সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: আশঙ্কাই সত্যি হলো। পুরুলিয়ার (Purulia) ঝালদা পুরসভার কুর্সি দখলের লড়াইয়ের এবার তৃণমূল বনাম তৃণমূল! যে পুরপ্রধানের পদের জন্য কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছিল এতদিন, এবার সেই লড়াইয়ে কংগ্রেসকেই সঙ্গে নিল শাসকদল। পুরসভার তৃণমূল (TMC) পুরপ্রধান শীলা চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের দুই কাউন্সিলরকে নিয়ে অনাস্থা আনলেন শাসকদলেরই পাঁচ কাউন্সিলর। বৃহস্পতিবার বিকেলে কংগ্রেস ও তৃণমূলের মোট ৭ কাউন্সিলর অনাস্থার চিঠি দেন পুরপ্রধানকে। তার প্রতিলিপি পাঠানো হয় পুরুলিয়ার জেলাশাসক, ডাইরেক্টোরেট অফ লোকাল বডিস কলকাতা, ঝালদার মহকুমা শাসক এবং ঝালদার এক্সিকিউটিভ অফিসারকে। পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর পূর্ণিমা বাগতি এই চিঠি লেখেন।
এই চিঠিতে তৃণমূল কংগ্রেসের পাঁচ কাউন্সিলর ৬ নম্বর ওয়ার্ডের তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান সুরেশ আগরওয়াল, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন উপ-পুরপ্রধান সুদীপ কর্মকার, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের রিজওয়ানা খাতুন, ১০ নম্বর ওয়ার্ডের জবা মাছোয়াড় ও ১১ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ণিমা বাগতি ছাড়াও কংগ্রেসের দুই কাউন্সিলর ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তথা পুরসভার বিরোধী দলনেতা বিপ্লব কয়াল ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন উপ-পুরপ্রধান পূর্ণিমা কান্দুর সই রয়েছে। এই বিষয়ে পুরপ্রধান শীলা চট্টোপাধ্যায় বলেন, “অনাস্থার চিঠি সংক্রান্ত একটি কাগজ আমি হোয়াটসঅ্যাপে (WhatsApp) পেয়েছি। আমি বাইরে আছি। ঝালদায় ফিরে গিয়ে এ বিষয়ে কথা বলতে পারব।”
[আরও পড়ুন: টেটের দিনেই গীতাপাঠ, পরীক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে বাড়তি বাসের ব্যবস্থা রাজ্যের]
ফের কয়েক দিন ধরে ঝালদা পুরসভার কুর্সি দখলের লড়াইকে ঘিরে কলকাতা হাই কোর্টে (Calcutta HC) একের পর এক মামলা চলছিল। পুরপ্রধান শীলা চট্টোপাধ্যায়ের কাউন্সিলর পদ খারিজ সংক্রান্ত বিষয়ে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ ছিল। যদিও এখন তা বেড়ে হয়েছে ১৫ ডিসেম্বর। অন্যদিকে, ঝালদার পুরপ্রধানের অপসারণ সংক্রান্ত একাধিক মামলায় কলকাতা হাই কোর্ট ৮ ডিসেম্বরের মধ্যে আস্থা ভোট করানোর নির্দেশ দেয়। ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে মামলা হলে গত বুধবার তা খারিজ করে দেয়। পদ্ধতি মেনে পুরপ্রধান অপসারণ প্রক্রিয়ার কথা বলে ডিভিশন বেঞ্চ। এর ২৪ ঘন্টা কাটতে না কাটতেই পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের দুই কাউন্সিলরকে নিয়ে শাসকদলের পাঁচ কাউন্সিলর যেভাবে অনাস্থার চিঠি দিলেন, তাতে আবার নতুন করে তোলপাড় ঝালদা পুর শহরের রাজনীতি।
[আরও পড়ুন: বাঙালি সাজে পাহাড়ি বধূ, বরের পরনে গোর্খা পোশাক, সম্পন্ন আবেশ-দীক্ষার বিয়ে]
তবে এমনটা যে হওয়ার ছিল, তা বোঝা গিয়েছিল অনেক আগেই। গত ৬ সেপ্টেম্বর নির্দল কাউন্সিলর তথা পুরপ্রধান শীলা চট্টোপাধ্যায় বাঘমুন্ডিতে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক সুশান্ত মাহাতোর হাত ধরে শাসকদলে যোগদান করার পরেই পুরসভার সমীকরণটা কার্যত বদলে যায়। পুরপ্রধান শীলাদেবীকে সরাতে একজোট হয়ে যান অনাস্থার চিঠিতে সই করা শাসকদলের ৫ জন-সহ কংগ্রেসের ২ কাউন্সিলর। তবে পুরপ্রধানের পক্ষে রয়েছেন তাঁর সঙ্গেই যোগদান করা কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে আসা ৪ কাউন্সিলর। তাঁরা হলেন নিহত কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দুর ভাইপো মিঠুন কান্দু, বিজয় কান্দু, পিন্টু চন্দ্র ও সোমনাথ (রঞ্জন) কর্মকার।
শীলা চট্টোপাধ্যায় তৃণমূলে আসার পরেই এই পুরসভায় আড়াআড়িভাবে ভাগ হয়ে যায় দুই শিবির। কলকাতা হাই কোর্টের তত্ত্বাবধানে অপসারণ প্রক্রিয়া কার্যকর না হওয়ায় এই অনাস্থার চিঠি। এই বিষয়ে পুরুলিয়া জেলা জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, “দলীয় স্তরে যাতে সমাধান করা যায় সেটি দেখা হচ্ছে।” পুরসভার বিরোধী দলনেতা তথা অনাস্থার চিঠিতে সই করা কংগ্রেস কাউন্সিলর বিপ্লব কয়ালের বক্তব্য, “হাই কোর্ট বলেছে পদ্ধতি মেনে অপসারণ প্রক্রিয়া করতে। সেভাবেই আমরা কাজ শুরু করেছি।”