সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আর এক মাসও বাকি নেই। ৩ নভেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে সাজ সাজ রব। কিন্তু তার আগেই করোনায় সংক্রমিত হয়ে খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট তথা রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প হাসপাতালে। যা তাঁর অবস্থা আরও সঙ্গীন করে তুলেছে। এমনিতেই অভিযোগ যে, প্রথম থেকে ট্রাম্প করোনা নিয়ে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। সে কারণেই এই মহামারী আমেরিকা জুড়ে এতটা ছড়িয়ে পড়েছে। সেই ধারণাই আরও জোরদার হয়েছে, তিনি নিজে সংক্রমিত হওয়ায়। সংখ্যাগরিষ্ঠ আমেরিকানই মনে করছেন, করোনাকে যথোচিত গুরুত্ব দিলে তিনি হয়ত এই বিপদ এড়াতে পারতেন, তাঁকে সংক্রমিত হতে হত না। এই ধারণার প্রভাব পড়েছে জনমত সমীক্ষাতেও। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স ও ইপসোস-এর সমীক্ষার ফল রবিবার প্রকাশিত হয়েছে। তাতে ট্রাম্পের চেয়ে প্রায় দশ পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বিডেন।
[আরও পড়ুন: সূচনার ২২ দিন পরও শুরু হল না কাবুল-তালিবান আলোচনা, আফগানভূমে কি ফিরবে শান্তি?]
করোনা আক্রান্ত হয়ে ওয়াল্টার রিড ন্যাশনাল মিলিটারি মেডিক্যাল সেন্টারে ভরতি ট্রাম্প। তাঁর অনুরাগীদের একটি দল তার বাইরে ভিড় জমিয়েছে। ট্রাম্পের দ্রুত আরোগ্য কামনার জন্য। কিন্তু ২-৩ অক্টোবরের জাতীয় জনমত সমীক্ষা বলছে, ওই ধরনের অন্ধ অনুগামীদের বাইরে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন বৃদ্ধির ইঙ্গিত তেমন নেই। ট্রাম্প বহুদিন ধরেই করোনা সংক্রমণকে হাল্কা করে দেখিয়েছেন। এমনও বলেছিলেন যে, এই ভাইরাসের প্রকোপ নিজে থেকেই কমে যাবে। ‘মাস্ক’ পরায় প্রতিদ্বন্দ্বী জো বিডেনকে গত সপ্তাহেই উপহাস করেন। অথচ করোনার আক্রমণে লক্ষ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত, অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন। স্কুল-কলেজ-বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ। এই আবহে ৩ নভেম্বর নির্বাচন। নথিভুক্ত প্রাপ্তবয়স্ক ভোটারদের মধে্য ৫১% বিডেনকে সমর্থন করছেন বলে জনমত সমীক্ষায় প্রকাশ। সেখানে ট্রাম্পের পক্ষে মাত্র ৪১%। এখনও সিদ্ধান্ত নেননি ৪%। বাকি ৪% তৃতীয় কোনও দলের প্রার্থীকে ভোট দেবেন।
গত কয়েক মাস ধরেই বিভিন্ন সমীক্ষায় ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন বিডেন। কিন্তু সেই ব্যবধান শেষ মুহূর্তে আরও এক-দু’পয়েন্ট বেড়ে গেল। তাই তাঁর সমর্থকরা ক্রমশ উৎফুল্ল হয়ে উঠছেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তরী না ডোবে, সেটা নিয়েও চিন্তা থাকছে। কারণ জনপ্রিয় ভোটে এগিয়ে থাকলেও ইলেক্টোরাল কলেজে জিততে হলে বিডেনকে যতবেশি সম্ভব প্রদেশে জিততে হবে। আর সেখানেই যত ‘টুইস্ট’। প্রাদেশিক সমীক্ষা দেখাচ্ছে, যে সমস্ত প্রদেশ জয়-পরাজয়ের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেবে, সেখানে ট্রাম্প-বিডেনের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। টক্কর চলছে সেয়ানে-সেয়ানে।
আরও একটা উল্লেখযোগ্য বিষয় উঠে এসেছে জনমত সমীক্ষায়। করোনা নিয়ে উদ্বিগ্ন অধিকাংশ মার্কিন নাগরিকই। তার মধ্যেও ৬৫% ভোটার মনে করেন, ট্রাম্প করোনা মহামারীকে ঠিক মতো গুরুত্ব দিলে নিজে সংক্রমিত হতেন না। তাঁদের মধ্যে যেমন ডেমোক্র্যাট সমর্থক রয়েছেন, রিপাবলিকান বা ট্রাম্প অনুরাগী কম নেই। মাত্র ৩৪% মনে করেন, করোনা নিয়ে ট্রাম্প যা বলেছেন, তা সত্যি। মিথ্যা বলেছেন বলে মনে করেন ৫৫%। করোনা মোকাবিলায় ট্রাম্পের ভূমিকায় অখুশি ৫৭%, যা গত সপ্তাহের সমীক্ষা থেকে ৩% বেশি। অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, নাগরিকদের নিরাপত্তা বজায় রাখতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার কাটছাঁট করা হোক। সশরীরে নির্বাচনী সভা বন্ধের পক্ষে ৬৭%। ট্রাম্প সুস্থ হয়ে ওঠা পর্যন্ত প্রেসিডেনশিয়াল ডিবেট বন্ধের পক্ষে ৫৯%। ১৫ অক্টোবর পরবর্তী বিতর্কের উপর ট্রাম্পের অসুস্থতা কী প্রভাব ফেলবে, তাও এখনও স্পষ্ট নয়। গোটা আমেরিকা জুড়েই অনলাইনে এই সমীক্ষা চালিয়েছিল রয়টার্স।