অর্ণব আইচ: র্যাগিংয়ের সময় জোর করে বিবস্ত্র করা হয়েছিল যাদবপুরের (Jadavpur University) বাংলা বিভাগের মৃত ছাত্রকে। হস্টেলের একটি ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে কেড়ে নেওয়া হয় তাঁর জামাকাপড়। যাদবপুর মেন হস্টেলের একের পর এক ছাত্র ও কর্মীকে টানা জেরা করার পর এই চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে এসেছে পুলিশের। একই সঙ্গে হস্টেলের ধৃত প্রাক্তনী সৌরভ চৌধুরির কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া মৃত ছাত্রের গেঞ্জি ও হাফ প্যান্ট উদ্ধার হওয়ার পর এই ব্যাপারে পুলিশ আরও নিশ্চিত হয়। এবার এই তথ্যের ভিত্তিতে যাদবপুর-কাণ্ডে ধৃত সৌরভ চৌধুরি, মনতোষ মণ্ডল, দীপশেখর দত্তকে জেরা করে আরও তথ্য জানার চেষ্টা হচ্ছে। সৌরভের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া গেঞ্জি ও হাফ প্যান্ট ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের কাছে পরীক্ষার জন্য পাঠাচ্ছে লালবাজার।
সম্প্রতি ছাত্র খুনের অভিযোগের তদন্তে হস্টেলের একাধিক নিরাপত্তারক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাঁদের ও হস্টেলের এক রাঁধুনিকে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁরাও জানিয়েছেন, কীভাবে হস্টেলে নতুন আসা জুনিয়র ছাত্ররা সৌরভ চৌধুরি ও তার অনুগামী ছাত্রদের র্যাগিংয়ের শিকার হতেন। কীভাবে নতুন ছাত্রদের উপর মানসিক ও কখনও শারীরিক নির্যাতন চালানো হত, সেই বর্ণনাও পুলিশকে দিয়েছেন তাঁরা। বেশ কয়েকজন ছাত্রকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও এই ব্যাপারে তথ্য মিলেছে। পুলিশ এ-ও জেনেছে যে, র্যাগিং চলাকালীন মোবাইলে ভিডিও তৈরি করা হত। সেই ভিডিও পরে নিজেদের মধ্যে দেখতেন ছাত্ররা। এমনকী, কয়েকজনের ল্যাপটপে সেই ভিডিওগুলি মোবাইল থেকে ‘ট্রান্সফার’ করাও হত বলে পুলিশ জেনেছে।
[আরও পড়ুন: ‘ভাষণ দেব না’, সাংগঠনিক বৈঠকে নাড্ডার সামনেই সাফ জানিয়ে দিলেন দিলীপ]
সৌরভ ও বাকিদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া মোবাইল থেকে সেই ভিডিওগুলি উদ্ধার করার চেষ্টা করেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। যদিও পুলিশের সন্দেহ, এই ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনার পরই বিপদ আঁচ করে ছাত্ররা নিজেদের মোবাইল ও ল্যাপটপ থেকে মুছে ফেলে সেই ভিডিওগুলি। র্যাগিংয়ের সেই ভিডিওগুলি উদ্ধার করতে পুলিশ ফরেনসিকের সাহায্য নিচ্ছে। ধৃত ছাত্রদের মোবাইল পুলিশ ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা করাবে।
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, গত বুধবার বাংলা বিভাগে প্রথম দফার র্যাগিং হয়, যেখানে মৃত ছাত্রকে এক সহপাঠিনীকে প্রেম নিবেদন করতে বলা হয়। তিনি সফল না হওয়ায় তাঁকে সমকামী বলেন বিভাগের কয়েকজন সিনিয়র। এর পর তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। বিষয়টি নিয়ে হস্টেলে এসে ‘দাদা’দের বলেন। তখনই প্রাক্তনী সৌরভ চৌধুরি ও অন্য দাদারা এই ‘সমকামী’ তত্ত্ব নিয়েই শুরু করে র্যাগিং। আক্ষরিক অর্থে নাবালক মৃত ছাত্র ‘সমকামী’ কি না, তা ‘পরীক্ষা’ করে দেখা হবে, বলে তাঁকে জানায় অভিযুক্ত সিনিয়ররা। তখন মৃত ছাত্রের পরনে ছিল একটি গেঞ্জি ও হাফ প্যান্ট। অভিযোগ উঠেছে, একটি ঘরের মধ্যেই জোর করে খুলে নেওয়া হয় স্বপ্নদীপের যাবতীয় পোশাক। এমনকী, তাঁকে বিবস্ত্র করিয়ে দৌড়াতে বলা হয়। তখন ওই ছাত্র কোনওমতে এক সিনিয়রের গামছা পরে দৌড়তে বাধ্য হন। কিন্তু তাঁর গামছাটিও কেড়ে নেওয়া হয়।
[আরও পড়ুন: দেশে প্রথম! ব্যাটারি এনার্জির কামাল, বিদ্যুৎ বিভ্রাটেও আর সুড়ঙ্গে আটকে থাকবে না মেট্রো]
ওই অবস্থায় তিনি দৌড়ে বাথরুমে পালিয়ে যান। যে জায়গাটি থেকে স্বপ্নদীপ লাফ দিয়েছেন, সেটি বাথরুমের কাছেই। পুলিশের মতে, বিবস্ত্র অবস্থায় বাথরুম থেকে বেরিয়ে তিনি আতঙ্কে প্রাণ বাঁচাতেই তিনতলার বারান্দা থেকে লাফ দেন। এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে ধৃতদের জেরা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।