সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ১৭৫৩ খ্রিস্টাব্দ বাংলার সামাজিক ইতিহাসে অতি গুরুত্বপূর্ণ এক সময়কাল। ওই বছরই অখণ্ড বাংলায় এক নতুন গোষ্ঠীর উত্থান হয়, যাদের পরবর্তীকালে 'বাঙালি ভদ্রলোক' শ্রেণি বলা হবে। নেপথ্যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষিত তথা ও দক্ষ স্বদেশি কর্মী নিয়োগ। বাংলার নবজাগরণে এই ঘটনার বিশেষ প্রভাব রয়েছে। ফলস্বরূপ, স্বাধীনতার পরেও সর্বভারতীয় পর্যায়ে অধিকাংশ প্রশাসনিক উচ্চপদে ছিলেন এই 'বাঙালি ভদ্রলোকরা'ই। যা বর্তমানে তলানিতে। তথাপি সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) বিচারপতি অনিরুদ্ধ বোসের (Justice Aniruddha Bose) অবসরের দিনে বাঙালির সেই গর্বের ঐতিহ্যকে মনে করিয়ে দিলেন শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় (DY Chandrachud)। বিচারপতি বোসকে 'বাঙালি ভদ্রলোক' বলে সম্বোধন করলেন তিনি। ভরিয়ে দিলেন প্রশংসায়।
বুধবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে পাঁচ বছরের কর্মকাল সম্পূর্ণ করেন বিচারপতি বোস। কর্মজীবনের শেষ দিনে তাঁকে আনুষ্ঠানিক বিদায় জানাতে শীর্ষ আদালতের এজলাসে প্রধান বিচারপতি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল আর ভেঙ্কারাটারমানি, সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা, প্রবীন আইনজীবী এ এম সিংভি, দুষ্যান্ত দাভে, সুকুমার পতজোশি প্রমুখ। সকলেই বিচারপতি বোসের বিচারবোধ, মেধা ও সাবেকি ঐতিহ্যের ছোঁয়ায় উজ্জ্বল অন্যন্য চরিত্রের প্রশংসা করেন। নিজের বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচারপতি বোস 'বাঙালি ভদ্রলোকে'র আদর্শ উদাহরণ। যাঁর মেধাবৃত্তির সঙ্গে তুলনীয় পাটভাঙা ধুতি-পাঞ্জাবি।
[আরও পড়ুন: সন্দেশখালিতে CBI, শাহজাহান বলছেন, ‘ইডি হলে সবচেয়ে ভালো’]
প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, 'বহু বিষয়ে গভীর পঠনপাঠন বিচারপতি বোসের ক্ষুরধার মেধা তথা বিরাট জ্ঞানভাণ্ডারের উৎস।' তিনি আরও জানান, এই কারণেই প্রজ্ঞাবান প্রধান বিচারপতিকে এবার ভোপলের ন্যাশানাল জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমির চেয়ারপার্সন করা হচ্ছে। বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের কথায়, 'ন্যাশানাল জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমির প্রধান হিসেবে বিচারপতি বোসের চেয়ে ভালো কেউ হতেই পারে না।'
বিচারপতি বোস কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের বাণিজ্য বিভাগের উজ্জ্বল ছাত্র। পরবর্তীকালে সুরেন্দ্রনাথ কলেজ থেকে আইন (LLB) পাশ করেন। ১৯৮৫ কলকাতা হাই কোর্টে পেশাদার আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন। ২০০৪ সালের জানুয়ারিতে হাই কোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হন। ২০১৮ সালে ঝাড়খণ্ড হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি হন। এক বছর পরে ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের অন্যতম বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হন।
[আরও পড়ুন: আপনাদের সাক্ষাৎ পাওয়া আল্লার মেহেরবানি, রেড রোডের নমাজ কোনওদিন মিস করব না: মমতা]
উল্লেখ্য, বিচারপতি বোস ছাড়াও চলতি বছরে শীর্ষ আদালতের আরও তিন বিচারপতি কার্যকাল পূর্ণ করবেন। আগামী ১৯ মে অবসর নেবেন বিচারপতি আজ্জিকুট্টিরা সোমনাথ বোপান্না, ১ সেপ্টম্বরে অবসর নেবেন বিচাপতি হিমা কোহলি, ১০ নভেম্বর কার্যকাল ফুরোবে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের। নিয়ম মতো পরদিন ১১ নভেম্বর বিচারপতি সঞ্জীব খান্না সুপ্রিম কোর্টের ৫১তম প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হবেন।