ফলে ২০২৫এর পর আইএসএল নিজেদের স্পোর্টস চ্যানেলেই সম্প্রচার করবে এফএসডিএল। চেষ্টা হচ্ছে, এবারের কাতার বিশ্বকাপের আগেই জিওর স্পোর্টস চ্যানেল খুলে ফেলতে। তার আগে আই এসএলকে ভার্চুয়ালি বিভিন্নভাবে বিক্রি করার চেষ্টা চলছে। চেষ্টা হচ্ছে ‘এনএফটি’ মার্কেটে আইএসএল ব্র্যান্ডকে প্রতিষ্ঠিত করার। তারই অঙ্গ হিসেবে লন্ডনের ‘তেরা ভার্চু’-র সঙ্গে মৌ চুক্তি সম্পন্ন করল এফএসডিএল। লন্ডনের সংস্থা ‘তেরা ভার্চু’ হচ্ছে বিশ্বের প্রথম ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, যাদের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ক্লাবের ফ্যানরা তাদের পছন্দের ক্লাবের অথবা ফুটবলারের কিছু ডিজিটাল মুহূর্তের স্বত্ত্বাধিকারী হতে পারে।
আইএসএলের সঙ্গে তেরা ভার্চুর চুক্তি হওয়ার পর কোনও এটিকে মোহনবাগান (ATK Mohun Bagan) সমর্থক যদি মনে করেন, এসসি ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে রয় কৃষ্ণর গোলের ভিডিও ক্লিপিংসটা কিনে নিয়ে শুধু নিজের কাছে রেখে দেবেন, এবার থেকে তেরা ভার্চুর মাধ্যমে নির্দিষ্ট ক্লিপিংসটা কিনে নিতে পারবেন তিনি। কেউ দেখতে চাইলে আপনার ডিজিটাল ওয়ালে গিয়ে দেখতে হবে। এভাবেই আইএসএল নিয়ে মাঠের বাইরে ডিজিটাল মার্কেটিংয়েও জোর দিচ্ছে এফএসডিএল। লক্ষ্য একটাই, আর্থিক ক্ষতি কমানো।