সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: বনগাঁয় ‘দিদির দূত’ কর্মসূচিতে গিয়ে বেফাঁস তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার। এলাকার রাস্তা সংস্কারের দাবিতে সরব হন স্থানীয়রা। তখনই সাংসদ বলেন, “ভোট দিলে রাস্তা হবে, পরেরবার ভোট দিক, তারপর করব।” একথা শুনে কার্যত অগ্নিশর্মা হয়ে যান এক মহিলা। তিনি চিৎকার করে বলেন, “সবাই তো বিজেপির না। তৃণমূলের তো আছে। আমরা তৃণমূলের। তাহলে আমরা তৃণমূলকে ভোট দেব না। আমরা পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলকে ভোট দেব না। তারপর দেখি পঞ্চায়েতে কি হয়।” যদিও পরে কাকলি ঘোষ দস্তিদার বলেন, “মজা করছিলাম, রাস্তার জন্য লিখে নেওয়া হয়েছে, রাস্তা হবে।”
এদিকে, বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটি ব্লকে ‘দিদির দূত’ হয়ে জনসংযোগ সারেন দক্ষিণ কলকাতার সাংসদ মালা রায়। জেনাডিহি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড ডে মিলের হালহকিকত খতিয়ে দেখতে যান। প্রধান শিক্ষক সাক্ষীগোপাল মণ্ডলের সঙ্গে কথা বলেন সাংসদ। সাংসদ প্রশ্ন করেন, ওই বিদ্যালয়ের মিড ডে মিল যাচ্ছে কোথায়? সরকারি সমস্ত ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও কেন কোনও নজরদারি নেই? তদন্তের দাবিও জানান। সেই সময় প্রধান শিক্ষক সাংসদকে বকেয়া ডিএ নিয়ে প্রশ্ন করেন বলেই অভিযোগ। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগও করা হয়। তারপরেই নড়েচড়ে বসেছে জেলা প্রাথমিক স্কুল শিক্ষাদপ্তর। বাঁকুড়া জেলা শিক্ষা সংসদে হাজিরার নির্দেশও দেওয়া হয়।
[আরও পড়ুন: ‘একঘেয়ে হয়ে যাচ্ছে’, নিয়োগ মামলায় সিবিআই তদন্তের গতিতে ক্ষুব্ধ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়]
যদিও বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে তিনি বলেছিলেন দক্ষিণ কলকাতার সাংসদকে হাতের নাগালে পেয়ে বকেয়া ডিএ নিয়ে রাজ্য সরকারের অবস্থান জানতে চাওয়াতেই তাঁর বিরুদ্ধে মিড ডে মিলের গরমিলের অভিযোগ উঠছে। তবে এপ্রসঙ্গে শুক্রবার একটি বাক্যও খরচ করেননি তিনি। তবে জেলা প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা সংসদ সূত্রে খবর ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগ রয়েছে। মূলত যে অভিযোগ রয়েছে তা হল তিনি প্রধান শিক্ষক থাকাকালীন গত এক বছরে ২০জন পড়ুয়া কমেছে, স্কুল প্রাঙ্গণ অপরিচ্ছন্ন, মিড ডে মিলে গরমিল। শুক্রবার ওই প্রধাশিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর জেলা প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান বসুমিত্রা সিংহ পাণ্ডে বলেন, “ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করেছি।” জেলা প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা দপ্তরের পরিদর্শক জগবন্ধু বন্দোপাধ্যায় বলেন, ওই প্রধান শিক্ষকের কাছে গত বৃহস্পতিবারের সম্পূর্ণ ঘটনা জানতে চাওয়া হয়। ওই ঘটনা শোনার পরেই ওই স্কুল শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই কমিটিতে ওই গঙ্গাজলঘাটি ব্লকের ১ জন এস আই এবং জেলা প্রাথমিক স্কুল পরিদর্শক দপ্তরের ২ জন এ আই থাকবেন। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি ওই প্রধানশিক্ষকের বিরুদ্ধে ওঠা মিড ডে মিলে গরমিলের অভিযোগ খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দেবেন।
পাশাপাশি মন্তেশ্বরের মূলগ্রাম এলাকার মহিলাদের প্রশ্নের মুখে সেচ ও জলপথ দপ্তরের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক। মন্ত্রীকে তাঁরা প্রশ্ন করেন, “জব কার্ড করতে গেলে কি পাঁচ-ছয় হাজার টাকা লাগে? যে পাঁচ দিনে দশ দিনে করে দেব বলে।” এরপরেই তারা অভিযোগ তুলে জানান, “আমরা গরিব মানুষ। দিন আনা দিন খাওয়া পরিবার। একশো দিনের বই হয়নি। করে দেয়নি। জব কার্ড তৈরির জন্য পাঁচ-ছয় হাজার টাকা লাগবে বলে তারা জানান। আমরা এত টাকা কোথায় পাব?” কারা টাকা চেয়েছেন সংবাদমাধ্যমের সেই প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন, “টাকাটা কে চেয়েছে বলা যাবে না। আমাদের বলতে নিষেধ করেছে। তাই বলতে পারব না।” তারা অভিযোগ তুলে এও জানান, “আমাদের কাঁচা বাড়ি, মাটির ঘর থাকলেও আবাস যোজনা প্রকল্পের ঘর পাইনি। এখানে কোনও উন্নতি নেই। রাস্তাঘাট, নর্দমা, পানীয় জলের কোনও ব্যবস্থা নেই। ভোটের সময় আসেন প্রতিনিধিরা। ভোট হয়ে গেলেই ভুলে যায়।” এদিনের এই ক্ষোভকে সামাল দিতে মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক তার নিজের ফোন নম্বর দিয়ে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। সমাধান না হলে দেড়মাস পর ফোন করে তাকে জানানোর কথাও জানান মন্ত্রী।