সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নির্বাচনে গোটা ব্রিটেন জুড়ে ঝড় তুলেছে লেবার পার্টি। ঋষি সুনাকের কনজারভেটিভ পার্টিকে ধরাশায়ী করে বিপুল ভোটে জিতেছে কিয়ের স্টার্মারের দল। ১৪ বছরের টোরি শাসনের অবসান ঘটিয়েছে তারা। এখন প্রশ্ন, রাজার দেশের এই পালাবদলে ভারত-ব্রিটেন সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কী? কাটবে কি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির জট?
লেবার পার্টির সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট এটলির নেতৃত্বে লেবার পার্টিই ভারতকে স্বাধীনতা দেয়। সুনাকের জমানাতেও নয়াদিল্লি-লন্ডনের সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসে স্টার্মারও সেই ধারা বজায় রাখতে চান। এর আগে বহুবার তিনি বলেছেন, ক্ষমতায় এলে ভারতের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক আরও মজবুত করবেন তিনি। ইঙ্গিতে, চিনের দাদাগিরির বিরুদ্ধে যে রূখে দাঁড়াবেন স্টার্মার, তা স্পষ্ট করেছেন তিনি। এমনই মত বিশেষজ্ঞদের। ব্রিটেনে বসবাসরত ভারতীয়দের ভোট পেতে নির্বাচনী প্রচারেও তাঁর গলায় শোনা গিয়েছে হিন্দুদের কথা।
[আরও পড়ুন: ১৪ বছরের টোরি শাসনের অবসান, কোন কোন কারণে ধরাশায়ী সুনাক?]
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়ে ভারতের অবস্থান, ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা অজানা নয় স্টার্মারের কাছে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুনাক সব সময় নিজেকে গর্বিত হিন্দু বলেই পরিচিত দিয়েছেন। সেই আবেগ ধরতে চেয়েছেন স্টার্মারও। ব্রিটেনে 'হিন্দু ফোবিয়া'র কড়া নিন্দা শোনা গিয়েছে তাঁর গলায়। নির্বাচনী প্রচারে ভারতের সংস্কৃতি, নানা উৎসব নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। শুধু তাই নয় দীপাবলি, হোলির মতো উৎসবে প্রবাসী ভারতীয়দের সঙ্গে মেতে উঠতে দেখা গিয়েছে ব্রিটেনের নয়া প্রধানমন্ত্রী স্টার্মারকে।
কুটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মজবুত করার ক্ষেত্রে স্টার্মারের বিদেশনীতির প্রধান বিষয় হবে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি। যার জট সুনাকও খুলতে পারেননি। ব্রিটিশ রাজনীতির এই রদবদলে ভারতের নজর রয়েছে কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে লেবার পার্টির অবস্থানের দিকেও। তবে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব মজবুত করার জন্য স্টার্মার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির পথ প্রশস্ত করার উপর জোর দিয়েছেন। এছাড়াও শিক্ষা, প্রযুক্তি, নিরাপত্তা-সহ নানা ক্ষেত্রে দিল্লির সঙ্গে একযোগে কাজ করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন তিনি।
বলে রাখা ভালো, অভিবাসন নীতি, অ্যালকোহল ও মোটরগাড়ি। এই ত্র্যহস্পর্শে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসা ব্রিটেনের সঙ্গে ভারতের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি-র আলোচনা মাঝপথ পেরিয়েও থমকে যায়। গত বছর জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতে এসে সেনিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন সুনাক। যা ফলপ্রসুও হয়েছিল। তার পর এনিয়ে আলোচনা চলছিল দুদেশের মধ্যে। কিন্তু এর মাঝেই ব্রিটেনে সরকার গড়ছে লেবার পার্টি। ফলে কোন খাতে বইবে দিল্লি-লন্ডন সম্পর্ক? এর উত্তর আগামিদিনে মিলবে। স্টার্মারের দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও রিচমন্ড অ্যান্ড নর্থঅ্যালার্টন নিজের আসনে জিতেছেন সুনাক। প্রত্যাশা মতোই ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকার পর অবশেষে হার মেনে নিতে হয়েছে কনজারভেটিভ পার্টিকে।