সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আমি আপনাদের জামাইবাবু, নমস্কার…
ব্যারিটোন ভয়েসে এ কথা ভেসে আসা মাত্র উচ্ছ্বাসে ভাসল ভরা নেতাজি ইন্ডোর। সকলেই জানেন, চলচ্চিত্র উৎসবে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু যদি হন শাহরুখ-কাজলরা, তবে মনযোগের কেন্দ্রবিন্দু তিনিই। অমিতাভ বচ্চন। গত তিনবছর ধরে এ নিয়মের ব্যতিক্রম নেই। চতুর্থবারেও হল না।
সেই প্রথমবার স্মৃতির ধুলো সরিয়ে হীরালাল সেনকে বাঙালির সামনে তুলে ধরেছিলেন। বিস্মৃতি পেরিয়ে বাঙালি সিনেপ্রেমীরা ফিরে তাকিয়েছিল আপন ঐশ্বর্যের দিকে। সেই শুরু। তারপর থেকে অমিতাভ বচ্চন ডায়াসে ওঠা মানেই সিনেপ্রেমীদের অখণ্ড মনযোগ। অ্যাংরি ইয়ং ম্যানের ইমেজ ছেড়ে ততদিনে বিগ বি বাঙালির কাছে হয়ে উঠেছেন ভারতীয় সিনেমার চলমান এনসাইক্লোপেডিয়া।
[ বাংলার আঙিনায় বিশ্ব-সিনেমার উৎসবের সূচনায় শাহরুখ-অমিতাভরা ]
গতবারই বলেছিলেন, তাঁর ‘টপিক’ ফুরিয়ে গিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরেরবার যেন আর তাঁকে না ডাকেন। কিন্তু তা কী করে হয়! ভাগ্যিস মুখ্যমন্ত্রী বিগ বি-র সেই আবেদন শোনেননি। আর তাই চতুর্থবার বলতে উঠে ভারতীয় সিনেমায় সংগীত নিয়ে তাঁর গবেষণার সন্ধান পেলেন দর্শকরা। উঠে এল বাংলার অবদানের কথা। এ বাংলা সুরের, সংগীতের। বাংলার হাওয়ায় মিশে আছে কীর্তন-বাউল থেকে ভাটিয়ালির সুর। বলছেন অমিতাভ। নেতাজি ইন্ডোরে তখন পিনড্রপ সাইলেন্স। তথ্যের হাত ধরে সিনেমায় সংগীতের মূর্ছনা তখন একটু একটু করে যেন আলাপ থেকে গতের দিকে পৌঁছাচ্ছে। অমিতাভ বললেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা। কীভাবে অনিল বিশ্বাসের হাত ধরে তাঁর সংগীত ছড়িয়ে পড়েছে হিন্দি সিনেমার দুনিয়ায়, সেই কথা। আসলে ভারতীয় সিনেমায় প্লে-ব্যাক সংগীতের যে বিপ্লব তা তো সম্ভব হয়েছিল বাঙালির হাত ধরেই। সেই ১৯৩৫ সালে নীতিন বোস তাঁর ‘ভাগ্যচক্র’ ছবিতে ব্যবহার করেছিলেন প্রি-রেকর্ডেড গান। যা সিনেমায় সংগীতের ব্যবহারের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। শিল্পীদের দিয়েছিল মুক্তি। পরে হিন্দিতে ‘ধূপছাঁও’ নামে হয় এ ছবি। সেই শুরু। তারপর থেকে সিনেমা ও সংগীতের যুগলবন্দি এক নয়া দিশা পেল।
[ ‘পদ্মাবতী’ মুক্তি স্থগিত রাখার আবেদন খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট ]
এরপর এক এক করে উদাহরণ দিয়ে বিগ বি দেখালেন, রবীন্দ্রনাথের সংগীত কীভাবে ভারতীয় সিনেমাকে প্রভাবিত করেছে। আসলে উদাহরণ তো কম নয়। শুধু সময়ের ধুলো জমেছিল সে সবের উপর। একজন যথার্থ সংগীতপ্রেমীর মতোই রেকর্ডের ধুলো মুছে স্মৃতির গ্রামফোনের পিনটি যেন বসিয়ে দিলেন বিগ বি। বেজে উঠল বাংলার অবদান। ভারতীয় সিনেমার সংগীতে বাংলার স্রষ্টাদের অনন্য সৃষ্টিগুলি। কে নেই সেখানে! শচীন দেব বর্মণ যদি বাংলার নিজস্ব সুরকে ওয়েস্টার্ন ক্লাসিক্যালের সঙ্গে মিশিয়ে প্রতিষ্ঠা দেন, তবে পুত্র পঞ্চম সন্দেহাতীতভাবে রকস্টার। সিনে-সংগীতে মাদলের ব্যবহার আর কে করতে পারেন! এদিকে আছেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায় বা দেশের হেমন্ত কুমার। তাঁর সুরের মুক্তি থেকে সলিল চৌধুরীর সুরের ঝর্ণা, ভারতীয় সিনেমার অবগাহনের ঋণ তো কম নয়। বিগ বি আজ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের আঙিনায় তুলে ধরলেন সে খতিয়ান। এ যেন এক অন্য পথের পাঁচালি। সিনেমা যেখানে হাত ধরে সংগীতের। আর সেখানেও ভগীরথের দায়িত্বে বাঙালিরাই।
প্রজন্মের পর প্রজন্ম স্রষ্টাদের উল্লেখ পেরিয়ে বিগ বি পৌঁছালেন সংগীতের গভীর গহন উদ্দেশ্যে। সে লক্ষ্য একতার। ধর্ম-ভাষা-বর্ণের ভেদ ভুলিয়ে, দেশের সংস্কৃতি মধ্যে যে ইনক্লুসিভনেস, সংগীতরা সুরে সেই সংহতির পরিচয় দিয়েছেন। এই একতাই দেশের সম্পদ। বাঙালি স্রষ্টারা বারবার নিজেদের কাজে তাই তুলে ধরেছেন। আজ তরুণ বাঙালিদের যেন সেই পথের পাঁচালিরই খেই ধরিয়ে দিলেন বিগ বি।
আর এ বক্তব্য শেষে যখন হাততালির ঝড়, তখন কে না জানে পঞ্চমবারের আমন্ত্রণ তাতেই রাখা থাকল। সে কথা বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সোল্লাসে সিনেমোদি জনতা জানান দিল, কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে যাই হোক না কেন, যেই আসুন না কেন, উদ্বোধনে অমিতাভ ছাড়া তার নান্দীমুখ কিছুতেই সম্ভব নয়।
The post চতুর্থবার চলচ্চিত্র উৎসবে এসে কী বললেন অমিতাভ বচ্চন? appeared first on Sangbad Pratidin.