সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সালটা ছিল ১৯৯৯৷ মে মাসেও পুরু বরফের আস্তরণে ঢাকা কার্গিলের পাহাড়ি অঞ্চল৷ কনকনে ঠান্ডায় পেটের দায়ে কাজে বেরিয়েছিলেন এক মেষপালক৷ ভারত-পাক সীমান্তের এই জায়গা তাঁর নখদর্পণে৷ তবে আর পাঁচটা দিনের থেকে এই দিনটি ছিল আলাদা৷ হঠাৎই তাঁর নজরে আসে পাক সেনার সন্দেহজনক গতিবিধি৷ সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় সেনাকে খবর দেন তিনি। ১৯৯৯ সালের ৫ মে সেনার একটি দলকে পাহাড়ে পাঠানো হয়। কিন্তু নির্মমভাবে হত্যা করা হয় তাঁদের। এরপরই সজাগ হয়ে ওঠে নর্থ ব্লক। একের পর এক হামলার জবাব ভারতও দিতে শুরু করে। আর এভাবেই কার্গিল হয়ে ওঠে ঐতিহাসিক যুদ্ধক্ষেত্র। আর হাতে গোনা কয়েকটা দিন পরেই ২৬ জুলাই। এদিন দেশজুড়ে পালিত হয় কার্গিল বিজয় দিবস। সেই উপলক্ষে জেনে নেওয়া যাক কার্গিল সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য--
বিশ্বের সবথেকে উঁচু স্থানে হওয়া যুদ্ধগুলির মধ্যে অন্যতম কার্গিল যুদ্ধ (Kargil War)। সরকারি সূত্রের খবর অনুযায়ী, এই লড়াইয়ে ভারতের অন্তত ৫৩৭ জন জওয়ান শহিদ হন। আহত হন প্রায় ১ হাজার ৩৬৩ জন জওয়ান।
প্রায় দু'লক্ষ সেনার উপর ‘অপারেশন বিজয়’-এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কার্গিলে মোতায়েন ছিলেন প্রায় ৩০,০০০ ভারতীয় জওয়ান। হানাদের নিকেশের পর ভারতীয় সেনা যখন তাদের তল্লাশি চালায়, প্রত্যেকের থেকে পাকিস্তানের পরিচয়পত্র পাওয়া যায়।
পাকিস্তানের দাবি অনুযায়ী, কার্গিল যুদ্ধে সে দেশের ৩৫৭ জন সৈনিকের মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু ভারতীয় সেনার তদন্তে অন্য তথ্য উঠে এসেছিল। জানা যায়, সেই যুদ্ধে প্রতিবেশী দেশের তিন হাজারেরও বেশি সেনা প্রাণ হারিয়েছিলেন। যাঁদের বেশিরভাগই পাকিস্তানের প্যারা মিলিটারি ফোর্সের জওয়ান ছিলেন। ১৯৯৯ সালের পর এঁদের রেগুলার রেজিমেন্টে শামিল করা হয়।
কার্গিল যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে ১৯৯৯ সালের ২৮ মার্চ তৎকালীন পাক সেনা প্রধান পারভেজ মুশারফ নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। আর ভারতে নাকি এক রাত কাটিয়েও গিয়েছিলেন।
এক পাক সংবাদমাধ্যম দাবি করেছিল, সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ নাকি কার্গিল যুদ্ধের ব্যর্থতা স্বীকার করে নিয়েছিলেন। আর প্রায় তিন হাজার পাকিস্তানি জওয়ানের মৃত্যুর খবরেও সত্যতাও স্বীকার করেছিলেন।
[আরও পড়ুন: নগ্ন করে হাঁটিয়ে নিয়ে গিয়ে মহিলাদের ‘গণধর্ষণ’! মণিপুরের ভাইরাল ভিডিও ঘিরে তুঙ্গে বিতর্ক]
শোনা যায়, ১৯৯৮ সাল থেকেই কার্গিলে অনুপ্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছিল পাক সেনা। প্রায় ৫০০০ জওয়ানকে কার্গিলে প্রবেশের জন্য পাঠিয়েছিলেন মুশারফ। ভারত-পাকিস্তান দুই দেশই তখন পারমাণবিক শক্তিধর দেশ ছিল। যুদ্ধে পিছিয়ে পড়ে ভারতের বিরুদ্ধে নাকি পারমাণবিক শক্তি প্রয়োগের পরামর্শও দিয়েছিলেন সেনা প্রধান মুশারফ।
কার্গিল যুদ্ধে ভারতীয় এয়ারফোর্সের ‘সফেদ সাগর’ অপারেশন খুবই কার্যকর ছিল। প্রথমবার এই যুদ্ধেই ভারত ৩২ হাজার ফুট উচ্চতা থেকে যুদ্ধবিমান ব্যবহার করেছিল। এত উচ্চতায় পরিস্থিতি এতটাই প্রতিকূল হয় যে, প্রশিক্ষিত পাইলটেরও বিমানের ভিতর দম বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
কার্গিল যুদ্ধে প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার গোলাগুলি ও রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটি প্রথম এমন লড়াই ছিল, যেখানে একটি দেশ নিজের শত্রু দেশের উদ্দেশে এত গোলাগুলি ছুঁড়েছিল। ১৯৯৯ সালের ২৬ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী কারগিল যুদ্ধের ইতি ঘোষণা করেন।