গোবিন্দ রায়: ফের নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে সিবিআইয়ের (CBI) কাজে অসন্তুষ্ট বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। মঙ্গলবার সিবিআইয়ের সিটের তদন্তকারী আধিকারিক (IO)-কে সরিয়ে দিলেন তিনি। ডিআইজিকে দ্রুত পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। আগামীকাল অর্থাৎ বুধবার এই মামলার শুনানি রয়েছে। সেই শুনানিতে সিটের নতুন তদন্তকারী অফিসার হিসেবে তিনজনের নাম প্রস্তাব করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। শুধু প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি নয়, নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগে সিবিআইয়ের উপর তীব্র অসন্তুষ্ট হাই কোর্ট। তদন্তকারী সংস্থার কাজের ধরনে বিরক্ত বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু।
২০১৪ সালের টেটে ৫ শতাংশ অতিরিক্ত প্যানেলের তদন্তে কলকাতা হাই কোর্টের (Calcutta High Court) নির্দেশে সিট গড়েছিল সিবিআই। কিন্তু তদন্তের গতি শ্লথ হওয়ায় সিট ভেঙে দিয়েছিলেন বিচারপতি। নতুন করে গঠিত হয় সিট। এর ৭ মাসের মধ্যে ফের সিটের তদন্তকারী অফিসার বা আইও সোমনাথ বিশ্বাসকে সরিয়ে দিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় (Justice Abhijit Gangopadhyay)।
[আরও পড়ুন: অমরাবতী অতীত, অন্ধ্রপ্রদেশের নতুন রাজধানীর নাম ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর]
আদালতের নির্দেশ, তদন্তের কোনও কাজে ওই আইও যুক্ত থাকতে পারবেন না। তদন্তের কোনও ফাইল স্পর্শ করতে পারবেন না তদন্তকারী। দুপুর দুটোর মধ্যে নতুন তদন্তকারী অফিসার নাম জানাবে সিবিআই, এমনই নির্দেশ দিলেন আদালত।জানা গিয়েছে, তদন্ত প্রক্রিয়ার গতি নিয়ে চূড়ান্ত বিরক্ত বিচারপতি। তাই সিটের আইওকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এদিন দুপুরেই নতুন তদন্তকারীর নাম জানানোর নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। কিন্তু সিবিআইয়ের আইনজীবী জানান, গাড়ি দুর্ঘটনার কারণে আসতে পারেননি সিবিআই আধিকারিকরা। এরপরই আগামিকাল নাম জানানোর নির্দেশ দেন বিচারপতি।
ইতিপূর্বে গত সেপ্টেম্বর মাসে সিবিআইয়ের কাজে চরম ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন বিচারপতি। টেনে এনেছিলেন খাঁচাবন্দি তোতাপাখির প্রসঙ্গও। সম্প্রতি রাজ্যের নিয়োগ দুর্নীতির একাধিক মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। রাজ্য পুলিশ, সিআইডির তদন্ত প্রক্রিয়ার উপর ভরসা রাখতে পারেননি তিনি। সিট গঠনের প্রস্তাবও নাকচ করেছিলেন। এবার সেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন বিচারপতি।
[আরও পড়ুন: ঝক্কির দিন শেষ, এবার ২৪ ঘণ্টাতেই মিলবে ড্রাইভিং লাইসেন্স!]
এদিন সকালে একটি রিপোর্ট সিল বন্ধ খামে জমা দেয় সিবিআই। সেটির সঙ্গে সিবিআইয়ের আইনজীবীর রিপোর্টে কোনও মিল নেই। বিরক্ত বিচারপতি বলেন, “দেশের একটা প্রধান তদন্তকারী সংস্থার এমন ভুল কাম্য নয়। সিবিআইয়ের ফাইল করা রিপোর্টে যা আছে তার চাইতে আইনজীবীর ফাইলে আরও বেশি তথ্য আসছে। এটা কীভাবে হয়? এটা কি আপনাদের রেপুটেশনের সঙ্গে মিল খায়?” বিচারপতির আরও সংযোজন, “আপনার ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ হচ্ছে। সব পেপার তিনবার চেক করে পাঠান উচিত। এত দেরি হচ্ছে কেন। সমাজ থেকে জঞ্জাল সরিয়ে উপযুক্তদের জায়গা করে দিন।”
একই সঙ্গে এসএসসির ভূমিকা নিয়েও সরব হয়েছেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। তাঁর কথায়, “সব কি আদালতের দায়িত্ব? আপনাকে কেউ ঠকিয়ে চলে গেল, চুপ করে বসে থাকবেন? এত ভয় কেন? যা হয়েছে মুছে এগিয়ে চলুন। নিজের ক্ষমতা কেন প্রয়োগ করছেন না? আপনার চেয়ারম্যানকে বলুন। এদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করুন।” বৃহস্পতিবার ফের রিপোর্ট দেবে সিবিআই।