সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: হামাসের নাম মুছে ফেলতে গত ছয় মাস ধরে গাজায় তীব্র আক্রমণ শানাচ্ছে ইজরায়েল। গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে জেহাদিদের ডেরা। গাজায় অভিযান শুরুর পর থেকে একের পর হামাসের শীর্ষ নেতাকে খতম করেছে ইজরায়েলি ফৌজ। বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়েহের বাড়ি। এবার নাকি ধরা পড়েছেন হানিয়েহের বোন। বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যকলাপে যুক্ত থাকার সন্দেহে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে ইজরায়েলের পুলিশ।
এএনআই সূত্রে খবর, সোমবার ইজরায়েলের তেল শেভার বেদুইন গ্রাম থেকে হানিয়েহের বোনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেদেশের প্রশাসন বিষয়টি সকলকে জানিয়েছে। কিন্তু ওই মহিলার নাম প্রকাশ্যে আনেনি ইজরায়েলি পুলিশ ও ইসরায়েল সিকিউরিটি এজেন্সি শিন বেট। কিন্তু একাধিক প্যালেস্তিনীয় সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে, ধৃত মহিলার নাম জেবা আবদাল সালেম হানিয়েহ।
[আরও পড়ুন: ‘সবরকম সাহায্য পেয়েছি’, পান্নুন খুনের ছকের তদন্তে ভারতকে দরাজ সার্টিফিকেট আমেরিকার]
এই গ্রেপ্তারি প্রসঙ্গে শিন বেট জানিয়েছে, বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সন্দেহে ওই মহিলাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হামাসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, ইজরায়েলের বুকে জঙ্গিদের হামলায় সাহায্য করার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। ধৃতের বাড়িতে তল্লাশি চালানোর সময় বিভিন্ন নথি, একাধিক টেলিফোন ও আরও অন্যান্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। সেখান থেকেই ইজরায়েলের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রে তাঁর জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। তিনি জাতীয় নিরাপত্তাও লঙ্ঘন করেছেন। জানা গিয়েছে, ওই মহিলাকে বির-শেভা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে তোলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়েহকে বহু দেশ হামাসের প্রধান হিসাবে গণ্য করে। নয়ের দশকের শেষ থেকে উত্থান শুরু হয় হানিয়েহর। হামাসের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আহমেদ ইয়াসিনের ‘ডান হাত’ বলে পরিচিত এই জঙ্গি। ২০০৬ সালে প্যালেস্টাইনের প্রধানমন্ত্রীও নির্বাচিত হয়। গত বছর নভেম্বরে তার বাড়িতে হামলা চালায় ইজরায়েলি ফৌজ। কাতারে বসবাসকারী হানিয়েহের তিন বোন রয়েছে। তাঁরা প্রত্যেকেই ইজরায়েলের নাগরিক। থাকেন তেল শেভায়।
[আরও পড়ুন: ‘কেন এত মৃত্যু?’, রক্তাক্ত গাজায় শান্তি ফেরাতে এবার আসরে পোপ]
এদিকে শনিবার সন্ধ্যায় গাজার যুদ্ধ নিয়ে আলোচনায় বসেছিল ইজরায়েল ও হামাস। রবিবারও কায়রোয় ফের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির বিষয়ে পরিষ্কার কোনও ইঙ্গিত মেলেনি। তাই বাড়ছে প্রতীক্ষা। এখনও ইজরায়েলি ও বিদেশি মিলিয়ে গাজায় পণবন্দি অন্তত ১৩৪ জন। দ্রুত তাঁদের মুক্তির দাবি নিয়ে রবিবার ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে রাস্তায় নামেন হাজার হাজার প্রতিবাদী। যাঁদের একটা বড় অংশই পণবন্দিদের আত্মীয়। তেল আভিভে রিং রোড অবরোধ করেন তাঁরা। জেরুজালেমেও শয়ে শয়ে প্রতিবাদী রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ দেখান। নেতানিয়াহুর বাড়ির সামনেও জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন আন্দোলনকারীরা।
সকলেরই অভিযোগ, পণবন্দিদের দ্রুত মুক্ত না করতে পারাটা নেতানিয়াহুর ব্যর্থতা। এক প্রতিবাদীর মন্তব্য, “আপনি (নেতানিয়াহু) যুদ্ধবিরতির চুক্তি হতে দিচ্ছেন না। আমাদের ও আমাদের প্রিয়জনদের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন আপনিই।” অন্য আরেকজনের মন্তব্য, “আমরা দেখতে পাচ্ছি কীভাবে রাজনৈতিক অভিসন্ধি থেকেই তিনি সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। আমাদের অপহৃত প্রিয়জনদের মুক্ত করতে তিনি কতটা চিন্তা করছেন তাও বোঝা যাচ্ছে।” গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় সামরিক অভিযান চালাচ্ছে ইজরায়েলি সেনা। বাড়ছে মৃত্যু। চরম দুর্দশায় দিন কাটছে গাজার সাধারণের মানুষের। যা নিয়ে বারবার আন্তর্জাতিক মহলে চাপের মুখে পড়লেও হামাসকে নিঃশেষ করার লক্ষ্যে এখনও অবিচল নেতানিয়াহু।