বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত : ‘কোয়ারান্টাইন আউট। মধুচন্দ্রিমা ইন।’সৌজন্য, কেরল রাজ্য পর্যটন নিগম। করোনা ভাইরাসের চক্করে পরে অনেক কিছুর মতো বিয়ে, জন্মদিন, অন্নপ্রাশণের মতো আনন্দানুষ্ঠানগুলোর বারোটা বেজে গিয়েছে। লকডাউনের বাজারে মাছ, মাংস, মিষ্টির আকাল। দামও আকাশছোঁয়া। তাই মেনুতে কাটছাট। ভিড় কমাতে কাটছাট হয়েছে নিমন্ত্রিতের তালিকাতেও। কপাল বেশি পুরেছে আবার বিয়ে করতে চলা যুবক-যুবতীর। বিয়ে মানে একটা ‘লাইভটাইম ইভেন্ট’। সেই কবে থেকে রেডি করা থাকে ধুমধারাক্কার খুঁটিনাটি প্ল্যান। নহবত, সানাই, মেহেন্দি, লাইভ ডিজে, রাজস্থানী ট্রাইবাল ড্যান্স, হরেক কোর্সের খানাপিনা। এবং মধুচন্দ্রিমা!
পরিচিত মানুষজনের ধরাছোঁয়ার বাইরে নতুন জীবনসঙ্গীর সঙ্গে একান্তযাপন। সারাজীবনের স্মৃতিতে সোনালি ফ্রেমবন্দী ক’টা দিন! করোনা আর লকডাউনের জোড়া ধাক্কায় আজ সব শেষ! বিয়ে মানে এখন ‘নমো নমো’ করে একটা অনুষ্ঠান। তাও মাস্ক-গ্লাভসের ঘেরাটোপে। সামাজিক দূরত্বের বিধিনিষেধে ভিড় কমাতে গিয়ে সেখানে বাদ বহু প্রিয়জন, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী। বাদ যাবতীয় জাকজমক, ভরা বাসরঘরে রাতভোর আড্ডা, ঢালাও খানাপিনার আয়োজনও।
আর মধুচন্দ্রিমা? সে পর্ব পুরোটাই বাদ!কোথাও যাওয়ার উপায় নেই। ট্রেন-বিমান চললেও সংক্রমণের ভয়। সেসব কাটিয়ে গন্তব্যে পৌঁছলেও সেখানে সংক্রমনের ভয়ে অধিকাংশ হোটেল বন্ধ। তাছাড়া ভিনরাজ্য হলে চোদ্দ ও চোদ্দ – মোট আঠাশ দিনের কোয়ারান্টাইনের হ্যাপা। ফলে এই লকডাউনে দু’চারজন বিয়ে করলেও মধুচন্দ্রিমা পর্ব স্থগিত। নবদম্পতির সে দুঃখ মোছাতে হাত বাড়িয়েছে ‘ভগবানের আপন দেশ’ কেরালা।
[আরও পড়ুন: নোংরা সাফ করতে নিজেই ম্যানহোলে নেমে পড়লেন বিজেপি কাউন্সিলর]
আনলকের সুযোগে খুলে দিয়েছে আরব সাগর পাড়ে মধুচন্দ্রিমার দরজা। তবে শর্ত একটাই! নবদম্পতিকে আসতে হবে অন্তত সাত দিনের ট্যুর প্যাকেজে। তাহলেই ছাড় মিলবে বাধ্যতামূলক কোয়ারান্টাইন পর্ব থেকে। শুধু নবদম্পতি নয়। সঙ্গী হতে পারবেন আরও পাঁচজন আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুবান্ধব। তাঁদেরকেও মানতে হবে না কোয়ারান্টাইনের কড়া বিধি। গোটা ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পিনারাই বিজয়ন সরকারের। এটুকু পড়েই ভ্রমণপ্রিয় বাঙালির আহ্লাদে উৎফুল্ল হওয়ার কারণ নেই। কেরালা সরকার ডাক পারলেও কিছু নিয়মকানুনের বেড়াজাল থাকছেই! এটা শুধুই হানিমুনারদের জন্য প্যাকেজ। নবদম্পতি ও তার পাঁচ নিকটজন ছাড়া বাকিরা নট অ্যালাউড। লকডাউন বা আনলক চলাকালীনই যে বিয়েটা মানে ‘চারহাত এক হওয়ার পর্ব সম্পন্ন হয়েছে, তার প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে। এক্ষেত্রে বিয়ের কার্ড জমা দিলেই হবে। সেই সঙ্গে পরিচয়পত্র। এই প্রমাণপত্র দিয়ে কেরল সরকারের পোর্টাল ‘covid19jagratha’–তে আবেদন করে অনুমতিপত্র নিতে হবে। জানাতে হবে কেন আপনি কেরলে আসতে চাইছেন। সব ঠিকঠাক থাকলে তবেই এ যাত্রায় নবদম্পতিকে প্রবেশের মধুচন্দ্রিমার অনুমতি দেবে ‘ইশ্বরের আপন দেশ’।
বৃহস্পতিবারই কেরল সরকারের মুখ্যসচিব বিশ্বাস মেহতা একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে নবদম্পতিদের জন্য এই দরজা খুলে দিয়েছেন। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, কেরালার অধিবাসীরা নন। এই প্যাকেজের সুবিধা পাবেন শুধু অন্য রাজ্যের বাসিন্দারাই। মুখ্যসচিবের কথায়, যাঁরা আসবেন, তাঁদের সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে চলতে হবে। এছাড়াও এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় গেলে স্থানীয় পুলিশ– প্রশাসনকে আগে থেকে জানিয়ে রাখতে হবে। স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি মিললে তবেই সেখানে পা রাখতে পারবেন নবদম্পতি ও সঙ্গীরা।
[আরও পড়ুন: তুমুল বৃষ্টির সঙ্গে আকাশ থেকে নামল মৃত্যু, বজ্রপাতে বিহারে মৃত অন্তত ৮৩]
The post এই শর্ত মানলেই ‘ঈশ্বরের আপন দেশে’ হানিমুনে যেতে পারবেন নবদম্পতিরা appeared first on Sangbad Pratidin.