অর্ণব দাস, বারাসত: আলোর উৎসবে খ্যাতির কেন্দ্রে যদি হয় বারাসত, তবে তার পরিধির মধ্যে অবশ্যই পড়ে মধ্যমগ্রাম। উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সদরের সঙ্গে বরাবরই পাল্লা দেয় পার্শ্ববর্তী এই এলাকা। এবছরও এয়ারপোর্ট লাগোয়া এই শহর পিছিয়ে নেই কালীপুজোর আয়োজনে। 'চক্রব্যূহ' থেকে 'স্মৃতিকথা' - থিমের মাঝে কোথাও তৈরি হচ্ছে ডিজনিল্যান্ড, কোথাও আবার রাজস্থানের চিতোর দুর্গ। আবার মানুষের আগ্রহ বাড়াতে ঐতিহ্যবাহী যাত্রা শিল্পও পুজো মণ্ডপে ফুটিয়ে তুলছেন উদ্যোক্তারা।
মধ্যমগ্রাম চৌমাথা লাগোয়া ইয়ং রিক্রিয়েশন ক্লাবের মণ্ডপ। নিজস্ব চিত্র।
প্রতি বছরের মত এবছরও নজর কাড়তে চলেছে মধ্যমগ্রাম চৌমাথা লাগোয়া ইয়ং রিক্রিয়েশন ক্লাব। যেই মন্দিরে রানা প্রতাপ শিবের উপাসনা করতেন, রাজস্থানের চিতোর দুর্গের সমাধিসভার সেই মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি করছেন উদ্যোক্তারা। সঙ্গে ৩৭ তম বর্ষের পুজোর বিশেষ আকর্ষণ চন্দননগরের আলোকসজ্জা। পুজোর অন্যতম প্রধান কর্মকর্তা অভিজিৎ নন্দী বলেন, "মণ্ডপের উচ্চতা ৮৫ ফুট। নতুন থেকে পুরাতনের ভাবনা নিয়ে স্থাপত্য ফুটিয়ে তুলতে ব্যবহার করা হচ্ছে চাইনিজ ফাইবার, কাঁচ-সহ নানা উপকরণ। থিমের সঙ্গে সাজুয্য রেখেই প্রতিমা তৈরি করছেন প্রদীপ রুদ্র পাল।"
আর জি করে নির্যাতিতা তরুণী চিকিৎসক নিয়ে রাজ্য তথা দেশজুড়ে চলা আন্দোলনের প্রেক্ষিতে মেঘদূত শক্তি সংঘের ৫৩তম বর্ষের ভাবনা 'চক্রব্যূহ'। থিমের মাধ্যমে উদ্যোক্তারা নারীর উপর শোষণ, নিপীড়নের চক্রব্যূহ থেকে মুক্তির বার্তা দিতে চাইছেন। পুজো কমিটির উদ্যোক্তা গণেশ ঘোষ জানিয়েছেন, ''আমাদের বুঝতে হবে, সমাজটা যতটা পুরুষের, ততটা নারীরও। এই ভাবনা থেকেই থিমের চিন্তা।'' জাঁকজমকের নিরিখে মধ্যমগ্রামের অন্যতম কালীপুজো মাইকেলনগর নেতাজি সংঘ। ৫৭ তম বর্ষে উদ্যোক্তারা ঝাড়খণ্ডের মাইথন ম্যারেজ প্যালেসের আদলে মণ্ডপ তৈরি করছেন। সঙ্গে বিশেষ চমক থাকছে কলকাতা-সহ মুম্বই খ্যাত শিল্পীদের সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের পাড়ার পুজো হওয়ায় পুজোর কটা দিন তিনি মণ্ডপেই থাকেন। রবীন্দ্রপল্লী অ্যাথলেটিক ক্লাব এ বছরের মণ্ডপ তৈরি করছে ডিজনিল্যান্ডের আদলে। মণ্ডলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই তৈরি হয়েছে মাতৃ প্রতিমা।
মধ্যমগ্রামের মাইকেলনগর নেতাজি সংঘের মণ্ডপ। নিজস্ব ছবি।
কালের নিয়মে হারিয়ে যেতে বসেছে বাংলার ঐতিহ্যবাহী যাত্রা। তাই ৩৭ তম বর্ষে বাংলার ঐতিহ্যবাহী যাত্রা শিল্পকে নিয়েই শক্তি আরাধনার আয়োজন করছে মধ্যমগ্রাম মিলন চক্র। গোটা মণ্ডপ জুড়ে থাকছে পুরনো দিনের যাত্রার পোস্টার। থাকছে অভিনেতা, অভিনেত্রীদের কাটআউট-সহ মডেল। পুজো কমিটির উদ্যোক্তা প্রভাস গোপ বলেন, "বাংলার কৃষ্টি, সংস্কৃতির ধারক হল যাত্রা। বহু কলাকুশলী একসময় এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বাংলার হারিয়ে যাওয়া এই সংস্কৃতিকে আমরা দর্শনার্থীদের উপহার দিচ্ছি।"
মধ্যমগ্রামের পূর্বাশা যুব পরিষদের প্রতি বছরের পুজোতেই থিমে নতুনত্ব ভাবনা থাকে। সেই ধারা মেনেই ৩৬ তম বর্ষের কালীপুজোয় তাদের থিম 'স্মৃতিকথা'। উদ্যোক্তাদের দাবি, মণ্ডপে ঢুকলেই শৈশবের স্মৃতিতে হারিয়ে যাবেন দর্শনার্থীরা। মণ্ডপসজ্জার পাশাপাশি আলো ও শব্দের জাদুকরীতে সুনিপুণভাবে শৈশবের স্মৃতিকথা তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। উদ্যোক্তা রাজীব সরকার জানান, ''শৈশবের মধুর স্মৃতি এবার আমরা থিমের মাধ্যমে তুলে ধরেছি। আশা করছি, ছোট থেকে বড় সকলের ভালো লাগবে।''