সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: একে করোনা, তার উপর সংঘর্ষ। ইজরায়েল (Israel)-প্যালেস্তাইনের সংঘর্ষ বিরতির পরই তাই প্রশ্ন উঠছে, গত ১১ দিনে ক্ষতির পরিমাণ কত? সেই হিসাব এখন কষছে দু’দেশের নেতারা। বৃহস্পতিবার রাতেই সংঘর্ষ বিরতিতে সম্মতি জানিয়েছে দু’দেশ। শুক্রবার থেকে তা কার্যকর হয়েছে।
নিক্তির হিসাবে মাপলে ক্ষতির পরিমাণ অবশ্যই বেশি প্যালেস্তাইনের(Palestine)। এদিন সকালেও গাজায় রাস্তায় সেই ছবিই স্পষ্ট। বিভিন্ন মহল্লার অলি-গলিতে এখনও ভেঙে-দুমড়ে পড়ে আছে বাড়ি। জীবনের বেঁচে থাকার জন্য রসদ সংগ্রহের কাজ চলছে সেই ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকেই। এই করোনা অবস্থায় স্বাস্থ্য পরিষেবা এখনও স্তব্ধ। গত কয়েকদিনে ইজরায়েলি বোমারু বিমানের দাপটে শহরের বেশ কিছু স্বাস্থ্যকেন্দ্র কার্যত ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। ফলে, থমকেছে টিকাকরণ, প্রয়োজনীয় পরিষেবা।
[আরও পড়ুন: মার্কিন সেনা সরতেই থাবা তালিবানের, জেহাদিদের দখলে আফগানিস্থানের দুই জেলা]
হামাস মিডিয়ার দাবি, গত কয়েকদিনে ইজরায়েলি বোমারু বিমান বেছে বেছে টার্গেট করেছে প্যালেস্তাইনের শিল্প-তালুক এবং বিভিন্ন কারখানাকে। ব্যাপকতার দিক থেকে তাই এবার ক্ষতির পরিমাণ অনেকটা বেশি। প্রাথমিক হিসাবে জানা গিয়েছে, সব কিছু মিলিয়ে গত ১১ দিনে প্যালেস্তাইনের ক্ষতি আনুমানিক ৬২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে বিধ্বস্ত দেশের বিদ্যুৎ পরিকাঠামোও। এখানে শেষ নয়, এর সঙ্গে যোগ হবে আরও ২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই ক্ষতি দেশের কৃষিক্ষেত্রে। ইজরায়েলি বোমায় সবুজ কৃষিক্ষেত্র এখন ধূসর হয়ে গিয়েছে।
গাজা শহরকে নতুন করে গড়ে তুলতে আরও দেড় থেকে দু’মাস সময় লাগবে। প্যালেস্তাইনের এক মন্ত্রীর কথায়, “এবার শহরের ১৬ হাজারের বেশি বাড়ি কমবেশি ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে এক হাজার বাড়ি পুরোপুরি গুঁড়িয়ে গিয়েছে। আর আঠারোশো বাড়ি এমন রয়েছে, যা থাকার অযোগ্য।” জল এবং বিদ্যুৎ-ও এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। গাজায় থাকা রাষ্ট্রসংঘের এক আধিকারিকের দাবি, সকাল থেকে সন্ধে কার্যত বিদ্যুৎহীন। রাতের দিকে দু’ থেকে তিনঘণ্টার জন্য পরিষেবা মিলছে। প্যালেস্তাইনের বিদ্যুৎমন্ত্রীর দাবি, “বিদ্যুৎ পাব কী ভাবে? দেশের মূল বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ইজরায়েলি বোমায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। তবু আমরা চেষ্টা করছি।”
[আরও পড়ুন: ইজরায়েলের পাশে থাকলেও পৃথক প্যালেস্তাইন রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে সওয়াল বাইডেনের]
আর উলটোদিকে ইজরায়েলের ক্ষতি? বিশেষজ্ঞদের দাবি, কোনও ক্ষতি নেই। পুরোটাই ‘লাভ’। আন্তর্জাতিক সামরিক বিশেষজ্ঞ জন টমাসের দাবি, “গত ১১ দিনে গাজার উপর পরীক্ষামূলকভাবে এমন কিছু সমরাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, যা আগামী সময়ে বিশ্বের বাজারে আনতে চলেছে ইজরায়েল। এর মধ্যে আছে ভূমি থেকে আকাশ চারটি ক্ষেপণাস্ত্র। পাঁচটি ভীষণ আধুনিক রকেট লঞ্চার এবং তিনটি স্নিপার বিমান। এর মধ্যে এই স্নিপার বিমানের চাহিদা তৈরি হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে।” বিশেষজ্ঞদের এই দাবিতে খানিকটা চাপেই তেল আভিভ। পুরো বিষয়টিকে তারা এখন পর্দার আড়ালে রাখার চেষ্টা করছে। ইজরায়েল সরকারের পালটা দাবি, গাজা থেকে হামাসের রকেট হামলার জবাব দেওয়া হয়েছিল। এর থেকে আর বেশি কিছু নয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের কাছে, এই যুক্তি ভীষণ ‘ঠুনকো’ বলেই মনে হচ্ছে। তাঁদের মতে, করোনা জেরে বাকি সবকিছু সঙ্গেই ভাটা চলছে সমরাস্ত্রের বেচা-কেনার বাজারেও। সেই বাজারেই জোয়ার আনার চেষ্টা করেছে ইজরায়েল। তাই নিজেদের আস্তিন থেকে নতুন কিছু অস্ত্র বার করে তার পরীক্ষামূলক ব্যবহার করা হয়েছে গাজার উপরে। যেখানে তকমা দেওয়া হয়েছে হামাসের হামলার প্রতিবাদ।