সোমনাথ রায়: জম্মু-কাশ্মীরের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে দেখা যেতে চলেছে শয়ে শয়ে নির্দল প্রার্থীকে।সদ্য হওয়া লোকসভা নির্বাচনে বারামুল্লা কেন্দ্রে ঘটেছে অঘটন। ইন্দ্রপতন করে দু’লক্ষের বেশি ভোটে ওমর আবদুল্লাকে হারিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন নির্দল প্রার্থী আবদুল ওরফে ইঞ্জিনিয়ার রশিদ। ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ মতাদর্শে বিশ্বাসী রশিদ রাষ্ট্রদ্রোহে অভিযুক্ত হয়ে তিহাড়ে বন্দি। রশিদের জয়ে অক্সিজেন পেয়েছে উপত্যকার মূলধারার রাজনীতি থেকে দূরত্ব রেখে চলা একটি অংশ। তারা মনে করছে, আবদুল যদি জিততে পারেন, তাহলে একই পথে সাফল্য পেতে পারেন আরও অনেকে। তাই বিপুল সংখ্যক নির্দল প্রার্থী ইতিমধ্যেই নিজেদের মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। প্রথম দফার ২৪টি আসনে অংশ নিচ্ছেন ২৭৯ জন নির্দল প্রার্থী। কাশ্মীরের স্বাভাবিক নিয়মে বাকি দুই দফায় সেই সংখ্যা বাড়বে আরও।
নির্দল প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নের জন্য রশিদ ফ্যাক্টর ছাড়া কাজ করছে আরও একটি বিষয়। বিচ্ছিন্নতাবাদী বেশ কিছু সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে রাখা আছে দীর্ঘদিন। ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট সংসদে জম্মু-কাশ্মীর পুনর্গঠন বিল পেশ হওয়ার সময় আরও অনেকগুলি সংগঠনকে নতুন করে নিষিদ্ধের তালিকায় ঢোকানো হয়। এদের মধ্যেই বেশ কয়েকটি সংগঠন নির্বাচন কমিশন ও কেন্দ্রের কাছে আবেদন করেছিল তাদের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য। বক্তব্য ছিল, তারাও ভারতের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ হতে চায়। তবে সেই আবেদনে এখনও পর্যন্ত আমল দেওয়া হয়নি। ফলে নিয়মের ফাঁক খুঁজে তারা নিজেদের প্রার্থীদের নির্দল হিসেবে মনোনয়ন পেশ করানোর চিন্তাভাবনা ও প্রক্রিয়া শুরু করেছে। যাদের মধ্যে রয়েছে জামাত-এ-ইসলামি। সংগঠনের প্রতি নিষেধাজ্ঞা তোলার আর্জি খারিজ হয়ে যাওয়ার পর যারা প্রকাশ্যেই ঘোষণা করেছে যে, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তারা নির্দল হিসেবে লড়াই করবে।
[আরও পডুন: গোমাংস খাওয়ার ‘অপরাধ’! বিজেপিশাসিত হরিয়ানায় পিটিয়ে ‘খুন’ বাংলার শ্রমিককে]
ইতিমধ্যেই জামাতের তিন সদস্য নিজেদের ‘প্রাক্তন’ বলে উল্লেখ করে নির্দল হিসাবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন ন্যাশনাল কনফারেন্সের সহ-সভাপতি ওমর আবদুল্লাও। রবিবার তিনি জানিয়েছেন, “এটাই তো আমাদের গণতন্ত্রের আকর্ষণীয় বিষয়। যে কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। ওরাও নিক, ক্ষতি কী? আমি স্বাগত জানাচ্ছি। জনতার কাছে নিজেদের বক্তব্য রাখুক। বাকিটা তো মানুষ ঠিক করবেন, কাকে তাঁরা বাছাই করবেন।” কটাক্ষ করে জুড়েছেন, “এতদিন ওদের কাছে নির্বাচন হারাম ছিল, এখন হালাল হয়ে গিয়েছে।” উল্লেখ্য, নয়ের দশকে উপত্যকা উত্তাল হওয়ার সময় থেকে নির্বাচন বয়কট করে এসেছে জামাত।
[আরও পডুন: আরজি কর কাণ্ডে শ্রেয়ার প্রতিবাদ, পিছিয়ে দিলেন কলকাতার কনসার্ট]
৯০ আসনের জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভা ত্রিশঙ্কু বিধানসভা হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এই পরিস্থিতিতে কিং মেকার হতে পারেন নির্দল প্রার্থীরাই। দেখার শুধু ৯০ আসনের মধ্যে কতজন নির্দল প্রার্থী শেষ পর্যন্ত শেষ হাসি হাসতে পারেন।