সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মসলিন কিংবা জামদানির কথা সকলেই কমবেশি জানেন। মসলিনের বাজার পড়ে গিয়েছে আগেই। কিছুটা ম্রিয়মাণ হলেও, নিজের বিশেষত্ব নিয়ে জামদানি বস্ত্র এখনও জনপ্রিয়। নিজস্ব শিল্প মাধ্যম হিসেবে তাঁতশিল্পে এর গুরুত্ব অনস্বীকার্য। UNESCO জামদানিকে বাংলাদেশের GI পণ্য ঘোষণা করলেও বর্তমানে বাংলাদেশের জামদানি শিল্পের অবস্থা বিশেষ ভাল নয়। নতুন প্রজন্ম এই ব্যবসায় আগ্রহী নয়। ফলে জামদানি শিল্পকে চাঙ্গা করতে নয়া পদক্ষেপ নিতে চলেছে বাংলাদেশ।
যাঁরা জামদানি বয়নের কাজ করতেন, তাঁরা ক্রমশ এই পেশায় আস্থা হারিয়ে ফেলছেন। ক্রমশ কমছে জামদানি বুননের তাঁতির সংখ্যা। জামদানি বস্ত্রে বৈচিত্র্য আনতেও সেভাবে চেষ্টা হয়নি বাংলাদেশের সরকারি বা বেসরকারিভাবে। ফলে জামদানির সৌন্দর্য এখনও আটকে স্রেফ শাড়ির মধ্যেই। অথচ, বিভিন্ন গবেষণা এবং খুব অল্প কিছু ভিন্ন ধর্মী উদ্যোগ থেকে দেখা গিয়েছে, জামদানি দিয়ে অন্য ধরনের পণ্যও তৈরি করা সম্ভব। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী জামদানি শিল্পের প্রচার, প্রসার ও বাজার উন্নয়নে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) অর্থায়নে ‘বৈচিত্র্যময় জামদানি পণ্যের বাজার উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ঐতিহ্যবাহী ও সমকালীন শিল্পকেন্দ্র, পিদিম ফাউন্ডেশন।
[আরও পড়ুন: করোনার থাবা, বাংলাদেশে হোম কোয়ারেন্টাইনে বিদেশ ফেরত ২১৫ জন]
এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে ১০ ও ১১ মার্চ বাংলাদেশ শিল্পকলা অ্যাকাডেমির চারুকলা বিভাগের সেমিনার হলে বৈচিত্র্যময় জামদানি পণ্যের ডিজাইন কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এই সংক্রান্ত এটাই প্রথম কর্মশালা বাংলাদেশে। পরিচালনায় শিল্পী ও গবেষক শাওন আকন্দ এবং জাহাঙ্গির নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষক শিল্পী শামিম রেজা। এই কর্মশালায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কারুশিল্প বিভাগ, শান্ত-মরিয়ম ক্রিয়েটিভ ইউনিভারসিটির ফ্যাশন ডিজাইন বিভাগ, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। আড়ং, কুমুদিনী, অরণ্য, কে ক্র্যাফট, দেশাল, রং বাংলাদেশ, খুঁতসহ মোট ১৫টি ফ্যাশন হাউসের ডিজাইনার ও প্রতিনিধিরাও এই কর্মশালায় অংশ নিয়ে বিভিন্ন আকর্ষণীয় পণ্য তৈরি করেছেন, জামদানি এবং এর আদি নকশার মোটিফ ব্যবহার করে।
এছাড়া তিনজন অভিজ্ঞ তাঁতি এই কর্মশালায় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বিভিন্ন বৈচিত্র্যময় পণ্যের ডিজাইন ও নমুনা তৈরি করা হয়েছে। এসব বৈচিত্র্যময় পণ্য দিয়ে ভবিষ্যতে একটি জামদানি প্রদর্শনী আয়োজনের পরিকল্পনাও রয়েছে উদ্যোক্তাদের। দু’দিনের এই কর্মশালার বিভিন্ন পর্বে অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ডিজাইনার মালেকা খান, ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাজেশ ভৌমিক, মসলিন গবেষক সাইফুল ইসলাম, লন্ডন প্রবাসী শিল্পী আবু জাফর, পিদিম ফাউন্ডেশনের পরিচালক হুমায়ুন কবীর সকলেই।
[আরও পড়ুন: বাংলাদেশে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, ঢাকায় পুড়ে ছাই দুই শতাধিক ঘর]
The post সংকটে জামদানি শিল্প, বাজার চাঙ্গা করতে কর্মশালার মাধ্যমে উদ্যোগ একাধিক সংস্থার appeared first on Sangbad Pratidin.