বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি : উত্তরের আকাশে রাফালে যুদ্ধ বিমানের মহড়া! ঝকঝকে নীল আকাশের বুক চিড়ে মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে ছুটে যায় একের পর এক রাফালে। যা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। অনেক উঁচুতে বেশ কিছুক্ষণ ওই মহড়া চলে। আকাশে সাদা ধোঁয়ার রেখা দেখে অনেকেই প্রথমে রকেট যাচ্ছে ভেবে ভুল করেছিলেন! পরে দেখা যায় একটি চলে যেতে আরও একটি উল্টো দিক থেকে ধেয়ে আসছে। কখনও খুব কাছাকাছি পাশাপাশি, আবার কোথাও একে অন্যকে অক্রমণের মুডে উড়েছে। আকাশ জুড়ে সাদা ধোঁয়ার আলপনা!
জানা গিয়েছে, এটি সম্পূর্ণ ছিল ভারতীয় বায়ুসেনার রুটিন সামরিক মহড়া। যাতে অংশ নেয় দুটি রাফাল যুদ্ধবিমান। বায়ুসেনার রাফালে যুদ্ধবিমানের দুটি স্কোয়াড্রন রয়েছে। একটি পাঞ্জাবের আম্বালায়, অন্যটি পশ্চিমবঙ্গের হাসিমারায়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের একটি সূত্র জানিয়েছে, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এই যুদ্ধবিমানগুলির মাধ্যমে জটিল অভিযান যেমন স্থলভাগে আক্রমণ এবং ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার ড্রিল সম্ভব। সমতল ও পাহাড় উভয় এলাকায় আক্রমণের মিশন মাথা রেখে বায়ুসেনা এই মহড়ার ব্যবস্থা করেছে। কেন এমন মহড়া?
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, এমনিতেই কড়া নিরাপত্তার বলয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে 'চিনেকস নেক' অর্থাৎ শিলিগুড়ি করিডর। বিহার, পশ্চিমবঙ্গ এবং অসম-- তিনদিন থেকে ঘিরে ফেলা হয়েছে ওই স্পর্শকাতর এলাকা। গড়ে তোলা হয়েছে সামরিক ঘাঁটি। সামরিক বাহিনীর তিনটি ছাউনিতে প্যারা স্পেশাল ফোর্স, গোয়েন্দা ইউনিট ও আরডিএফ বাহিনী মোতায়েন করছে সেনা। রাখা হয়েছে রাফালে যুদ্ধবিমান, ব্রাহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র এবং উন্নত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। প্রায় ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই করিডর জুড়েছে উত্তর-পূর্বের সাতটি রাজ্যেকে দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে জুড়েছে। এই করিডরেই নজর চিনের। সম্প্রতি 'চিকেনস নেক' নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান।
আকাশের বুক চিড়ে কয়েক মিনিটের ব্যবধানে ছুটে যায় একের পর এক রাফাল।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, এরপরই শিলিগুড়ি করিডোর শক্তিশালী করতে তিনটি সামরিক ঘাঁটি তৈরি করে ভারত। বিহারের কিষানগঞ্জ, পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া এবং অসমের ধুবড়িতে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর ওই ঘাঁটিগুলো স্থাপন করা হয়েছে। এক একটি ঘাঁটিতে অন্তত আটশো জওয়ান রয়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্রের খবর। 'চিকেন'স নেক' থেকে ধুবড়ির দূরত্ব প্রায় ২৪০ কিলোমিটার, চোপড়া থেকে ৫২ কিলোমিটার এবং কিষাণগঞ্জ থেকে প্রায় ১৮০ কিলোমিটার। চোপড়া সামরিক ঘাঁটি বাংলাদেশ সীমন্ত থেকে এক এক কিলোমিটারেরও কম দূরে অবস্থিত। ফলে এখান থেকে প্রতিবেশী দেশটির উপরে নজরদারি সহজ। এই অবস্থায় ভারতীয় বায়ুসেনার এই মহড়া খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
