শম্পালী মৌলিক: ‘মহালয়া’ রিলিজের আগে ‘উৎসব’-এ যিশু সেনগুপ্তর মুখোমুখি, এতদিন তাঁকে উত্তমকুমারের অভিনীত রোলে নতুন করে অভিনয় করতে দেখেছি আমরা। এই প্রথমবার স্বয়ং উত্তমকুমারের চরিত্রে যিশু সেনগুপ্ত। কী বলছেন তিনি?
‘মহালয়া’ ছবিটা করতে রাজি হলেন কেন?
যিশু: বিকজ অফ দ্য কনটেন্ট অফ দ্য ফিল্ম। গল্পটার জন্য, স্ক্রিপ্টের জন্য রাজি হলাম। ইট’স আ হিউজ স্টোরি। যেটা বাঙালিদের জানা দরকার বলে মনে হয়। আমি তো এমনিতে অশিক্ষিত, আমার যারা শিক্ষিত বন্ধুরা রয়েছে, যারা বাংলা নিয়ে চর্চা করেছে বা এখনও করছে, তারাও অনেকে জানে না, যে অ্যাকচুয়ালি উত্তমকুমার ‘মহালয়া’ পাঠ করেছিলেন। কেউ কেউ এমনও বলে, ‘ধুৎ! না, না, আশি-পঁচাশি বছর ধরে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রই মহালয়া করে আসছেন।’ আমি তাদের বললাম, ‘না, না একবছর উত্তমকুমার করেছিলেন রে।’ দ্যাট ওয়াজ দ্য বিগেস্ট ফ্লপ অফ উত্তমকুমার’স লাইফ। এবং সবথেকে বড় কথা সেটা উনি আগেই প্রেডিক্ট করেছিলেন। উনি কিন্তু মহালয়াটা করতে চাননি। ওঁকে চাপ দেওয়া হয়েছিল। এমন লোকে বলতে শুরু করল, আপনি তো সুপারস্টার, ইত্যাদি। কিন্তু উনি বলতে চেয়েছিলেন যে, আমি তো সুপারস্টার অডিওভিস্যুয়ালে। আমার গলাটা তো স্টার নয়, আমি সুপারস্টার। আমাকে তো রেডিওতে দেখতে পাবে না। কিন্তু সকলে এমনভাবে বলেছিল যে, উনি করেছিলেন। যখন উনি নিজে মহালয়ার দিন শুনছেন, হি আন্ডারস্টুড দ্যাট সামথিং ইজ মিসিং।
এই প্রথমবার সত্যি সত্যি আপনি উত্তমকুমারের রোলে। আগে তাঁর অভিনীত চরিত্রে করেছেন। যেমন- ‘চিড়িয়াখানা’য় ব্যোমকেশ বা ‘এক যে ছিল রাজা’র সন্ন্যাসী রাজা। এবারে সত্যি তাঁর জুতোয় পা গলানো যাকে বলে…
যিশু: হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন। কিন্তু অ্যাট সেম টাইম সৌমিক যেভাবে প্রত্যেকটা চরিত্র তৈরি করেছে, অ্যাজ আ রেফারেন্স বলব। এখানেও তার নাম উত্তমকুমার। কিন্তু একটা যেটা প্লাস পয়েন্ট, উত্তমকুমার রিয়্যাল লাইফে কেমন ছিলেন সেটা আজ আর সেভাবে কেউ জানে না। কারণ, আজকের লোকেরা তাঁকে ছবির বাইরে ক’জন দেখেছেন? যাঁরা দেখেছেন তাঁকে ওইভাবে, আজ আর ক’জন বেঁচে আছেন? হাতে গোনা লোক উত্তমকুমারকে দেখেছেন, মানে যাঁরা এখনও বেঁচে। সুতরাং উত্তমকুমার কীভাবে নিজের বাড়ির লোকের সঙ্গে কথা বলতেন, সেটা কেউ আজ আর জানে না। নিশ্চয়ই সিনেমার ওই ম্যানারিজমগুলো থাকত না রিয়্যাল লাইফে। আমার কিছু কিছু শুনে জানার সৌভাগ্য হয়েছে, আমার শাশুড়ি অঞ্জনা ভৌমিকের জন্য। শি ওয়াজ ভেরি ক্লোজ টু উত্তমকুমার অ্যান্ড সুপ্রিয়া দেবী। ফলে ওঁর কাছে আমি ওই সময়ের গল্প শুনেছি। ওঁকে আমি ‘কাকিমা’ বলি এখনও। ধরুন, কাকিমা একটা গয়না বানিয়েছেন। ওটা সুপ্রিয়া চৌধুরির খুব পছন্দ হয়েছে। জিজ্ঞেস করলেন, ‘কোত্থেকে বানিয়েছিস’? পরের দিন কাকিমা ওইরকমই বানিয়ে এনে দিলেন! এই রকম সম্পর্ক ছিল। আবার হয়তো সুপ্রিয়া চৌধুরির কানেরটা দেখে কাকিমার খুব পছন্দ হয়েছে। সেটা উত্তমবাবু শুনলেন, পরের দিন অর্ডার করে দিলেন ওইরকমই একটা কাকিমাকে বানিয়ে দেওয়ার জন্য। এই হচ্ছে ওঁদের সম্পর্ক, দ্যাটস দ্য প্লাস পয়েন্ট। আমি কিছুটা জানতে পেরেছি এইভাবে, যে উনি মানুষটা কীরকম ছিলেন। সেটা আমাকে খুব হেল্প করেছে। আমি যে ওঁকে কপি করেছি তা নয়। আমি আমার মতো করে করেছি। কারণ, সৌমিক বারবারই বলেছে যে, ‘আমরা উত্তমকুমারকে তো নিয়ে আসতে পারব না। ক্যারিকেচার যেন না হয়ে যায়। তুই তোর মতো কর।’ ইট’স আ রেফারেন্স।
চুলটা অন্যরকম করেছেন…
যিশু: তখন আসলে নিজের চুল বড় ছিল। ফলে থ্যাঙ্কফুলি ওই স্টাইলটা করা গিয়েছে। প্রথমে ভেবেছিলাম প্রস্থেটিক করা হবে। তারপর আমরা না করার সিদ্ধান্ত নিই। সো ছবিতে যেটা রয়েছে, ইট ইজ আ রেফারেন্স অফ উত্তমকুমার।
আপনার প্রস্তুতি কেমন ছিল?
যিশু: যেটা আগেও বলেছি, প্রস্তুতি খুব একটা নিই না। প্রস্তুতি বলতে আমি আমার শ্বাশুড়ির কাছ থেকে অনেকটাই জানতে পেরেছি। ওই সময়, ওই গল্পটা নিয়ে জানার খুব দরকার ছিল। যেটা সৌমিকের কাছ থেকেও জেনেছি। আমার কাছে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র বা পঙ্কজ মল্লিক বা উত্তমকুমার বা হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের থেকেও এক্ষেত্রে ইম্পর্ট্যান্ট হল গল্পটা, ইতিহাসটা। দ্যাটস দ্য কনটেন্ট। থ্যাঙ্কফুলি, অলরেডি আমার লুকটা বেরিয়ে গিয়েছে বলে, উত্তমকুমারের মতো আমাকে লাগছে, কি লাগছে না, মানুষ সেটায় ঢুকবে না আমার মনে হয়। কারণ লোকে বাকিটা জেনে গিয়েছে। উত্তমকুমারের মতো যিশুকে লাগছে, কি লাগছে না এটায় যদি লোকে ঢুকে যেত, তাহলে গল্পটা জানতে পারত না। কারণ গল্পটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
এটা খুব রিস্কি ছবি, আপনার মনে হয় না?
যিশু: না, আমার সেটা মনে হয় না। এতে রিস্কের কিছু নেই। একটা গল্প, একটা ইতিহাস। যেটা ঘটেছিল, সেটা তুলে ধরা হয়েছে। এটায় ভাল মন্দের কিছু নেই, এটা ঘটেছিল।
এরকম একটা পিরিয়ড ফিল্মের অংশ হওয়া, সেইটা কেমন লেগেছে?
যিশু: দারুণ। তবে অনেকদিন ধরেই তো পিরিয়ড ছবি করছি। ‘ব্যোমকেশ’ যদি বলি, সেই সিক্সটিজ-সেভেনটিজের সময়। যদি ‘এক যে ছিল রাজা’ বলি, সেটাও ছিল আর্লি নাইন্টিজ। ‘মণিকর্ণিকা’ যদি ধরি, সেটাও।
সেই, আপনিই তো এখন পিরিয়ড ফিল্মের রাজা…
যিশু: (হাসি) ইট’স নাইস টু বি পার্ট অফ হিস্ট্রি। ইনফ্যাক্ট, রিসেন্টলি যখন ‘এনটিআর’ করলাম, সেটাও কিন্তু টেকনিক্যালি আ পিরিয়ড ফিল্ম।
শুভাশিস মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আপনার অভিনয়ের টক্কর কেমন হল?
যিশু: ওঁকে টক্কর দেওয়ার মতো অভিনেতা আমি এখনও হয়ে উঠতে পারিনি। আই থিংক হি ইজ দ্য মোস্ট আন্ডারইউটিলাইজড অ্যাক্টর ইন আওয়ার ইন্ডাস্ট্রি। হি ইজ ওয়ান অফ দ্য ফাইনেস্ট অ্যাক্টরস আই হ্যাভ ইন মাই কেরিয়ার। কয়েকজন আছে এই তালিকায়। যেমন-শুভাশিসদা, খরাজদা, রনিদা। এদেরকে ভীষণ টাইপকাস্ট করে দেওয়া হয়েছে। ‘হারবার্ট’-এর মতন ছবি করার পরেও যে, কেন শুভাশিসদাকে ইউজ করা হয়নি আমি জানি না। এত বছর পর আবার একটা ছবিতে। এই ছবিটার জন্য শুভাশিসদা যদি অ্যাওয়ার্ড না পায়, আমি নিজে খুব কষ্ট পাব।
সৌমিক সেনের সঙ্গে কাজ করে কেমন লাগল?
যিশু: গ্রেট। ইনফ্যাক্ট এই ছবিটা খুব ভয়ে ভয়ে করেছিলাম। কারণ, ওই উত্তমকুমারের নামটা আমার সঙ্গে জড়িয়ে ছিল বলে। এখানে তো আমিই ওর চরিত্রে! একটা যেমন প্লাস পয়েন্ট ছিল, ওঁকে কেউ পার্সোনাল লাইফে চেনে না। বাট ওঁর কিছু ম্যানারিজম তো রাখতে হয়েছে, উনি ওই সময়ে কীভাবে কথা বলতেন, ইত্যাদি। এর প্রায় চার বছর পরে উনি মারা যাবেন, তো ওঁর বয়স হয়ে গিয়েছে। ওই বিষয়গুলো ছবিতে রাখার চেষ্টা করেছি আমরা। অ্যাকচুয়ালি একবছর আগে এই ছবিটা হওয়ার কথা ছিল, তো তখন থেকে প্রায় বছর দেড়েক আমি মোটা ছিলাম এই ছবিটার জন্য। অন্য যে ছবিগুলো এই সময় করেছিলাম, যেমন ‘এক যে ছিল রাজা’, সেখানেও মোটা হওয়া দরকার ছিল, ফলে কাজে লেগেছে।
‘মহালয়া’-র ইউএসপি কী?
যিশু: গল্প। নো ডাউট অ্যাবাউট হট। এই গল্পটা মানুষের জানা উচিত।
শুটিংয়ের মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট শট কী?
যিশু: এই ছবিটা করার সময় আমি এত ট্রেন্ড ছিলাম কী বলব। প্রত্যেকটা শটের পর সৌমিক সেনকে জিজ্ঞেস করতাম ঠিক আছে কি না। সৌমিকদার ওপর ভরসা করে ছেড়ে দিতাম। দিস ইজ দ্য মোস্ট ইন্টারেস্টিং পার্ট (হাসি)।
The post উত্তমকুমারের চরিত্রে অভিনয় করে এমনটাই মনে হয়েছিল যিশুর appeared first on Sangbad Pratidin.