অভিষেক চৌধুরী, কালনা: করোনা (Corona Virus) আবহে স্কুল বন্ধ থাকায় খোলামেলা সেই পরিবেশ ও বন্ধু-বান্ধবদের না পাওয়ায় শিশুমন বেশ ভারাক্রান্ত। অনলাইনে ক্লাস করতে কিছুদিন ভাল লাগলেও এখন আর তা ভাল লাগছে না। প্রান্তিক ছাত্রছাত্রীদের কাছে আবার অনলাইন ক্লাসের উপায়ও নেই। দমবন্ধ করা এমনই এক পরিস্থিতির মধ্যে হাঁপিয়ে উঠেছে ছাত্রছাত্রীরা। তাদের কথা ভেবেই খোলা আকাশের নিচে গাছতলায় ‘বেড়াভাঙা পাঠশালা’ চালাচ্ছেন পূর্বস্থলী ১ ব্লকের দোগাছিয়া পঞ্চায়েতের মিনাপুরে থাকা গৃহশিক্ষক সমন্বয় সমিতির শিক্ষকরা।
অভিভাবকদের অনুমতি নিয়ে কোভিড (COVID-19) বিধি এবং সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে কিছু ছাত্রছাত্রীদের নিয়েই এই ক্লাস চলছে। ৩৫ জন গৃহশিক্ষক নিয়ে তৈরি ওই সংগঠনের শিক্ষকরা বেশ কয়েকমাস ধরে পড়িয়ে চলেছেন ছাত্রছাত্রীদের। করোনা সংক্রমণের মধ্যেও সকলের অগোচরে এইভাবেই শুধু প্রথাগত শিক্ষাতেই নয়, সাধারণ জ্ঞান-সহ ব্যবহারিক শিক্ষাতেও পড়ুয়াদের শিক্ষিত করে তুলছেন তাঁরা।
[আরও পড়ুন: নকল স্বর্ণমুদ্রার বিনিময়ে ১২ লক্ষ টাকা হাতানোর অভিযোগ, প্রতারিত TMC নেতা]
সবুজ গাছে ঘেরা পরিবেশে, খোলা আকাশের নিচে বসে পড়ানো হয় ছাত্রছাত্রীদের। সেই কারণেই কংক্রিটের মেঝে তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছে একটি ব্ল্যাক বোর্ড। খোলামেলা পরিবেশে এমনই লেখাপড়ায় বেজায় খুশি ছাত্রছাত্রীরাও। মঙ্গলবার ‘বেড়াভাঙা পাঠশালা’ নাম দিয়ে পড়ুয়াদের জন্য নতুন একটি পড়াশোনার জায়গা আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয়। গৃহশিক্ষক সংগঠনের সভাপতি জুলফিকার আলি মণ্ডল বলেন, “করোনা সংক্রমণে ছাত্রছাত্রীরা স্কুলের পরিবেশে থাকতে না পেরে কার্যত গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে মানসিকভাবে তারা বিধ্বস্ত হয়ে পড়ছে। সেই কথা ভেবেই গৃহশিক্ষকরা সকলে মিলে ছাত্রছাত্রীদের এইভাবে বিনামূল্যে পড়িয়ে চলেছি। কোভিডের সরকারি বিধি মেনেই তা শুরু করা হয় বেশ কয়েকমাস আগে থেকে। প্রথমে তেমন সাড়া না পেলেও এখন বেশ ভাল সাড়া পাচ্ছি।”
সাহাবুল মল্লিক ও সিরাজুল খান নামের অভিভাবকরা জানান, প্রথমে সংক্রমণের আতঙ্ক ছিল। মুখে মাস্ক লাগিয়ে, স্যানিটাইজার ব্যবহার করে সামাজিক দূরত্ব বিধি থেকে সরকারি বিধি মেনে অল্প সংখ্যক ছাত্রছাত্রী নিয়ে এত ভাল ব্যবস্থাপনার জন্য সাধুবাদ জানান। শান্তিনিকেতনের ধাঁচে পরিবেশ তৈরি করে কোভিড বিধি মেনে গৃহশিক্ষকদের এই ধরনের শিক্ষাদানে প্রশংসায় মুখর অন্যান্য অভিভাবকরাও। ভারচুয়াল ও অ্যাকচুয়াল ক্লাসের পার্থক্য বুঝতে পারছেন বলেও জানান।