সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সমস্ত প্রস্তুতি শেষ। প্যালেস্তিনীয়দের ‘শেষ আশ্রয়’রাফায় ঢুকে ইজরায়েলি ফৌজের অগ্নিবর্ষণ আর মাত্র কিছু সময়ের অপেক্ষা! সরকার সবুজ সংকেত দিলেই হামাস জঙ্গিদের সমূলে বিনাশ করতে দক্ষিণ গাজার এই শহর তোলপাড় করবেন জওয়ানরা। এমনটাই জানালেন এক ইজরায়েলি সেনা আধিকারিক। তেল আভিভের এই পদক্ষেপে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আমেরিকা। রাফার নিরীহ মানুষদের কথা ভেবে হামলা চালানো থেকে বিরত থাকার আর্জি জানিয়েছে মার্কিন প্রশাসন।
সাত মাস পেরিয়ে গিয়েছে। হামাস নিধনে এখনও গাজায় অগ্নিবর্ষণ করছে ইজরায়েলি ফৌজ। আন্তর্জাতিক মহলের চাপ উপেক্ষা করে নিজের সিদ্ধান্তে অনড় ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। লক্ষ্য একটাই। হামাস জঙ্গিদের সমূলে নিধন। আর তার জন্য রাফায় ঢুকে অভিযান শুরু করতেই হবে ইজরায়েলি বাহিনীকে। এবার নাকি তারই সময় এসে গিয়েছে। টাইমস অফ ইজরায়েলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর এক উচ্চপদস্থ কর্তা জানিয়েছেন, "আমরা সমস্ত জরুরি প্রস্তুতি সেরে ফেলেছি। সরকার আমাদের নির্দেশ দিলেই রাফায় ঢুকে হামলা শুরু করবে বাহিনী।" কিন্তু মিশর সীমান্তবর্তী এই শহরের নিরীহ প্যালেস্তিনীয়দের কী হবে?
জানা গিয়েছে, রাফার মানুষদের জন্য ৪০ হাজার তাঁবুর ব্যবস্থা করেছে ইজরায়েলের সরকার। এই প্যালেস্তিনীয়দের সরিয়ে নিয়ে যেতেও প্রস্তুতি নিচ্ছে সেনা। রয়টার্স সূত্রে খবর, এর জন্য ইজরায়েলের ওয়ার ক্যাবিনেটে জোরদার আলোচনা চলছে। অনুমোদন পেলেই আগামী এক মাসের মধ্যে তাঁদের সরিয়ে নেওয়া হবে। রাফায় ঢুকে অভিযান শুরু করা নিয়ে এর আগে বহুবার ইজরায়েলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে আমেরিকা। গোটা রাফাজুড়ে হামলা না চালিয়ে অন্য পথে হামাস জঙ্গিদের নিকেশ করার পথ খুঁজতে বলেছিল ওয়াশিংটন। কিন্তু কোনও কথাতেই কর্ণপাত করেননি নেতানিয়াহু।
এদিকে, রাফায় ইজরায়েলি সেনার অভিযান নিয়ে নেতানিয়াহুর প্রশাসনকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে মিশর। কায়রো সাফ জানিয়ে দিয়েছে, রাফায় হামলা শুরু হলে কোনও প্যালেস্তিনীয়কে সীমান্ত পেরিয়ে মিশরে ঢুকতে দেওয়া হবে না। পাশাপাশি এও বলা হয়েছে, ইজরায়েলের এই অভিযানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে। প্রাণ হারাবে লক্ষ লক্ষ মানুষ। রাফাকে সম্পূর্ণ ধবংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে তেল আভিভ। এর ফল ভুগতে হবে ইজরায়লকে।
[আরও পড়ুন: ইরানের হাতে ‘ব্রহ্মাস্ত্র’, রেহাই পাবে না আমেরিকার ‘অদৃশ্য’ যুদ্ধবিমানও!]
কিন্তু কেন রাফায় ঢুকে আক্রমণ শানাতে এতটা মরিয়া ইজরায়েল? দক্ষিণ গাজায় অবস্থিত রাফা শহরটি মিশর সীমান্তবর্তী। যা এখন প্রায় ১৫ লক্ষ প্যালেস্তিনীয়দের শেষ আশ্রয়। যার মধ্যে অধিকাংশই শরণার্থী। ইজরায়েলি সেনার হামলা থেকে বাঁচতে এই শহরের বহু শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা। এই মুহূর্তে ইজরায়েলের মারে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গোটা গাজা ভূখণ্ড। উত্তর থেকে দক্ষিণের বিভিন্ন এলাকা এমনকি মাটির নিচেও হামাস জঙ্গিদের ডেরা গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইজরায়েলি ফৌজ। তেল আভিভের অভিযোগ, এই রাফা শহরেই নতুন করে ঘাঁটি গাড়ছে জেহাদিরা। এখান থেকেই তারা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাচ্ছে। এখানে লুকিয়ে রয়েছে জঙ্গি সংগঠনটির মাথারাও। তাই হামাসকে পুরোপুরী শেষ করতে হলে এই শহরও তোলপাড় করতে হবে। এদিকে, রাফা সীমান্ত বন্ধ করে রেখেছে মিশর। ফলে শহর ছেড়ে পালানোর আর কোনও পথ নেই হামাসে কাছে। তাই রাফায় একবার ইজরায়েলি বাহিনী পুরোপুরী ঢুকে পড়তে পারলে আর রেহাই পাবে না কোনও হামাস জঙ্গি।