প্রাক্তন এবং বর্তমানের সংঘাত ছবি জুড়ে। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘অর্ধাঙ্গিনী’ মুক্তি পাবে ২ জুন। ছবির অন্যতম স্তম্ভ জয়া আহসানের মুখোমুখি বিদিশা চট্টোপাধ্যায়।
২০১৩-তে আবর্ত দিয়ে আপনার ভারতে বাংলা ছবির যাত্রা শুরু!
– এক দশক হয়ে গেল না!
হ্যাঁ, কীভাবে দেখবেন এই যাত্রাপথ? এখন আপনাকে এপার বাংলা বা ওপার বাংলা- আলাদা করা যায় না!
-এটাই বোধহয় সবচেয়ে বড় পাওয়া। ‘আবর্ত’ দিয়ে শুরু, আর এই ২০২৩-এ ‘অর্ধাঙ্গিনী’ মুক্তি পেয়েছে। ভাল যেটা হয়েছে, দারুণ কিছু মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছি। ভাল কিছু ছবি করেছি। একটা দেশের সাধারণ মানুষকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। একজন অভিনেতা হিসেবে দুটো দেশে কাজ করাটা ভাগ্যের ব্যাপার। নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয়। নিজের অ্যাক্টিং কেরিয়ারকে আলাদা করে গ্লোরিফাই করার মতো কিছু নয়। এটা একটা কনটিনিউয়াস প্রসেস। এটা চলবে। আর এখানকার দর্শকের ভালবাসা পেয়েছি। হয়তো সংখ্যায় অনেক কাজ করিনি। কিন্তু আমার ছবি এলে দর্শক একটা অন্যরকম এক্সপেকটেশন রাখে, এটাই আমার পাওনা।
পরের দিকে কলকাতায় অনেক বেশি কাজ করেছেন, বাংলাদেশের চেয়ে, এটা কেন?
– এখানে পরপর ভাল কিছু কাজ পেয়েছি। নিজের দেশেও কাজ করেছি, তবে এখানে একটু বেশি। এখন আবার ভেবেছি বাংলাদেশের কাজের ওপর ফোকাস করব। তাছাড়া আমি নিজেকে একটা ব্রেকও দিয়েছিলাম। নিজেকে, পরিবারকে সময় দিয়েছি। নিজের কিছু ব্যক্তিগত কাজ থাকে, ব্যক্তিগত আরাম থাকে- সেগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া। শুধুমাত্র আলসি করতে ইচ্ছে করে বা একেবারে কিছু না করা- এটাও বোধহয় একজন অভিনেতার খুব দরকার! কিছু করব না, ছবিও দেখব না, পড়বও না, আলসি করব, ঘুমাব, খাব- এটাও দরকার আছে।
কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে এটা আপনার তৃতীয় ছবি। এবং তিনটে ছবিতেই ত্রিকোণ প্রেম রয়েছে, যেখানে আপনার চরিত্র সবসময়ই টানাপোড়েনের মাঝখানে পড়ে যাচ্ছে…
– হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন… এবং এটা বললে ভুল হবে না যে ‘বিজয়া’, ‘বিসর্জন’-এর মতোই এটাও সম্পর্কের সিকুয়েলের গল্প। সম্পর্কের গল্প, দ্বন্দ্বের গল্প।
ত্রিকোণ সম্পর্কে টানাপোড়েন ভাল ফুটিয়ে তুলতে পারেন বলেই কি আপনাকে কৌশিকদা বারবার কাস্ট করেন?
– (হা হা হা)…আমি জানি না, এটা কৌশিকদা বলতে পারবে। আমি যেটা ভাল ফুটিয়ে তুলতে পারি, সেটা আমি একেবারেই করতে চাই না। তার বাইরে গিয়ে কাজ করতে চাই। যে চরিত্রে পরিচালক বা দর্শক আমাকে ভাববে না, তেমন কিছু। তেমন চরিত্র এখনও পাইনি।
‘প্রাক্তন’ এবং ‘বর্তমান’-এর একটা সংঘাতের আভাস পাওয়া যায় ‘অর্ধাঙ্গিনী’-র ট্রেলারে। নিজের জীবনে এমন অভিজ্ঞতা কীভাবে সামলাবেন?
– দেখো আমি বলতেই পারি, নিজের জীবনেও আমি ‘মেঘনা’র (আমার চরিত্রের নাম) মতো করেই সামলাব! হয়তো সেটা করার চেষ্টাই করব। কারণ আমার সহনশীলতা আছে, ধৈর্যও আছে। ইনসিকিওরিটি নেই কোনও। যখন কাউকে ভালবাসি, তাকে উজাড় করেই ভালবাসি। ‘সত্যে’র যেমন একটা স্ট্রেন্থ আছে ভালবাসারও তেমন একটা স্ট্রেন্থ আছে।
তার মানে আপনি বলছেন, প্রেমে পড়লে আপনার ইনসিকিওরিটি নেই?
– নাহ নেই, মানে তাই তো দেখেছি। বা থাকলেও সেটা লুকিয়ে রাখি।
এটা আমার মতে একটা ডিফেন্স মেকানিজম, এই লুকিয়ে রাখাটা…
– হ্যাঁ, সেটাই হবে। কিছু নিরাপত্তাহীনতা তো থেকেই যায়…
কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে তিনটে কাজ। কেমন সম্পর্ক? কতটা বন্ধুত্বের? কতটা পেশাদারিত্বের?
– কৌশিকদা আমার কাছে একজন ভাল পরিচালক। সংবেদনশীল একজন মানুষ। তারপর ওঁর অভিনয়সত্তা এবং ডিরেক্টর সত্তা। আর আমরা দু’জনেই সেনসিটিভ বলেই হয়তো কাজ করে আনন্দ পাই। অন্য অভিনেতারাও একই কথা বলবে, আমি নিশ্চিত!
‘অর্ধাঙ্গিনী’তে আপনার চরিত্র সম্পর্কে জানতে চাই! কী ভাল লেগেছিল?
– আমি এখানে ‘মেঘনা মুস্তাফি’। ওর একটা জার্নি আছে। তবে আলাদা করে এই চরিত্রের প্রেমে পড়েছি বলে নয়, আমি কৌশিকদার কাজের প্রেমে পড়ে কাজটা করেছি, চরিত্রের জন্য নয়। আর ‘মেঘনা’ যতটা ভালনারেব্ল আমি নিজে ততটা নই!
টলিউডে যে ক’জন পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন, তাঁদের মধ্যে আপনাকে অ্যাজ অ্যান অ্যাক্টরকে সবচেয়ে ভালভাবে ব্যবহার করতে পেরেছেন বলে মনে হয়?
– কৌশিকদার কথা বলব আর অতনু ঘোষ অবশ্যই! ‘বিনিসুতোয়’ বা ‘রবিবার’ দুটোতেই খুব অন্য ধরনের চরিত্র! ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরির ‘ভালবাসার শহর’ও খুব প্রিয়, কিন্তু তার সঙ্গে মাত্র একটা করেছি তাই বললাম না!
আপনাকে দিয়ে শুরু। তারপর টলিউডে অনেকেই কাজ করেছেন- যেমন তাসনিয়া ফারিন, অপি করিম, মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরি আরও অনেকে। নিজেকে কি দিশারি বলে মনে হয়?
-ওটিটি আসার ফলে কাজের সুযোগ অনেক বেড়ে গিয়েছে। এটা তো ভাল ব্যাপার। তবে মাঝেমধ্যে দু’রকমের কথা শুনি। অনেকে বলে বাকিদের সঙ্গে আপনার মেলেই না। আসলে অনেকে জয়া আহসানের সঙ্গে কাজ করার পর একরকম মাইন্ডসেট নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আশাহত হয়। আবার যখন চঞ্চল চৌধুরির মতো অভিনেতার সঙ্গে কাজ করার পর আস্থা ফিরে পায়। আবার অনেকে ভাল অভিজ্ঞতার কথাও বলে। ফলে দু’ধরনের কথাই শুনি।
কলকাতায় এসে কাজ করে সবচেয়ে বড় পাওয়া কী?
– আমি দ্বিতীয় একটা দেশ পেয়ে গিয়েছি। ছোটবেলা থেকে এত গল্প শুনেছি, ইন্ডিয়াকে কখনও আলাদা একটা দেশ ভাবতাম না। বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, তিনি বলতেন ইন্ডিয়া আমাদেরই দেশ। বাবা সব সময় দু’দেশের কথা বলতে গিয়ে ‘আমরা’ করেই বলবেন। কলকাতাকে আলাদা করে দেখেননি। সেটাকে নতুন করে পাওয়া আমার কাজের মধ্য দিয়ে। বাবা বেঁচে থাকলে খুব খুশি হতেন। এখান থেকে অ্যাওয়ার্ড নিচ্ছি, এখানকার মানুষ আমাকে ভালবাসছে, এটা দেখতে পেলে বাবা ভীষণ খুশি হতেন। এই সময়ে দাঁড়িয়ে বাবাকে খুব মিস করি।