shono
Advertisement

ভোট প্রচারের সময় আইএস জঙ্গিদের নিশানায় ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী

বইমেলায় প্রকাশিত নতুন বইয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য৷ The post ভোট প্রচারের সময় আইএস জঙ্গিদের নিশানায় ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 08:49 AM Feb 03, 2017Updated: 03:25 AM Feb 03, 2017

কিংশুক প্রামাণিক: বিধানসভা ভোটের সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খুন করার চক্রান্ত হয়েছিল৷ মুখ্যমন্ত্রীকে হত্যার ছক কষেছিল আইএস জঙ্গিরা৷ সেই জন্য ভোটের প্রচারের সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়৷ তবে কোনও ধর্মীয় বিরোধ নয়৷ প্রশাসনের শীর্ষ পদে মহিলাদের অপছন্দ মৌলবাদী জঙ্গিদের৷ তাই তারা চায়নি দ্বিতীয়বার বাংলার মুখ্যমন্ত্রী পদে বসুন মমতা৷

Advertisement

এই চাঞ্চল্যকর খবর নিজের নতুন বইতে লিখেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এবার বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে ‘মানুষের জয় ২০১৬’ বইটি৷ ভোটের সময় প্রচারপর্বে প্রায় আড়াই মাসের ঘটনাক্রম নিজের ডায়েরিতে লিখে রেখেছিলেন নেত্রী৷ তারই সংকলন এই নতুন বইটি৷ এক কথায় এটি ভোটের দলিলও বলা যেতে পারে৷ সর্বস্তরের বাধার প্রাচীর ডিঙিয়ে কীভাবে বিরোধীদের পর্যুদস্ত করে ২১১ আসনে তিনি জয় ছিনিয়ে আনলেন, তা জানা যাবে বইটি পড়লে৷ জানা যাবে, দিল্লি থেকে কলকাতা, কত রকম বিরোধিতার মুখে তিনি পড়েছিলেন৷ প্রতিটি দিন, প্রতিটি ঘটনা, প্রতিটি পদক্ষেপ মমতা লিখেছেন৷ এমনকী বিরোধীরা কী বলছেন, নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপ, অফিসারদের বদলি, তাও বাদ দেননি দলিল থেকে৷ আছে সারদা, নারদা সব৷

(মনোজের বিপুল সম্পত্তির হদিশ, রাজ্যকে চিঠি ইডির)

৫ মার্চ ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন৷ কিছুক্ষণের মধ্যে মমতাও প্রকাশ করে দিয়েছিলেন ২৯৪ আসনে তাঁর প্রার্থী তালিকা৷ সেদিন থেকেই শুরু তৃণমূলনেত্রীর ডায়েরি লেখা৷ ২১ মার্চ তিনি হাওড়ায় পদযাত্রা করেন৷ সবে তুঙ্গে উঠতে চলেছে প্রচার৷ কিন্তু ওই দিনের ডায়েরির পাতায় তিনি বোমা ফাটিয়েছিলেন৷ তিনি লিখেছেন, “নিরাপত্তা বেষ্টনী বাড়ল আমার চারপাশে৷ শুনছি আইএস জঙ্গিরা প্রশাসনিক বা সরকারি প্রধান হিসেবে কোনও মহিলাকে দেখতে চায় না, ফলে আমার প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে৷” তিনি যে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির জন্য আইএস কেন, আরএসএসেরও হুমকির ভয় পান না, সেই বার্তা দিয়েই মুখ্যমন্ত্রী তাঁর কলমে অতঃপর কারও নাম না করেই লিখেছেন, “বিরোধ আর বিভেদের রাজনীতি এখন আর শুধু দেশে বা রাজ্যেই নয়, সারা বিশ্বে ব্যাপ্ত হয়েছে৷ এর চেহারা অতি হিংস্র৷ প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবেই৷”

মমতাকে হত্যার চেষ্টা নতুন নয়৷ যুব কংগ্রেস নেত্রী থাকার সময় হাজরা মোড়ে তিনি মারাত্মকভাবে জখম হন৷ তারপর ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই থেকে ২০০৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সিঙ্গুর বিডিও অফিসে পুলিশের হাতে আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ, বারে বারে সামনে এনে দিয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্তের বিতর্ক৷ এমনকী মাওবাদীদের হিটলিস্টে যে এক নম্বরে তাঁর নাম ছিল, তাও আর গোপন নেই৷ এবার সেই তালিকায় সংযোজিত হল আইএস জঙ্গিদের নামও৷ মনে রাখতে হবে, এ রাজ্যে বাংলাদেশ সীমান্তের সুযোগ নিয়ে আইএস জঙ্গিদের আনাগোনা আর গোপন নেই৷

বিশেষ করে মুসার মতো জঙ্গির ধরার পরার পর সব স্পষ্ট৷ সেই প্রেক্ষিতে ভোটের সময় জঙ্গির হুমকি বাড়তি মাত্রা পেয়েছিল৷ মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বইতে লিখলেও এ নিয়ে অবশ্য আর মুখ খুলতে চাইছেন না কোনও প্রশাসনিক কর্তা৷ তাদের বক্তব্য, এটা প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ বিষয়৷ এই বই পড়তে গিয়ে মনে পড়ছিল প্রচারের সময়ের ঘটনা৷ প্রতিদিন তাঁর কর্মসূচি কভার করার অভিজ্ঞতা থেকে মনে হচ্ছে, কোনও দিনই তাঁকে কিন্তু মৃত্যুভয়ে বিচলিত হতে দেখা যায়নি৷ মনেও হয়নি তাঁর নিরাপত্তার বেষ্টনী বেড়েছে৷ দু’শোর কাছাকাছি কর্মসূচি করেছেন৷ জেলায় কপ্টার সফর করলেও প্রতিদিনই তিনি ব্যারিকেড ডিঙিয়ে জনসংযোগ করেছিলেন৷ কাউকে তিনি বুঝতে দেননি, খুনের ষড়যন্ত্র মাথায় নিয়ে ঘুরছেন৷ মানুষের ভিড়ে হারিয়ে গিয়েছেন অহরহ৷ তাৎপর্যপূর্ণ হল, ভোটের ফল প্রকাশের দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “এবার আমি শান্তিতে মরতেও পারি৷” তাঁর সেই বক্তব্য যে ইঙ্গিতবাহী ছিল, তা এখন বোঝা যাচ্ছে৷

রাজনৈতিক মহল মনে করছে, মমতা সেদিনের ঘটনাগুলি নির্বাচনী সভায় না বলে তুলে রেখেছিলেন বইয়ে লিখবেন বলেই৷ ইদানীং তিনি বিজেপির বিভেদের রাজনীতির বিরুদ্ধে সরব৷ সেই প্রেক্ষিতে তিনি যেভাবে আইএস মৌলবাদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তার গুরুত্ব অপরিসীম৷ বরাবরের মতো দে’জ পাবলিশিং মুখ্যমন্ত্রীর অনেকগুলি বই প্রকাশ করেছে এবার৷ তারমধ্যে যেমন নোটবন্দি নিয়ে বই আছে তেমনই আছে সিঙ্গুর জয়ের কাহিনিও৷ বলা যেতে পারে সব ক’টি বইয়ের বিক্রির প্রতিযোগিতা হচ্ছে৷ কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে গিয়েছে বোধহয় ভোটের সময়ের এই সংগ্রামের দিনলিপি৷ নিজের জীবনের কঠিনতম ভোট জিততে সব শক্তির বিরুদ্ধে যে পরিশ্রম ও বুদ্ধিমত্তার আশ্রয় নিতে হয়েছে তাঁকে তা বইটি না পড়লে জানা যাবে না৷ সব কিছুর পর তিনি কৃতিত্ব দিয়েছেন মানুষকেই৷ তাঁর মতে, এই জয় সম্ভবই হত না, যদি না মানুষ পাশে থাকত৷ কারণ, তাঁর উন্নয়নের স্লোগানকে মুছে দিতে কংগ্রেস সিপিএম জোট নয়, বিজেপিও একজোট হয়েছিল৷ ২০ মে তিনি কলম থামিয়েছেন৷ ৭৪ দিনে পূর্ণ ডায়েরির পাতা৷ মানুষ তাঁকে দ্বিতীয়বার বসিয়ে দিয়েছে নবান্নে৷ ছুঁতে পারেনি কোনও মৌলবাদী শক্তিও৷

(প্রকাশিত হল প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ফল)

The post ভোট প্রচারের সময় আইএস জঙ্গিদের নিশানায় ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement