অভিষেক চৌধুরী, কালনা: রাস্তা দিয়ে ছুটছে দ্রুতগামী গাড়ি। স্ট্রেচারে রোগীকে শুইয়ে সেই রাস্তা দিয়েই টানতে টানতে সিটি স্ক্যান করাতে নিয়ে যাচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। কালনা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের রোগীর এমন ছবি দেখে শিউরে উঠছেন অনেকেই। হাসপাতালের গাফিলতি ও উদাসিনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। হাসপাতালের ফ্রি অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা থাকতেও কেন এমন পরিস্থিতি তৈরি হল, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে হাসপাতালের অ্যাসিন্ট্যান্ট সুপার জানান, আগামী দিনে যাতে এইরকম ঘটনা না ঘটে সেই বিষয়ে আরও কড়া পদক্ষেপ করা হচ্ছে।
হাসপাতাল ও রোগীর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মেমারি থানার মহিষপুর এলাকার বাসিন্দা সাহার আলি মল্লিক। শুক্রবার সন্ধেয় বাড়ি ফেরার সময় তিনি গুরুতর আহত হন। চোট লাগে মাথায়। ভর্তি করা হয় কালনা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। রোগীর সিটি স্ক্যান করাতে বলেন চিকিৎসকর। এর পরই পরিবারের সদস্যরা বৃদ্ধ রোগীকে হাসপাতালের দোতলা থেকে স্ট্রেচারে করে নিচে নামান। শুধু তাই নয়, স্ট্রেচারে চাপিয়ে তাঁকে হাসপাতালের বাইরে বের করে আনেন। অন্যতম ব্যস্ত এসটিকেকে রোডের উপর দিয়েই স্ট্রেচার চাপিয়ে রোগীকে স্ক্যান করাতে টেনে নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা। অমানবিক ছবি উঠে আসতেই চোখ কপালে উঠেছে সকলের। প্রশ্ন উঠছে, হাসপাতালের বিনামূল্যে অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা থাকতেও এভাবে রোগীকে নিয়ে যাওয়া হল কেন?
[আরও পড়ুন: চিনের নিউমোনিয়া কি হানা দিতে পারে রাজ্যেও? কী বলছেন চিকিৎসকরা?]
যদিও রোগীর পরিবারের দাবি, ফ্রি অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবার বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়নি। বৃদ্ধের ছেলে সাবর আলি মল্লিক জানান,“চিকিৎসক বাবাকে সিটি স্ক্যান করাতে বলে। হাসপাতালে সিটি স্ক্যানের ব্যবস্থা নেই। তাই বাবাকে দোতলা থেকে স্ট্রেচারে করে নামাই। বাইরে যাওয়ার জন্য বাবাকে টোটোয় তুলতে গেলেও তিনি চাপতে পারেননি। অন্য গাড়ি ভাড়া করব, সেই টাকা ছিল না। হাসপাতাল থেকেও ফ্রি অ্যাম্বুল্যান্সের কথা কিছুই জানায়নি আমাদের। তাই রাস্তার উপর দিয়েই স্ট্রেচার ঠেলে বাবাকে নিয়ে যাই।”
এ প্রসঙ্গে হাসপাতালের অ্যাসিন্ট্যান্ট সুপার গৌতম বিশ্বাস বলেন, “যে পরীক্ষাগুলো এই হাসপাতালে হয়না, সেগুলো বাইরে করতে হয়। প্রত্যেক ওয়ার্ডে একটি রেজিস্টার দেওয়া আছে। সেখানে রোগীর পরিবার সই করে নিজের দায়িত্বে রোগীকে বাইরে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করান। আজও সেই ঘটনাই ঘটেছে। তবে হাসপাতালের সরকারি গাড়ি রয়েছে। সেই ব্যবস্থা আমরা করে দিই। এক্ষেত্রে রোগীর পরিবার কোনও যোগাযোগ না করাতেই এই ঘটনা ঘটেছে।” তিনি আরও জানান, “এই ঘটনা সত্যিই অমানবিক। যে কোনও বিপদ হতেই পারতো। পুলিশ প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে ওরা চলে গিয়েছে। দ্বিতীয়বার এমন ঘটনা যাতে না ঘটে সেই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।”