অর্ণব দাস, বারাকপুর: খড়দহে (Khardah) এক পরিবারের চারজনের মৃত্যুর ঘটনার পরতে পরতে রহস্য। ঘর থেকে চার-চারটি মৃতদেহ উদ্ধারের পাশাপাশি একটি সুইসাইড নোটও (Suicide Note) মিলেছে। তা দেখে তদন্তকারীরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেয়েছেন, এর নেপথ্যে স্ত্রীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে। আর সেই রাগে স্ত্রী, দুই সন্তানকে বিষ খাইয়ে খুনের পর গৃহকর্তা আত্মঘাতী হয়েছেন বলে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান। তবে ওই সুইসাইড নোট গৃহকর্তা বৃন্দাবন কর্মকারেরই হাতের লেখা কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এমএস মুখার্জি রোডের করবী আবাসনে উদ্ধার হয়েছে বছর বাহান্নর বৃন্দাবন কর্মকার, স্ত্রী দেবশ্রী কর্মকার, মেয়ে দেবলীনা কর্মকার এবং ছেলে উৎসাহ কর্মকারের দেহ। দেবলীনা ও উৎসব – দুজনেই কিশোর বয়সের। দেবলীনার বয়স ১৭ বছর, উৎসব ৮ বছরে পা রেখেছে। ঘরের ভিতরে তিন জায়গায় তিনজনের দেহ এবং সিলিং ফ্যানে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয়ছে বৃন্দাবনবাবুর দেহ। ঘর থেকে একটি সুইসাইড নোটও উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, তাতে বৃন্দাবনের বয়ান ছিল, স্ত্রীর বিবাহ বহির্ভূত (Extra Marrital Affair) সম্পর্ক রয়েছে। তা তিনি মেনে নিতে পারেননি। সেই কারণে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে খুন করে আত্মহত্যা করেছেন বলেই প্রাথমিক অনুমান তদন্তকারীদের।
[আরও পড়ুন: ফাইনালে হামাস-ইজরায়েল দ্বন্দ্বের ছায়া, মাঠে ঢুকে বিরাটকে জড়িয়ে ধরলেন প্যালেস্তিনীয় সমর্থক]
সুইসাইড নোট থেকে জানা যাচ্ছে, বারাকপুরের (Barrackpore) চিড়িয়ামোড়ে বৃন্দাবনের কাপড়ের দোকান রয়েছে। ব্যবসা এবং সম্পত্তির সবটা দুস্থ কোনও প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে দেওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। ঘটনার গুরুত্ব বুঝে ঘটনাস্থলে পৌঁছন বারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (সেন্ট্রাল) আশিস মৌর্য। সরেজমিনে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে বলেন, “ফ্ল্যাটের দরজা ভিতর থেকে লক করা ছিল। পুলিশ দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে পরিবারের চারজনের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। তাই বাইরে থেকে কারও ভিতরে প্রবেশ বা বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়েছে। সেটা যাচাই করা হচ্ছে। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের খবর দেওয়া হয়েছে। আত্মীয় এবং পরিচিতদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে।”
প্রতিবেশী ধীমান বিশ্বাস বলেন, “পরিবারের সকলেই খুব ভালো ছিলেন। কখনও তাদের ঝগড়া শুনিনি। বৃন্দাবন চাপা স্বভাবের হলেও পরিবারের বাকিরা খুবই মিশুকে ছিল।” শেষ দুদিন পরিবারের কাউকে বাইরে যেতে অথবা বাইরে থেকে কাউকে ওই ফ্ল্যাটে ঢুকতে দেখা যায়নি। এর পর রবিবার সকালে ওই ফ্ল্যাট থেকে দুর্গন্ধ পান স্থানীয়রা। পরে পাম্প চালানোর জন্য একজন কর্মী একাধিকবার তাঁদের ফ্ল্যাটে গিয়ে কলিং বেল বাজান। কিন্তু কোনও সাড়া না পেয়ে শেষে স্থানীয়রা মই বেয়ে রাস্তার পাশের দোতলার জানালা দিয়ে উঁকিঝুঁকি দেন। তীব্র পচা দুর্গন্ধ পান। এর পর থানা, পুলিশ এবং রহস্যের কিছুটা উদঘাটন।
[আরও পড়ুন: শিয়রে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন, শহর থেকে প্যান্ডেলের বাঁশ খোলার ডেডলাইন দিল পুরসভা]
পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, স্ত্রী এবং দুই সন্তানকে প্রথমে বিষ (Poison) জাতীয় কিছু খাইয়েছিল বৃন্দাবন। পরে তাঁদের তিনজনকেই ধারালো কিছু দিয়ে কুপিয়ে খুন করে বৃন্দাবন সিলিং ফ্যানের সঙ্গে কাপড়ের ফাঁসে লাগিয়ে নিজেকে শেষ করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। সুইসাইড নোটের লেখাটি বৃন্দাবনেরই কি না, তা খতিয়ে দেখার পাশাপাশি বয়ান যাচাই করা হচ্ছে। মর্মান্তিক এই ঘটনার পিছনে স্ত্রীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক না কি অন্য কোনও কারণ রয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।