গোবিন্দ রায়: বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস থেকে সরল প্রাথমিকে নিয়োগ সংক্রান্ত মামলা। এবার থেকে এই সংক্রান্ত মামলা শুনবেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চে প্রধান শ্রমিক ও শিল্প সংক্রান্ত মামলার শুনানি হবে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ও বিচারপতি সৌমেন সেনের নজিরবিহীন সংঘাতের মাঝেই হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের এই সিদ্ধান্ত বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। এদিকে অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্তের ‘অপমানে’র জেরে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমকে চিঠি দিয়েছেন ২৫৩ জন অ্যাডভোকেট।
মেডিক্যাল নিয়োগে দুর্নীতি মামলায় নজিরবিহীন সংঘাতে জড়িয়েছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের দুই বিচারপতি। বিচারপতি সৌমেন সেন, রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্তকে বেনজিরভাবে আক্রমণ করেছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। যার জল গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। এদিন হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতিও এ নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন। বলেন, এজলাস শেষ করে উঠে যাওয়ার সময় তিনি জানান, ”যা হয়েছে, তাতে আমি অত্যন্ত দুঃখিত এবং লজ্জিত। আদালতে এটা আশা করা যায় না।” তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘এটা দেশের ঐতিহ্যশালী হাই কোর্ট। এই অপ্রীতিকর পরিস্থিতি অনেক সাধারণ মানুষের উপর প্রভাব ফেলছে। আমরা এই সমস্যার সমাধান করার সবরকম চেষ্টা করছি।’’ এদিকে অ্যাডভোকেট জেনারেলকে ‘অপমানে’র জেরে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমকে চিঠি দিয়েছেন ২৫৩ জন অ্যাডভোকেট। তাঁদের দাবি, গত ২৫ জানুয়ারি এজি-কে যে ধরনের কথা বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন তা ‘মানহানিকর, নিন্দনীয় এবং অমাননাকর।’ তাঁদের মতে, বিচারপতির ওই মন্তব্য কলকাতা হাই কোর্টের পক্ষেও ‘অবমাননাকর’। এসবের মাঝেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস থেকে প্রাথমিকের মামলা সরিয়ে নেওয়া হল।
[আরও পড়ুন: বাজেট অধিবেশনেই CAA লাগুর পরিকল্পনা! কোন পথে হাঁটছে কেন্দ্র?]
সাধারণত আদালতে কে কোন মামলা শুনবেন, তা ঠিক হয় রস্টার মারফত। আর এই রস্টার ঠিক করেন ‘মাস্টার অফ রস্টার’ অর্থাৎ আদালতের প্রধান বিচারপতি। এদিন সেই পদে থাকা বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের স্বাক্ষরিত নির্দেশিকায় জানানো হয়, প্রাথমিক নিয়োগ সংক্রান্ত মামলা বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস থেকে সরানো হল। তবে শিক্ষা দুর্নীতিতে গ্রেপ্তারি সংক্রান্ত কিছু মামলা থাকছে তাঁর হাতেই। তবে কেন এই বদল, সে সম্পর্কে নির্দেশিকায় কিছু জানানো হয়নি।
বছর খানেক আগে হাই কোর্টের রস্টার বদল করেছিলেন আদালতের প্রধান বিচারপতি। সেই সময় শিক্ষা সংক্রান্ত মামলা শুনতেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ই। পরবর্তী সময় এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলা তাঁর এজলাস থেকে সরিয়ে আনা হয়। তবে প্রাথমিকের মামলাগুলি এতোদিন তাঁর হাতেই ছিল। এ প্রসঙ্গে বলে রাখা দরকার, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস থেকে নিয়োগ সংক্রান্ত মামলা সরানোর দাবি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্য় সরকার এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।