সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার পার্লামেন্ট ভবনের দখল নিল ইজরায়েলের সেনা। আবার অন্যদিকে, বর্তমানে বিতর্কের কেন্দ্রভূমি, আল শিফা হাসপাতালে গণকবরের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে বলে খবর।
লাগাতার বোমাবর্ষণ, আকাশপথে হামলা, গুলি-গ্রেনেডে জর্জরিত গাজার বৃহত্তম হাসপাতাল আল শিফার কম্পাউন্ডেই ১৭৯ জনকে কবর দেওয়া হয়েছে বলে দাবি হাসপাতাল প্রধান মহম্মদ আবু সালমিয়াহর। এই তালিকায় শিশুরাও রয়েছে। আবুর সাফ কথা, “গণকবর দিতে আমরা বাধ্য হয়েছি। এ ছাড়া আর উপায় ছিল না।” এদিকে, আল শিফা হাসপাতালে অভিযান শুরু করেছে ইজরায়েলের সেনাবাহিনী বলে খবর। চলছে তুমুল লড়াই। তোপ উঁচিয়ে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ইজরায়েলি মারকেভা ট্যাঙ্ক। ওই হাসপাতালে লুকিয়ে থাকা হামাস জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার ইজরায়েল (Israel) সরকারের তরফে একটি ছবি প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে দেখা গিয়েছে হামাসের পার্লামেন্ট ভবনে দাঁড়িয়ে রয়েছে ‘ইজরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস’-এর যোদ্ধারা। আরও খতিয়ে বললে, সেনার গোলানি ব্রিগেডের সদস্যরা। পরনে খাকি উর্দি, হাতে রাইফেল আর ইজরায়েলের পতাকা। সেনাসূত্রে দাবি, হামাস জঙ্গিদের সঙ্গে তীব্র লড়াইয়ের পর ভোরের দিকে ওই পার্লামেন্ট ভবনটি দখল করা হয়েছে। ছবিতে ইজরায়েলি সেনার হাবে-ভাবে, শরীরী ভাষায় ‘যুদ্ধজয়ের’ আনন্দ স্পষ্ট।
[আরও পড়ুন: প্যালেস্তিনীয়দের পাশে দাঁড়িয়েও হামাসের বলি ইজরায়েলের শান্তিদূত]
গত ৭ অক্টোবর ইজরায়েলের বিরুদ্ধে অতর্কিত আক্রমণ শানায় প্যালেস্তিনীয় সশস্ত্র বাহিনী তথা হামাস। প্রাথমিক ধাক্কা সামলে প্রতিরোধ গড়ে তোলে ইজরায়েলি সেনাও। ধাপে ধাপে লড়াইয়ের ঝাঁজ বাড়াতে থাকে তারা। অবশেষে ২৭ অক্টোবর ‘গ্রাউন্ড অপারেশন’ শুরু করে নেতানিয়াহুর সেনা। মঙ্গলবারের পার্লামেন্ট ভবন দখল তারই একটি মাইলফলক বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, মঙ্গলবার হামাসের উপর আরও এক প্রস্থ নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। হামাস-ইজরায়েল সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর থেকে এই নিয়ে তৃতীয় বার নিষেধাজ্ঞা চাপাল পেন্টাগন।
তবে এই সব কিছু ছাপিয়ে বর্তমানে যেটা গোটা বিশ্বের কাছে উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে, তা হল গাজার হাসপাতালগুলির দুরবস্থা। বিশেষ করে আল শিফা, গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল। হাসপাতাল প্রধান জানিয়েছেন, জ্বালানির অভাবে হাসপাতালের বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিল সাত শিশু-সহ ২৯ জন রোগী। তাদের শেষকৃত্যের জন্য গণকবরের বন্দোবস্ত করা হয়। আবু জানিয়েছেন, ‘‘চারিদিকে মৃতদেহের স্তূপ! কটু গন্ধ ছাড়ছে। বিদ্যুৎ নেই, জল নেই, খাবার নেই। অত্যাবশ্যকীয় কোনও পরিষেবা নেই। চরম দুরবস্থা। অমানবিক দৃশ্য!’’
প্রসঙ্গত, ক্রমাগত ইজরায়েলি হামলার জেরে গত সপ্তাহেই টানা প্রায় ৭২ ঘণ্টা বিশ্বের সঙ্গে সংযোগ ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল এই হাসপাতালের। সামনের দরজায় এসে পাহারা দিচ্ছিল ইজরায়েলি ট্যাঙ্ক। এই পরিস্থিতিতে অনেক রোগীই হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান। কিন্তু শিশু-সহ বহু মুমূর্ষু রোগী এখনও হাসপাতালে রয়েছেন। অনেকেরই পরিস্থিতি সংকটাপন্ন। এই তালিকায় রয়েছে ৩৬টি শিশুও। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যদিও আবেদন করেছেন আইডিএফ-এর কাছে যে, যে কোনও পরিস্থিতিতেই হাসপাতালগুলিকে বাঁচাতে হবে। ইজরায়েলি সেনা যেন এই ব্যাপারে কম আগ্রাসী হয়, নেতানিয়াহু প্রশাসনের কাছে তাঁর বার্তা এমনই। অন্যদিকে হামাস প্রস্তাব দিয়েছে, ইজরায়েল যদি পাঁচ দিনের সংঘর্ষ-বিরতিতে সম্মত হয়, তাহলে তারা মহিলা-শিশু সহ ৭০ জনকে মুক্তি দেবে। হামাসের আল-কাসিম ব্রিগেডের টেলিগ্রাম চ্যানেলে এই বার্তা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে গাজার হাসপাতালে ইজরায়েলি বিমান হানায় মৃত্যু হয়েছিল হাম্মান আলো নামে এক প্যালেস্তিনীয় নেফ্রোলজিস্টের। মৃত্যুর আগে এক সাক্ষাৎকারে সেই চিকিৎসক ইজরায়েলি সেনার আদেশ মেনে দক্ষিণের নিরাপদ আশ্রয়ে পালাতে অস্বীকার করেছিলেন, রোগীদের ছেড়ে। সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে তাঁর সেই সাক্ষাৎকারের অংশ-বিশেষ, যেখানে তাঁকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘যদি আমি চলে যাই, আমার রোগীদের কে দেখবে? কে চিকিৎসা করবে? ওরা রোগী, ওরা মানুষ। পশু তো নয়। ওদের যথাযথ স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়ার অধিকার আছে।’’