সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ফের এক ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা। ফের প্রাণহানি। সোমবার কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার গাফিলতি কার? এখন কাঁটাছেঁড়া চলছে তা নিয়েই। এই ঘটনায় আরও একবার চর্চায় ‘কবচ’। এই প্রযুক্তি ট্রেনে থাকলে এড়ানো যেত আজকের ঘটনা। এমনটাি মনে করছেন অনেকে।
করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার স্মৃতি উসকে এদিন নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন ছেড়ে রাঙাপানি ও চাটারহাট স্টেশনের মাঝে নিজবাড়িতে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে। সকালে শিয়ালদহমুখী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে ধাক্কা মারে একটি মালগাড়ি। এখনও পর্যন্ত ৮ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। নিহত মালগাড়ি্র চালকও। আহত অন্তত ৩০। প্রাথমিক তদন্তের পর রেল বলছে, মালগাড়ির চালক সিগন্যাল ভাঙায় এই বিপত্তি। কিন্তু নিহত চালকের উপর দায় চাপিয়েই কি সমস্ত দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলতে পারে রেল। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, অভিশপ্ত কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে ছিল না কবচ। ছিল না অ্যান্টি কলিশন ডিভাইসও। এনিয়ে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বলে রাখা ভালো, আগামী বছরের মধ্যে দিল্লি-গুয়াহাটি রুটের ৬ হাজার কিলোমিটার রেলপথজুড়ে কবচ বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে ভারতীয় রেলের। তবে এখনও পর্যন্ত হাওড়া-গুয়াহাটি রুটে কবচ ব্যবস্থা চালু করা যায়নি।
কী এই ‘কবচ’?
রেলের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ‘কবচ’ হল মূলত একটি সংঘর্ষবিরোধী প্রযুক্তি। দু’টি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ এর মাধ্যমে এড়ানো যায়। একই লাইনের উপর দু’টি ট্রেনের উপস্থিতি নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকেই বুঝতে পারে ‘কবচ’। সেই অনুযায়ী সে আগেভাগে ট্রেনের চালককে সতর্ক করে দেয়। দুটি ট্রেন একই লাইনে চলে এলে ইঞ্জিনে বসানো একটি যন্ত্রের মাধ্যমে অনবরত সিগন্যাল দিতে থাকে ‘কবচ’ (Kavach)। যা চালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন তিনি। শুধু তাই নয়, চালককে সতর্ক করার পরও তিনি পদক্ষেপ না করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে রেলের গতিবেগ কমিয়ে দেয়। দুটি ট্রেনের ধাক্কা লাগার আগেই ব্রেক কষে থামিয়ে দেয়।
‘কবচে’র ইতিহাস:
২০১২ সালে ইউপিএ জমানা থেকেই ‘কবচ’-এর নির্মাণপ্রক্রিয়া চলছে। ২০১৪ সালে প্রথম এই প্রযুক্তির পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হয়। ‘কবচ’ প্রযুক্তিতে রয়েছে মাইক্রো প্রসেসর, GPS এবং রেডিয়ো যোগাযোগব্যবস্থা-সহ বহু অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। ২০২২ সালের মার্চ মাসে ‘কবচ’-এর চূড়ান্ত ট্রায়াল হয়। খোদ রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব, একটি ট্রেনের লোকোতে বসে পরীক্ষা করেছিলেন। সেই পরীক্ষার সময় দুটি লোকো একই লাইনে পরস্পরের দিকে ছুটে যায়। কিন্তু ধাক্কা লাগার আগেই একটি ইঞ্জিন অপরটির চেয়ে ৩৮০ মিটার দূরত্বে থেমে গিয়েছিল। কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি। তার ভিডিও টুইটারে পোস্ট করেন রেলমন্ত্রী বৈষ্ণব জানিয়েছিলেন, পরীক্ষা ১০০ শতাংশ সফল। আজকের দুর্ঘটনার পর সেই পোস্টই ভাইরাল হয়েছে।